মদিনার যেসব স্মৃতিবিজড়িত স্থানে নির্মিত ‘মসজিদে গামামাহ’
মদিনার মসজিদগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। প্রতিটি মসজিদই ছিল প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদচারণা। মসজিদে গামামাহ’র স্থান ছিল প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত।
মসজিদে গামামাহ নির্মাণ ও সংস্কার
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে মসজিদে গামামাহ’র পাশে কোনো মসজিদ ছিল না। ৯১ হিজরির দিকে খলিফা ওয়ালিদ বিন মালেক এখানে মসজিদ তৈরি করেন।
৭৪৮ হিজরি থেকে ৭৫২ হিজরি পর্যন্ত দ্বিতীয়বার হুসাইন বিন কালাউন মসজিদে গামামার সংস্কারকাজ করেন।
অতপর ৮৬১ হিজরি আল আশরাফির যুগে পুনরায় এ মসজিদের মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়। ওসমানি খেলাফতের সময় ‘মাজলুম’ খলিফা সুলতান আব্দুল হামিদ এ মসজিদের সংস্কার করেন।
এরপর ১৮৬৯ সালে সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানি এই মসজিদ সংস্কার করেন। বর্তমানে যে দালান আমরা দেখতে পাই, তা সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানির যুগে নির্মিত।
সর্বশেষ নির্মাণ
সৌদি সরকার ওসমানি ইমারত বহাল রেখে সে মোতাবেক মসজিদের সংস্কার করেন। তাতে ব্যয় হয় ২ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল। বর্তমানে মসজিদটি মদিনা আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এবং মদিনার মসজিদে নববির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
আরবি ‘গামামাহ’ শব্দ। যার অর্থ মেঘমালা। মদিনা একবার অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল না। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মসজিদের স্থানে খোলা চত্বরে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করেন। নামাজের পরপরই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। মসজিদ নির্মাণের পর তাই এ মসজিদকে মসজিদে গামামাহ বলা হয়। এটিকে মসজিদে মুসাল্লাহও বলা হয়।
বর্তমানে মসজিদে গামামাহ মসজিদে নববরি সঙ্গে মিশে গেছে। কারণ মসজিদে নববির ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে এটি মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মসজিদে নববির ৬ নম্বর গেট দিয়ে বের হলেই মসজিদে গামামাহ সামনে পড়ে।বর্তমান ভবনটি ১৮৬৯ সালে তুর্কি শাসকরা মসজিদে গামামাহ’র এ ভবনটি নির্মাণ করেন, যা এখনও বিদ্যমান।
মসজিদে গামামাহ’র স্থানের স্মৃতি
মসজিদে গামামাহ’র স্থানে মদিনার প্রথম ঈদের জামাআত অনুষ্ঠিত হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের শেষ দিকে মসজিদে গামামাহ’র স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার এ মসজিদের খোলা চত্বরেই বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করেন। নামাজের পরপরই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
মসজিদে গামামাহ আরও একটি ঐতিহাসিক স্মৃতির সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ মসজিদ প্রাঙ্গণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাদশাহ নাজ্জাশির জানাজা নামাজ পড়েন। বাদশাহ নাজ্জাশি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে চিঠির মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত পেয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম ছেড়ে পবিত্র ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
মসজিদে অবকাঠামো
মদিনার এ ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত এক গম্বুজজুড়ে ছাদবিশিষ্ট মসজিদে গামামাহ পূর্ব ও পশ্চিমে লম্বা। তবে মসজিদের ছাদের উত্তর দিকে ছোট ছোট ৫টি গম্বুজ ও দুটি লোহার গম্বুজের প্রবেশ দরজা রয়েছে।
৭৬৩.৭ বর্গমিটার আয়তনের মসজিদটি লম্বায় সাড়ে ৩২ মিটার আর চওড়ায় সাড়ে ২৩ মিটার। মসজিদের উচ্চতা ১২ মিটার। মসজিদের প্রাচীর ১.৫ (দেড়) মিটার পুরো। মসজিদের ভেতরে পূর্ব দিকে পাথর দিয়ে সাজানোর ছোট্ট একটি মিনার এটিকে আরও সৌন্দর্য করে তুলেছে।
ইসলামের প্রাথমিক যুগের এসব মসজিদ এখনও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতি ধারণ করে আছে। মসজিদে নববির আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদে গামামাহ অনেকটাই কোলাহলমুক্ত।
এছাড়া মসজিদে গামামাহ’র খুব কাছে মাত্র ৪০ গজের মধ্যে আরও তিনটি ছোট মসজিদ আছে। সেগুলো হলো মসজিদে আবু বকর, মসজিদে ওমর ও মসজিদে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুম।
ইসলামের প্রাথমিক যুগের এসব মসজিদ এখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতি ধারণ করে আছে। মসজিদে নববির আয়তন বিশালতা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের কারণে এর বাইরের এসব মসজিদে এখন বেশি মানুষকে নামাজ আদায় করতে দেখা যায় না।
রাজশাহী বার্তা/admin