ইউপি সদস্য আল-আমিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ০২নং ওয়ার্ড সদস্য আল-আমিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের গত ১১টি মাসিক সভায় অনুপস্থিত থাকা, সরকারি বিভিন্ন কাজে বাঁধা ও নয়ছয় করা, চাকরি দেয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎ, অন্যের জমি জাল করে বিক্রি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্য আল-আমিনের বিরুদ্ধে। বারোঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রামের মো. মুনতাজ আলী চৌধুরীর ছেলে ইউপি সদস্য আল-আমিনের বিভিন্ন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দীর্ঘ ২১ মাস সাজাও হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বটতলাহাটের মো. গোলাম মোস্তফার ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম গত বছরের ২৪ মে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রির নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আল-আমিন মেম্বারের বিরুদ্ধে নাচোল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তার বক্তব্য ও মামলা সূত্রে জানা যায়, নাচোল থানার পুকুরিয়াপাড়া মৌজার ৩৯৬ নং খতিয়ান ও ৩৮২ নং আরএস দাগে ১.০৩৫০ একর জমি ৯ লক্ষ টাকা মূল্য নির্ধারনে আল-আমিন মেম্বার বিক্রি করতে চাইলে তাকে গতবছরের ২১ ফেব্রুয়ারী বায়না হিসেবে ২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়। কাগজপত্র যাচাই করে জানতে পারি আরএস রেকর্ডে এই জমির মালিক ফাতেমা বেগম। এরপর স্যতিটা জানতে পেরে আল-আমিন মেম্বারের কাছে টাকা ফেরত চাইলে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়, ফেরত দিতে পারবো না, যা পারো করে নিও।
এর আগেও ২০১১ সালে একই বিক্রিও করেছিলেন আল-আমিন মেম্বার ও তার সহযোগী আকবর আলী। সদর উপজেলার চকবহরমপুরের মৃত ইউসুফ আলীর ছেলে কাজী মো. আব্দুল বারীর কাছে .৯৯৫০ একর একই জমি ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। যা নাচোল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারী ৪৫৬ নং কবলা দলিলে চূড়ান্তভাবে বিক্রয় ও হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু জমিটি ভোগ দখল করতে গেলে বাধা আসে জমির প্রকৃত মালিক ফাতেমা বেগমের পক্ষ হতে। টাকা ফেরতের জন্য একাধিকবার সালিশে বসলেও সমাধান হয়নি ও কাজী বারী জানান, আলামিন এখন বলছে, টাকা দিতে পারবো না।
সুবিধাবাদী রাজনীতি করা ইউপি সদস্য আল-আমিন জেলা শহরের চাঁদলায়ের এক ব্যক্তির কাছে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার না করে ১২ লক্ষ টাকা নেয়। এছাড়াও তার নিজের গ্রামেরই গিয়াস মিস্ত্রির ছেলের কাছে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৩.৫ লক্ষ টাকা নেয়। ১.৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেও এখনও তার কাছে তারা ২ লক্ষ টাকা পাবে।
বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়েরকেও নানাভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে আল-আমিন। শুধুমাত্র বর্তমান চেয়ারম্যানকেই নয়, এর আগে বিগত ৪ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করার বিরল রেকর্ড রয়েছে তার। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের বলেন, আমার ড্রয়ারে গাঁজা রেখে আমাকে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করছে আল-আমিন। এর আগেও অন্য মামলায় আমাকে জড়িয়ে জনগণের সেবা করা থেকে আমাকে বিরত রেখেছে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হোসেন নিজে উপস্থিত থেকে বারোঘরিয়া হাটে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। এটি নিয়েও আমার নামে মিথ্যাচার করে মানববন্ধন করে আল-আমিন। জেলা প্রশাসক ও ইউএনও’র অনুমতিক্রমে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের তথ্য যাচাই-বাছায়ের কারনে ৩৯০ বস্তা চাল দেয়া স্থগিত ছিলো। এটি নিয়ে ভুল তথ্য গনমাধ্যমে সংবাদ ও মামলা করেছে আমার বিরুদ্ধে।
চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের আরো জানান, গত ১১টি মাসিক সভায় সে অনুপস্থিত। গ্রাম্য পুলিশরা তার বাসায় নোটিশ নিয়ে গেলে গালিগালাজ করে এবং কখনও পরিষদে আসলেও অন্য ইউপি সদস্যদের সাথে কথাও বলে না। এমনকি সরকারের নির্দেশনায় হোল্ডিং ট্যাক্সের কাজ শুরু করলে সেখানেও বাঁধা দেয় এবং সকল নথিপত্র ছিড়ে ফেলে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করলে আবার কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।
এছাড়াও চামাগ্রাম হেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি নির্মান কাজেও অর্থ আত্মসাৎ, মাদক সেবন, এলাকায় পুলিশ-র্যাবের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্য আল-আমিনের বিরুদ্ধে।
তবে মুঠোফোনে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য আল-আমিন।
রাজশাহী বার্তা/admin