সোনামসজিদ পর্যটন মোটেল দীর্ঘ সাত বছর পর চালু
অবশেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ পর্যটন মোটেল দীর্ঘ সাত বছর পর চালু হয়েছে। পর্যটন মোটেল নির্মাণকাজ শেষ হওয়া মাত্রই উদ্বোধন হওয়ার কয়েকদিন আগেই নাশকতার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। দীর্ঘ ৭ বছর পর সংস্কার করা হয়েছে এটি।
পোড়া ক্ষত সারিয়ে প্রাণ ফিরেছে জেলার একমাত্র এই পর্যটন মোটেলটি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোটেলটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে গেছে। তবে থেমে নেই মোটেলের কর্মকাণ্ড। এরই মধ্যে অতিথিদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে মোটেলটি।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল সোনামসজিদ পর্যটন মোটেল। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি মোটেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই দিন নিহত হন পর্যটন বিভাগের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী। আগুন ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মোটেলটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও মোটেল এর তথ্য অনুযায়ী, নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পারিসা কনস্ট্রাকশন প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটেলটি নির্মাণ করে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। পারিসা কনস্ট্রাকশন এটি পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু তার আগেই দুর্বৃত্তরা মোটেলে আগুন দিয়ে ভবনসহ আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন মোটেলটি সংস্কার করে চালু করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম। এর পরেও পর্যটন মোটেলটি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। এর প্রায় ৫ বছর পর এটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বেসামরিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
জেলা সদর থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে সোনামসজিদ ঘুরতে আসা প্রভাষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগেও এখানে ঘুরতে এসেছি। তবে ভালোমানের কোনো খাবারের দোকান না থাকায় বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসতে হতো। তবে পর্যটন মোটেলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে শুনে আবারো ঘুরতে এসেছি। এবার বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসিনি, মোটেলে খেলাম ও খাবার মানও ভালো।
ঢাকা থেকে ব্যবসায়িক কাছে এসেছিলেন ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, আগে ব্যবসায়িক কাজে অনেকবার আসতে হয়েছে সোনামসজিদে কিন্তু এখানে রাত যাপনের কোনো ব্যবস্থা থাকায় জেলা সদরে গিয়ে থাকতে হতো। এখানে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল রাতে থাকার। কিন্তু এবার মোটেলে থেকেছি।
তিনি আরও বলেন, দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর সোনামসজিদে হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে থাকা ও খাবারের সমস্যায় পড়তেন। কিন্তু এখন মোটেল চালু হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিনের সে সমস্যার সমাধান হয়েছে।
মোটেলের নির্বাহী অফিসার মনোয়ার ফেরদৌস খন্দকার জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা থাকলেও তার সিডিউলজনিত কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও সব কার্যক্রম শুরু চলছে মোটেলের।
তিনি আরও জানান, তিন তলাবিশিষ্ট পর্যটন মোটেলটিতে রয়েছে ১৮টি ভিআইপি কক্ষ, সাধারণ কক্ষ ১২টি, ইকোনমি কক্ষ ও সাধারণের জন্য ডরমিটরি কক্ষ ১২টি, অভ্যর্থনা কক্ষ একটি, ক্যান্টিন একটি, রান্নাঘর একটি, একটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি সংস্কার করা হয়েছে। এটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি এটি দৃষ্টি নন্দন করা হয়েছে।
সদ্য বিদায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক জানান, গত মাসের শেষের দিকেই আনুষ্ঠানিকভাবে মোটেলটির কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রাজশাহী বার্তা/admin