করোনার থাবায় রাজশাহীর শখের হাঁড়ি
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী বসন্তপুর এলাকার ‘ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ি’ তৈরির কারিগর সুশান্ত কুমার পাল (৫৯)। তার এই শখের হাঁড়ির জনপ্রিয়তা আজ দেশজুড়ে। সখের হাঁড়ির কারণে অনেক পুরস্কার এখন তার ঝুলিতে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ পুরষ্কারও পেয়েছেন তিনি। বৈশাখ মাস আসার আগেই সুশান্ত কুমার পালের নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকে না। বাড়ি জুড়ে ব্যস্ততার প্রতিচ্ছবি দেখা মেলে এই সময়।
শুধু সুশান্ত কুমারই নন, তার পরিবারের ছোটবড় সবারই বেড়ে যায় ব্যস্ততা। কিন্তু করোনার কারণে এবার বৈশাখী মেলা না হওয়ায় সখের হাঁড়ি পরিনত হয়েছে গলার কাঁটাতে। এসব হাঁড়ি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তিনিসহ বেশ কয়েটি পরিবার। হাঁড়ি তৈরী হয়ে গেছে কিন্তু এবারেতো বিক্রি হবে না। আর বিক্রি না হলে বছর জুড়ে খাবে কী এই হাঁড়ির কারিগররা।
মৃতপ্রায় এ মৃৎশিল্প টিকিয়ে আজও জীবিকা নির্বাহ করছেন কারুশিল্পী সুশান্ত কুমার পাল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মৃৎশিল্প আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন তিনি। সুশান্ত পালের ভাই সন্তোষ পাল, স্ত্রী মমতা রানী পাল, দুই ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল, এক মেয়ে সুচিত্রা রানী পাল এবং দুই ছেলের স্ত্রী মুক্তি রানী পাল ও করুণা রানী পাল। তারা সবাই এখন কারুশিল্পী।
রাজশাহীর পবা উপজেরার বাগধানী এলাকায় সুশান্ত কুমার পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখ উপলক্ষে অনেক আগে থেকেই হাঁড়ি তৈরি করে রেখেছেন তারা। পুরো বাড়িতে হাঁড়ি আরি হাঁড়ি। বাহারি এসব হাঁড়ির বেশির ভাগের রং এর কাজও প্রায় শেষ। এসব হাঁড়ি নিয়ে বিক্রির কথা থাকলেও সেসব হাড়ি এখন পড়ে রয়েছে বাড়ির উঠানের এক কোনে। অনেক হাঁড়ি এখনও কাঁচা রয়ে গেছে। আবার কোনটিতে রং করা হয় নি। করোনার প্রভাব পড়েছে এই মৃতশিল্পে।
সুশান্ত পালের তত্বাবধানে প্রতি বছরই এখানে তৈরি হয়ে হাজার বছরের পুরনো শখের হাঁড়ি, পঞ্চসাঞ্জি, মাটির পুতুলসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন তৈজসপত্র। রং, মোটিফ ও নকশায় তার তৈরি রাজশাহীর শখের হাঁড়ি পেয়েছে দেশজোড়া পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশে প্রচলিত শখের হাঁড়ির এখন অন্য নাম দাঁড়িয়েছে ‘রাজশাহীর শখের হাঁড়ি’। উৎসবপ্রিয় বাঙালির প্রতিদিনের জীবন, ধর্ম-সংস্কৃতি, আনন্দ-বেদনা এবং চিন্তার সাথে শখের হাঁড়ি একাকার হয়ে আছে।
সুশান্ত কুমার পাল জানান, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের সোনার গাঁ জাদুঘর চত্বর, ঢাকার বাংলা অ্যাকাডেমি চত্বর, চীনমৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্র চত্বর এবং হাটকো স্কুল চত্বরে মেলার আয়োজন করা হয়। সেসব মেলায় তাদের হাতের তৈরি অন্তত ১০ প্রকারের মাটির জিনিসপত্র থাকবে। যেগুলো কেবলই তৈরি করা হয়েছে পহেলা বৈশাখ নববর্ষ কেন্দ্র করে। সবকিছু ঠিকঠাক চিলো। কিন্তু এবার করোনার কারণে আমাদের কোন কিছুই বিক্রি হবে না। এবার অন্তত ৬লক্ষ টাকার হাঁড়ি তৈরি করা হয়েছিলো। তবে কোন হাঁড়ি বিক্রি হয় নি। এখনো বাড়িতে প্রায় ১০ হাজার হাঁড়ি আছে।
তিনি বলেন, এগুলো বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। সারা বছরের উপার্জন হয় বৈশাখী মেলা থেকে। তবে এবার সারা বছর কি খাবো এই নিয়েই ভবনা। আমার সাথে আরো কয়েক পরিবার এই কাজ করে। তদেরও একই অবস্থা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, এখন আমরা আপাতত করোনার জন্য কারা খেতে পারছে না তাদের দিকে নজর দিচ্ছি। তবে এটি শেষ হলে সরকারের তরফ থেকে বা আমাদের দিক থেকে কার কী ক্ষতি হয়েছে সেটির একটি তালিকা নিয়ে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।
রাজশাহী বার্তা/admin