রাজশাহীতে শ্রেষ্ঠ ওসির বিরুদ্ধে স্বর্ণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ

সময়: 6:59 pm - October 5, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 165 বার

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সম্প্রতি শ্রেষ্ঠ ওসি হন বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ৪টি স্বর্ণের বার আটকের পর দুটি আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ওসি এবং তার সামারি টিমের প্রধান এসআই মতিনের বিরুদ্ধে। স্বর্ণ গোপন নিয়ে গত তিন দিন ধরে পুলিশের ভেতরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত ১ অক্টোবর কাতার প্রবাসী শ্রমিক আজিজুল ও ফারুক দুটি করে স্বর্ণের বার নিয়ে দেশের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফিরছিলেন। ওই দিন তাদের রাজশাহী বর্ণালীর মোড়ে বাস থেকে টেনেহিঁচড়ে নামান মতিন। ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় দুটি স্বর্ণের বারসহ আজিজুল ও ফারুককে গ্রেফতার করে আদালতে চালান করে পুলিশ।

ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, ওসি ও এসআই যোগসাজশে দুটি স্বর্ণের বার লুকিয়ে রেখেছেন। মামলায় না দেয়া দুটি স্বর্ণের বার ফেরতের জন্য তাদের কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকাও নিয়েছেন মতিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ফেরত দেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই শ্রমিকের বাড়ি এবং এসআই’র গ্রামের বাড়ি একই জায়গায় এবং তারা পরস্পর প্রতিবেশী। দুই প্রবাসী শ্রমিকের দেশে ফেরার আগাম খবর পেয়ে তাদের বাস থেকে নামান মতিন। স্বর্ণ ও বিদেশ থেকে আনা মূল্যবান সামগ্রীও কেড়ে নিতেই পরিকল্পিতভাবে আজিজুল ও ফারুককে আটক করেন তিনি। প্রেক্ষিতে ৪টি স্বর্ণের বার পেয়ে দুটি গোপন করে দেন।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আটক করে দুই প্রবাসী শ্রমিকের পরিবারের কাছে ফোন করেন এসআই। ফলে তাদের স্ত্রীসহ আত্মীয় স্বজন ও এলাকার কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি ওই রাতেই তার কাছে বোয়ালিয়া থানায় যান। ৪টি স্বর্ণের বার ও লাগেজসহ দুইজনকে ছেড়ে দিতে তাকে অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু মতিন ওদের বলেন- ছাড়া যাবে না। আর ছাড়তে গেলে মোটা অংকের টাকা লাগবে। বিদেশে কাজ করে অনেক কামিয়েছে ওরা।

দুই শ্রমিকের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তারা দেশে ফেরার আগের দিন কাতারের সুকসাউদ গোল্ড মার্কেটের গালফ জুয়েলারি থেকে ৪টি চালানের মাধ্যমে ৪টি স্বর্ণের বার কেনেন। প্রতিটি ১০ তোলা ওজনের ২৪ ক্যারেট মানের স্বর্ণের বার ২৬ হাজার ৫০০ কাতারি রিয়ালে ক্রয় করেন তারা। ফারুকের নামের দুটি সেলস ইনভয়েস নম্বর হলো ১৮২১৪৩ ও ১৮২১৪৩। আর আজিজুলের নামের সেলস ইনভয়েসের নম্বর যথাক্রমে ১৮২১৭০ ও ১৮২১৭১।

আটকের দিন রাতে আজিজুল বোয়ালিয়া থানায় থাকা অবস্থায় বলেন, আমরা দুটি করে স্বর্ণের বার কিনেছিলাম এ ভেবে দেশে ফিরে বিক্রি করলে কিছু বেশি টাকা পাওয়া যাবে। কাতারে চাকরি চলে যাওয়ায় আর সেখানে ফেরা হবে না। এ টাকা দিয়ে দেশে ছোটখাটো কিছু ব্যবসা করে পরিবার চালাব। স্বর্ণ আনলে বিমানবন্দরে জানাতে হয় এটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে তা আনিনি।

আজিজুলের স্ত্রীসহ এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জানান, আটকের পর দিন এসআই তাদের প্রস্তাব দেন- দুটি স্বর্ণের বার দিয়ে মামলা দেয়া হবে। আর ৫ লাখ টাকা দিলে দুটি স্বর্ণের বার ফেরত দেয়া হবে। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, আজিজুল ও ফারুকের স্বজনরা ২ অক্টোবর দুপুরে থানার দোতলায় মতিনের চেম্বারে গিয়ে নগদ ৫ লাখ টাকা দেন। সন্ধ্যার পর মাল ফেরত দেয়ার কথা বলে অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগে আজিজুল ও ফারুককে আদালতে পাঠান তিনি। এরপর মতিন মোবাইল ফোন বন্ধ করে থানা থেকে চলে যান।

৩ অক্টোবর এলাকার লোকজনসহ শরিফা আবারও মতিনের কাছে এসে অন্তত দুটি স্বর্ণ ফেরত দেয়ার জন্য হাতে পায়ে ধরেন। কিন্তু তিনি না করে দেন। ঘুষ হিসেবে নেয়া টাকা ফেরত চাইলে অভিযোগকারীদের ইয়াবা দিয়ে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার ভয় দেখান।

গ্রেফতারকৃত আজিজুলের স্ত্রী বলেন, আমি ও আমার পরিবার ন্যায়বিচারের আশায় পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ করতে চাই। ফলে ৩ অক্টোবর এসআই আমাকে ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, অভিযোগ করলে রিমান্ডে এনে আমার স্বামীকে একবারেই খালাস করে দেবেন। স্বামীকে বাঁচাতে চাইলে মুখ বন্ধ রাখ।

অভিযোগকারী, পুলিশসহ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর কাতারের দোহায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শেষে গত ১ অক্টোবর ইউএস বাংলার বিএস-৩৩৪ নম্বর ফ্লাইটে সকাল ৮টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন আজিজুল (৪০) ও ফারুক। তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা। ওই দিন চাঁপাইগামী বাসে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন দুজন।

এ ঘটনায় এসআই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তিনি দাবি করেন, আজিজুল ও ফারুকের দেহ তল্লাশি করে দুটি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। যার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে স্বর্ণ আনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

স্বর্ণের দুটি বার গায়েব বিষয়ে মতিন বলেন, আসামিরা বিদেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান করে এনেছে। এ অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করে মামলা করা হয়েছে। দুটি স্বর্ণের বার ফেরতের জন্য আমার ৫ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা। অন্য অভিযোগগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ বলেন, দুজনের কাছে দুটি স্বর্ণের বার পাওয়া যায়। দুটি দিয়েই মামলা দেয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু ঘটেনি।

রাজশাহী বার্তা/Durul Haque

এই বিভাগের আরও খবর