রাসিকে নজিরবিহীন দুর্নীতি

সময়: 1:05 pm - September 23, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 209 বার

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) ১৬টি ফ্লাডলাইট স্থাপনে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফ্লাডলাইট স্থাপন এবং সহায়ক উপকরণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে মাত্র সোয়া ২ কোটি টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ৯ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করেছে রাসিকের বিদ্যুৎ বিভাগ। অর্থাৎ বাজারমূল্যের চেয়ে ৬ কোটি ৮৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩ টাকার বেশি দিয়েছে।

রাসিকের ১৬ মিটার উচ্চতার হাই মাস্ট পোল টেন্ডার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিংকে কাজ পাইয়ে দিতে সেটির এস্টিমেট অনুযায়ী টেন্ডার আহ্বান করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে পুরো প্যাকেজটির মূল্য ২ কোটি ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭৩৪ টাকা। অথচ প্রতিটি আইটেমের দাম ৩/৪ গুণ বেশি নির্ধারণ করে ৯ কোটি ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬০ টাকা টেন্ডার ডাকা হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একমাত্র দরপত্রে পুরো কাজটি হ্যারোকে দিয়ে করানো হয়।

অভিযোগ-টেন্ডারের শর্তানুযায়ী ৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও হ্যারোকে কাজটি দেয় রাসিকের বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদেশ থেকে আমদানি করা বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির শিপমেন্ট ডকুমেন্ট, এলসি, বিল অব ল্যান্ডিং, শুল্ক, কর ও ভ্যাট পরিশোধ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্রও দাখিল করেনি হ্যারো। এছাড়া সরবরাহ ও স্থাপিত সরঞ্জামাদির মান যাচাইয়ে বুয়েট থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি।

রাসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেয়াজত হোসেন বলেন, নগরীতে স্থাপিত ১৬টি ফ্লাডলাইট ও সরঞ্জামাদি অতি উচ্চমানের। তাই দর কয়েকগুণ বেশি ধরা হয়েছে। হ্যারোকে কাজ দেয়ায় পিপিআরের শর্ত লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টেন্ডারে অন্য প্রতিষ্ঠান অংশ না নেয়ায় তাদের কাজটি দেয়া হয়। একাধিকবার দরপত্র ডাকার প্রয়োজন পড়েনি। তবে হ্যারোর অভিজ্ঞতার সনদ না থাকা এবং পণ্যের মান পরীক্ষার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

হ্যারো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল হুদা টিটো দাবি করেন, টেন্ডারের সব শর্ত পূরণ করেই কাজটি তারা পেয়েছেন। অতিরিক্ত পণ্যমূল্য নেয়া হয়নি। বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব পণ্য সরবরাহ ও স্থাপন করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চীনের তৈরি ২০-২৫ মিটার উচ্চতার একটি হাই মাস্ট পোল বা খুঁটির সর্বোচ্চ দাম ৩ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা।

৬১ শতাংশ হিসাবে ১ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ টাকা আমদানি শুল্ক, ক্রয়মূল্যের ওপর শতকরা ২০ হিসাবে ৪৩ হাজার ২০০ টাকা ভ্যাট ও আয়কর, বন্দর থেকে দেশের যেকোনোও স্থানে সর্বোচ্চ পরিবহন ও স্থাপন ব্যয় ৭০ হাজার টাকা এবং প্রচলিত নিয়মে শতকরা ১৫ ভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা যোগ করলে একেকটি পোলের খরচ পড়ে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৭২ হাজার ৫১৫ টাকা।
কিন্তু রাসিকের বিদ্যুৎ বিভাগ প্রতিটি খুঁটির জন্য হ্যারোকে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। প্রতিটিতে অতিরিক্ত বিল দেয়া হয়েছে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮৫ টাকা।

গেল বছর সেপ্টেম্বরে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে হাইভোল্টেজ এলইডিসহ ১৬টি ফ্লাডলাইট স্থাপনে ৯ কোটি ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬০ টাকার টেন্ডার ডাকে রাসিক। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হ্যারো ৯ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৭ টাকা ৭০ পয়সা দর দাখিল করে। ফ্লাডলাইটে ব্যবহৃত ২০০ ওয়াট ক্ষমতার ৩২০টি এলইডি লাইটের প্রতিটির বাজারমূল্য ১৫ হাজার ৮৭৩ টাকা। তবে টেন্ডারে ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা দর হিসাব করে মোট ২ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়।

২০০ ওয়াটের প্রতিটি এলইডির দাম ৬৩ হাজার ৮০০ টাকা করে মোট ২ কোটি ৪ লাখ ১৬ হাজার পরিশোধ করা হয়। অথচ বাজারমূল্যে ৩২০টি এলইডির মোট দাম পড়ে ৫০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬০ টাকা। এক্ষেত্রে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত ১ কোটি ৫৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪০ টাকা দেয়া হয়েছে।

ফ্লাডলাইটে সংযোজিত ২০০টি ২৫০ ওয়াট ক্ষমতার এলইডির প্রতিটির বাজারমূল্য ১৯ হাজার ৩০৯ টাকা। কিন্তু টেন্ডারে প্রত্যেকটির দাম ৭৫ হাজার টাকা হিসাবে মোট ব্যয় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গণ্য হয়।

চীনা আরওএইচএস কোম্পানির তৈরি ২০০টি এলইডির মোট বাজারমূল্য ৩৬ লাখ ৬১ হাজার ৮০৪ টাকা। তবে হ্যারোকে অতিরিক্ত ১ কোটি ১১ লাখ ৩৮ হাজার ২০০ টাকাসহ বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

৬৩ এএমপি অটো লজিক কন্ট্রোলারের ইউনিটের বাজারমূল্য ৩৬ হাজার টাকা। কিন্তু ঠিকাদারকে ১৬টি এএমপি কন্ট্রোলারের প্রতি এককের মূল্য ৭২ হাজার টাকা হিসাবে মোট ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে হ্যারোকে অতিরিক্ত ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বেশি দেয়া হয়েছে। একইভাবে ১ হাজার ২৪০ মিটার ক্যাবল সরবরাহেও ঠিকাদারকে ৩৭ হাজার ২০০ টাকা বেশি বিল দিয়েছে রাসিক।

রাজশাহী বার্তা/Durul Haque

এই বিভাগের আরও খবর