রাজশাহীতে গরীব অসহায় মানুষের খাবার বিতরণ
সময়: 6:28 pm - September 25, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 205 বার
দশে মিলে করি ভোজ। এরাও মানুষ, আসুন এদের সাহায্যে এগিয়ে আসি। ফারুক আহমেদ যিনি এই উদ্যোগটি নিয়েছেন, গরিব অসহায় মানুষের পাশে থেকে সপ্তাহে একদিন করে ভোজ খাওয়ান তিনি। শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর বিন্দুর মোড় রেলগেটে প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে গরীব অসহায় মানুষের মুখে তুলে দেন খাবার। বর্তমানে ফারুকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই তাকে সাহায্য করেন। আর সেই সাহায্যের অর্থ দিয়েই ফারুক প্রতি শুক্রবার অসহায় মানুষের জন্য আয়োজন করেন এই খাবারের।
শুরুতে ১০-১২ জনকে নিয়ে খেতেন। এখন সে সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ জন। আগে পুরোটাই খরচ করতেন নিজের পকেট থেকে। এই বাতিক দেখে এখন কিছু মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর দিকে।
ফারুক আহম্মেদের চায়ের দোকান রাজশাহী মহানগরীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরের পাশে, গৌরহাঙ্গা গোরস্থানসংলগ্ন ফুটপাতে। তাঁর পৈতৃক নিবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে। বাবার নাম আবদুল মান্নান। তাঁরা ছয় ভাইবোন। ফারুক খুব ছোটবেলায় রাজশাহী শহরে চলে আসেন। হোটেলের ওয়েটার হিসেবে কাজ শুরু করেন। একসময় তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কোনো উপায় না দেখে ফুটপাতে চায়ের দোকান দিয়ে বসেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি একই জায়গায় চায়ের দোকান চালাচ্ছেন।
নগরের এই মোড়েই সকালে শ্রমিকেরা কাজের জন্য ডালি-কোদাল নিয়ে এসে বসেন। যাত্রী না পাওয়া রিকশাচালকেরা এসে দাঁড়ান চায়ের দোকানের পাশে। ভিক্ষুকেরাও এসে বসে থাকেন। ফারুক আহম্মেদ দেখেন কিছু মানুষ দুপুরটা না খেয়েই কাটিয়ে দেন।
বছরখানেক আগে কোনো এক শুক্রবার দুপুরে দুই কেজি চাল দিয়ে সবজি-খিচুড়ি বানিয়ে এই অভুক্ত মানুষগুলোকে নিয়ে খেতে বসেন ফারুক আহম্মেদ। সেদিন তিনি সম্পূর্ণ নতুন এক অনুভূতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রতি শুক্রবার দুপুরে চলছে এই আয়োজন।
একজন চা–দোকানির এই উদ্যোগ দেখে মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্লেট কিনে দিয়েছেন। একটি বড় হাঁড়ি তিনি নিজে কিনেছেন ৪ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে। আরেকটি একজন দান করেছেন। তবে যাঁরা দান করেন, তাঁরা নিজের পরিচয় দিতে চান না।
ফারুক আহম্মেদ বলেন, প্রতি শুক্রবারেই অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যা তাঁর একার পক্ষে সংস্থান করা সম্ভব হয় না। তাই কেউ সহযোগিতা করলে তিনি ফিরিয়ে দেন না। মানুষের সহযোগিতা পেয়ে তিনি খাবারের মানোন্নয়ন করেছেন। আগে সবজি-খিচুড়ি করতেন। এখন করেন বিরিয়ানি। আগে দুই কেজি চালের খিচুড়ি করতেন। এখন করেন এক মণ চাল দিয়ে। আগে মাংস দিতে পারতেন না। এখন মাংস দেন।
রান্নার বিশাল আয়োজনের জন্য ফারুক আহম্মেদের পরিবারের লোকজনও সহযোগিতা করে থাকে। ছেলে মেহেদী হাসান নবম শ্রেণিতে পড়ে। শুক্রবার তার ছুটির দিন হওয়ার কারণে সে এসে বাবার রান্নায় সহযোগিতা করে। তিনি বৃহস্পতিবারের দিন বাজার করেন। স্ত্রী পলি খাতুন কাটা-বাছার কাজ করে দেন।
সম্প্রতি এক শুক্রবার দুপুরে তাঁর চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, বিরাট হাঁড়িতে রান্না চলছে। আর ফুটপাতের ওপরে সার হয়ে মানুষ বসে রয়েছেন প্লেট নিয়ে। খেতে বসেছেন নাসিমা খাতুন (২৪)। তিনি ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করেন। বললেন, ‘বেচাবিক্রি নাই। দুপুরে খাওয়ার টাকাটাও হয়নি। তাই এখানে এসে খেয়ে নিলেন।’ মরিয়ম বেগম (৪৫) নগরে ভিক্ষা করেন। তিনি বলেন, যেখানেই যান শুক্রবার দুপুরে এই এলাকায় থাকেন। আয়েশ করে একবেলা ভালো খাবার খেতে পান। লালপুর উপজেলার আবদুলপুর থেকে কলা বিক্রি করতে এসেছিলেন মিনারুল ইসলাম। তাঁর ব্যবসা ভালো হয়নি। বসেই ছিলেন। দুপুরে খাওয়া হয়নি। তাই এখানে এসে খেয়ে নিলেন।
দেখা গেল স্থানীয় কিছু যুবক ফারুক আহম্মেদকে খাবার পরিবেশনে সহযোগিতা করছেন।
রাজশাহী বার্তা/admin