নাটোরের মেধাবী টুম্পা এখন হোটেলের কর্মচারী

সময়: 2:16 pm - March 11, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 296 বার

নাটোরের বড়াইগ্রামের দোগাছি গ্রামের দীনহীন পরিবারে জন্ম নেয়া মেধাবী কলেজছাত্রী টুম্পা খাতুনের (১৮) দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে বিসিএস ক্যাডার হবে।

 

কিন্তু এসএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া টুম্পার সে স্বপ্ন ম্লান করে দিয়েছে একমাত্র উপার্জনক্ষম ভ্যানচালক বাবাসহ পরিবারের চার সদস্যের অসুস্থতা।

 

বর্তমানে অর্থাভাবে লেখাপড়া বন্ধ তো হয়েছেই, উল্টো পরিবারের ৬ সদস্যের আহার ও অসুস্থদের চিকিৎসা খরচ যোগাতে বাধ্য হয়ে নারীর জন্য ব্যতিক্রমী পেশা হোটেল বয়ের কাজ বেছে নিতে হয়েছে তাকে।

 

মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তরুণী টুম্পা বোরখার উপরে শরীরে অ্যাপ্রোণ জড়িয়ে কয়েন বাজারের মহসিন আলমের মালিকানাধীন মাসুম বিল্লাহ হোটেলে কর্মচারীর কাজ করছে। ক্রেতারা আসলে তাদের রুটি, পরোটা, ভাত-তরকারি খেতে দিচ্ছে। তিনবেলা খাবার আর মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা কাজ করছে সে।

 

জানা গেছে, ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় টুম্পা পাঁচবাড়িয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫সহ স্কলারশিপ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে সে ধানাইদহ খলিশাডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনে হোটেল কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তার লেখাপড়া বন্ধের পথে।

 

সে জানায়, সংসারে আয়ের একমাত্র অবলম্বন তার পিতা আব্দুর রাহিম কয়েক বছর যাবৎ জটিল রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া তার দাদী জমেলা বেগম (৭২), মা তহমিনা খাতুন এবং চার মাস বয়সের একমাত্র ছোট ভাইটিও অসুস্থ।

 

তার ওপর কিস্তি পরিশোধের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো চেপে বসেছে সুদি মহাজনরা। তাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে পরিস্থিতি সামাল দিতে লেখাপড়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে সে এখন হোটেল বয়ের কাজ করছে।

 

সচরাচর এ পেশায় মেয়েরা না আসলেও বাঁচার তাগিদে বাধ্য হয়েই এ কাজ করছে বলে জানায় টুম্পা। তবে সুযোগ পেলে লেখাপড়াটাকে আঁকড়ে ধরেই বড় হতে চায় সে। কিন্তু সে স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কিনা তা জানা নেই তার।

 

মেধাবী টুম্পা অশ্রু ছলছল চোখে জানায়, ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে এতদূর এসেছি। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শিখে বিসিএস ক্যাডার হব। কিন্তু বাবা-মাসহ স্বজনদের আহার আর চিকিৎসার খরচ জোটাতে আয়ের পথ খুঁজতে হয়েছে। তাই বেমানান ও কষ্টকর হলেও হোটেলে কর্মচারীর কাজ করেই আপাতত পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছি।

 

নগর ইউপি চেয়ারম্যান নীলুফার ইয়াসমিন ডালু জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তাদের যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার চেষ্টা করব।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর