ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাতমূলক : রাবি ভিসি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এই তদন্ত প্রতিবেদন একপেশে ও পক্ষপাতমূলক দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন উপাচার্য।
আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন উপাচার্য। তাঁর দাবি- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রশাসনের (সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন) বিভিন্ন দুর্নীতির খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটি যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেটা সম্পর্কে উপাচার্য হিসেবে আমি অবহিত নয়। তবে ইউজিসি তদন্ত কমিটির সদস্যদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত খবরগুলো জনমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য দেশের মানুষ ও সরকারের কাছে আমার অবস্থান স্পষ্ট করার অনুভব করছি।’
উপাচার্য বলেন, ‘যেকোনো আমলযোগ্য অভিযোগের তদন্ত বাঞ্চনীয়। আমি তদন্তের বিরুদ্ধে নয়। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ যথাযথ হলে তদন্তে আমার একশতভাগ সম্মতি আছে তবে সেই তদন্ত হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আইনসিদ্ধ ভাবে গঠিত পক্ষপাতহীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি গত ৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসির চেয়ারম্যানকে পত্র দিয়ে জানিয়েছিলাম। আমি আশা করেছিলাম সেই পত্র বিবেচনায় নিয়ে চেয়ারম্যান পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিন্তু তা বাস্তবে ঘটেনি। বরং আমি মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বলাবাহুল্য প্রতিবেদনটি একপেশে এবং পক্ষপাতমূলক সুতরাং আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘আমি দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বড় বড় আর্থিক দূর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত হয়। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকাস্থ অতিথি ভবন ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে হেকেপ প্রকল্পের সাড়ে ৩ কোটি টাকা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে ৮০ লক্ষ টাকা তছরূপের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করি। এসব অপকর্মের সাথে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগসমূহ উত্থাপন করেছে।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘১৯৮৫ ও ১৯৯২ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী ২০১২ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত নিয়োগ কার্যক্রম চালু ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর সনাতন পদ্ধতির সাথে গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত জিপিএ সংযোজনপূর্বক শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা ২০১২ সালের ১০ মে তারিখের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়। সাবেক উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দীন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু পরে তিনি ২০১৪ সালে তার কন্যার এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-কে ভিত্তি ধরে শুধুমাত্র ইংরেজি বিভাগের নিয়োগে যোগ্যতা পুননির্ধারণ করেন। তাঁর কন্যাকে ২০১৪ সালের নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় ২০১৫ সালে সিন্ডিকেট সভায় সকল বিভাগ ইনস্টিটিউটের জন্য অতি উচ্চযোগ্যতা সম্পন্ন নিয়োগ নীতিমালা অনুমোদিত হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করা হয়েছে।’
অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, সাবেক উপাচার্য প্রণীত শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অতি উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। এসব বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার জন্য প্রশাসনকে লিখিত ভাবে অনুরোধ করে। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পুনরায় নির্ধারণের জন্য ২০১৭ সালে ৭ সদস্যের যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভা অনুমোদনক্রমে শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা প্রণীত হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দিয়ে এই নীতিমালা যথাযথ অনুসরণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
নিজের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়নি দাবি করে উপাচার্য বলেন, ২০১৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ২৪টি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে কয়টি বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও নীতিমালা সম্পর্কে কোনো আপত্তি বা অভিযোগ উত্থাপিত
রাজশাহী বার্তা/admin