ঈশ্বরদীতে দেবর-ভাবির পরকীয়া, পরিকল্পনা করে বড় ভাইকে হত্যা

সময়: 2:54 pm - June 2, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 406 বার

পাবনার ঈশ্বরদীর বহুল আলোচিত কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ ওরফে ভোলা (৩৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ছোট ভাইয়ের সাথে স্ত্রীর পরকীয়া এবং এককভাবে সম্পত্তি ভোগের লালসায় কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

শাকিল হত্যায় জড়িত স্ত্রী মিম খাতুন (২০) এবং আপন ছোট ভাই সাব্বিরকে (২২) সন্দেহজনকভাবে ঘটনার রাতেই আটক করে পুলিশ। ইতোমধ্যে স্ত্রী মিম ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই হত্যার রহস্য নিয়ে প্রথমে পুলিশ কোনো কূলই খুঁজে পাচ্ছিল না। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির, থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ এবং ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলামসহ পুলিশের একটি চৌকশ টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদে নিহত শাকিলের স্ত্রী ও ভাই হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষযটি স্বীকার করেছে।

পুলিশ সুপার জানান, বিয়ের পর থেকে শাকিলের স্ত্রী মিমের সাথে ছোট ভাই সাব্বিরের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এছাড়াও শাকিলের সাথে বাবা-মা ও একমাত্র ছোট ভাইয়ের জমিজমা ও পুকুরে মাছ চাষের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ ছিলো। স্ত্রী মিম ও সাব্বিরের পরকীয়ার বিষয়টিও শাকিল আঁচ করতে পারে। যে কারণে একই বাড়িতে অবস্থান করে আলাদাভাবে সংসার শুরু করে এবং বিষযটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে শাকিল গত ১৯ মে স্ত্রীকে নিয়ে শহরের রূপনগর কলেজ পাড়া মহল্লায় জনৈক আহসান হাবীবের বাড়ির ২য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে ওঠে।

কিন্তু সাব্বির গোপনে একটি মোবাইল ফোন মিমকে দেয়, যা মিম লুকিয়ে রেখে শুধু সাব্বিরের সাথে গোপনে কথা বলতো এবং বাড়ি ফাঁকা পেলে ঘনিষ্টভাবে মিশতো। এক পর্যাযে ভাবি ও দেবর শাকিলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী স্ত্রী মিম ২৭ মে রাতে পানির সাথে তিনটি ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া করে মিশিয়ে দেয়। ওষুধের প্রভাবে ২৮ মে শাকিল সারাদিন শুধু ঘুমাতে থাকে। সন্ধ্যার পরে সাব্বির গোপনে শাকিলের বাসায় যায়। শাকিল তখনো ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমাচ্ছিলেন। সাব্বির এবং মিম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সোফাসেটের কুশন বালিশ দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ করে শাকিলকে হত্যা করে। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর ফলে শাকিল তেমনভাবে প্রতিরোধও করতে পারেনি।

পুলিশ আরো জানায়, আসামি মিম ও সাব্বির শাকিলকে হত্যার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল। এ লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাব্বির ওড়না দিয়ে মিমের দুই পা, শাকিলের পাঞ্চাবি দিয়ে মিমের দুই হাত এবং মিমের পরিহিত ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে বাহিরের দরজার নিকট রেখে ঘরের দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে চলে যায়। এ সময় সাব্বির মিমের সাথে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঈশ্বরদী বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ও মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিরাজপুরের দুবলিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে শাকিলের লাশ ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর