অপহরণের পর চাঁদা দাবি, বিকাশ এজেন্ট সেজে পুলিশের উদ্ধার
শাহাদাত মোল্লা (৪০) নামে এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে অপহণের পর অভিযোগের ২ ঘণ্টার মাথায় উদ্ধার করেছে পাবনার পুলিশ। এ ঘটনায় মূল হোতা মিরাজুল ইসলাম শেখ (২৮) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।
আটক মিরাজুল শেখ পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ শেখের ছেলে ও গয়েশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মুতাইয়ের নাতি।
অপহৃত ব্যবসায়ী পাবনার আটঘরিয়া থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত দিরাজ মোল্লার ছেলে। তিনি পাবনার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে আবার খুচরা বিক্রি করতেন।
পাবনার পুলিশ সুপারের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানা যায়, বুধবার (১৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে এক বয়স্ক নারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে কান্নাকাটি শুরু করে। এ সময় ওই নারী পুলিশ সুপারকে সব ঘটনা খুলে বলেন। পুলিশ সুপার বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.মাসুদ আলমকে নির্দেশ দেন। এসপির নির্দেশ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, ডিবির এসআই আবু আব্দুল্লাহ জাহিদকে ডেকে নেন এবং দ্রুত ডিবি টিম রেডি করে ফোর্স পাঠিয়ে দেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকালে বাড়ি থেকে ৫২ হাজার টাকা নিয়ে হাজিরহাট যাওয়ার জন্য বের হন শাহাদাত মোল্লা। পথে অপহরণের শিকার হন। অপহরণকারীরা তার বাড়িতে ফোন করে আরও ১ লাখ টাকা দাবি করেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী পাবনার এসপির শরণাপন্ন হন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, বিকাশের দোকানদার সেজে অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা হয় আমাদের। তারা একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে বলে, এক লাখ টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে। সহজ-সরল নারী বার বার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছে, ওরা টাকা না দিলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলবে, স্যার দয়া করে উদ্ধার করে দেন।
তিনি আরও বলেন, এসপি স্যারের মূল নির্দেশ ছিল যে কোনোভাবে ভিকটিমকে অক্ষত উদ্ধার করতে হবে। তারপর গাড়ির পরিবর্তে মোটরসাইকেলে অভিযানে যায়। অপহরণকারীরা আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভিকটিম শাহাদাত মোল্লাকে ফেলে পালিয়ে যায়।
অপহৃত ব্যবসায়ীর স্ত্রী আলেয়া বেগম পাবনার এসপিকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, পুলিশ সুপার স্যার না হলে আমার স্বামীকে পেতাম না। স্বামীকে তারা মেরে ফেলত। স্যারের এই উপকারের কৃতজ্ঞতা আজীবন মনে রাখব।
তিনি আরও বলেন, স্বামীকে অপহরণের সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ দেই। উনি আমাকে সাহস যুগিয়েছেন, আপনার স্বামীকে অচিরেই উদ্ধার করা হবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে আমাকে শান্ত্বনা দেন।
পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল হোতাকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, অপহরণকারীরা দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাজ করে আসছে। এই চক্রটির টার্গেট হলো ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে নারী দিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে চাঁদাবাজি করা। এই চক্রের সবাইকে ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।
রাজশাহী বার্তা/admin