কোরবানির হাট নিয়ে স্বাস্থ্যবিদদের শঙ্কা

সময়: 10:45 pm - July 4, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 130 বার

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলেছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। তবে দেশে যখন সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী তখন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর হাট বসানো হলে ‘ম্যাসাকার’ হবে বলে আশঙ্কা করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর সক্ষমতা আমাদের নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার দেশে নতুন করে করোনা শনাক্ত হন তিন হাজার ১১৪ জন। শনাক্তের হার ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ। দেশে মোট করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯১ জন। যার মধ্যে এক লাখ শনাক্ত হয়েছেন গত জুন মাসে। গত ৮ মার্চে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হন ৮৭ দিনে, পরের ৫০ হাজার শনাক্ত হন ১৬ দিনে, আর শেষের ৫০ হাজার শনাক্ত হয়েছেন মাত্র ১৪ দিনে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসমাগমে না যাওয়াই হচ্ছে করোনা থেকে বাঁচার প্রথম শর্ত। সেখানে পশুর হাটে মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে। এমনিতেই মানুষের মধ্যে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা বা মাস্ক পরার মতো বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। আর গরুর হাটে কোনোভাবেই করোনা প্রতিরোধের এই তিন ‘বেসিক’ মেনে চলা সম্ভব নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভয়াবহ পরিস্থিতে এখনও আমরা যাইনি। সেখানে এমন পরিস্থিতিতে পশুর হাট না বসাতে অনুরোধ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। বিকল্প পন্থায় সেটি করা যায় কিনা সরকারকে তা ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন।

কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন না করা হলে কোরবানির পশুর হাট করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘যেখানে-সেখানে পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করলে কোরবানির পশুর হাট করোনা ঝুঁকিকে ভয়ানক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণের হার যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন এমন ভাবনা একেবারেই যুক্তিহীন, ভিত্তিহীন। এখনতো চারিদিকে সংক্রমণ, বায়োলজিক্যালি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। যখন একটা দেশে মহামারি হয়, তখন যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে না এনে জনসমাগম করা যাবে না, এটা আত্মঘাতী হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস এমনিতেই দুর্বল হয় না, কোথাও হয়নি। এর জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে তার থেকে দূরে থাকতে হয়। সেখানে আমরা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবার জন্য পশুর হাট বসাচ্ছি! এটা ঠিক হচ্ছে না, একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। আমরা বুঝে অথবা না বুঝে যুদ্ধক্ষেত্রে যাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সেই সক্ষমতা নেই, এক হাতিরঝিলেই জনসমাগম বন্ধ করতে পারিনি। তাহলে কী করে আমরা পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানবো।’

জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি তো মানুষ এমনিতেই মানছে না। সেখানে পশুর হাট কী করে হয়। এটা কোনোভাবেই কন্ট্রোল মতো পথ নেই, আমরা এখনও এভাবে প্রশিক্ষিত না-এটা বুঝতে হবে।’

কোরবানির পশু জবাইপশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা থিওরিটিক্যাল কনসেপ্ট, তাতে অনেক কিছু বলা যায়, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা কতটা যৌক্তিক সেটাও ভেবে দেখার জন্য বলছি। আমরা মাস্কই পরতে জানি না, কিংবা পরি না অথবা এই সম্পর্কে মানুষকে ঠিকমতো সচেতন করতে পারিনি। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী করে পশুর হাট! বিজ্ঞান এবং জনস্বাস্থ্য একে পারমিট করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানি জরুরি কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে কোরবানির পশুটি হাটে গিয়ে কিনতে হবে, বিকল্প ভাবা জরুরি।’

পশুর হাট একটা জনসমাগমের জায়গা সেখানে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না মন্তব্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট করা যায় না। পশুর হাট করাই উচিত না। পশুর হাটের সঙ্গে কাঁচা গোস্ত হ্যান্ডেলিং করা এটাও জড়িত। এই বিষয়গুলো চিন্তা করা দরকার, নয়তো উপায় থাকবে না।’

সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী এবং পশুর হাট হলে আরেকটা ‘ম্যাসাকার’ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে চাই, যতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটের কথা বলা হোক, কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষিতে এটা মানা প্রকৃতপক্ষে সম্ভব হবে না। সেই সচেতনতা আমাদের নেই। এতদিনেও এমন কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি যে গরুর হাটেও সে রকম ব্যবস্থা থাকবে।’

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর