নিজের ভাতার টাকায় শহীদ মিনারের অভাব পূরণ করেছেন এক মুক্তিযোদ্ধা

সময়: 3:48 pm - February 21, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 131 বার

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর উদয়পুরে মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকায় নিজের গ্রামে শহীদ মিনারের অভাব পূরণ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন খেলন তালুকদার নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের প্রয়াত বসন্ত তালুকদারের ছেলে।

সহস্রাধিক জনগোষ্ঠীর ওই উদয়পুর গ্রামে স্কুল, হাট-বাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও ছিল না স্থায়ী শহীদ মিনার। তাই তার এ গ্রামের নিজ বাড়িতে ইট সিমেন্টে নির্মাণের মাধ্যমে গ্রামটিতে শহীদ মিনারের অভাব পূরণ করেছেন তিনি।

এসব তথ্য জানিয়ে উদয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রান্তোষ সামন্ত জানান, গ্রামের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন শহীদ মিনার নেই। এ শহীদ মিনারটি স্থানীয়দের মাঝে বিশেষ ভূমিকা রাখছে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করতে। খেলন তালুকদারের উদারতায় ওই শহীদ মিনারটি গড়ে উঠেছে বলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের নিয়ে আজ ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রভাত ফেরি শেষে এখানে শহীদ স্মরনে পুস্পস্তবক অর্পণ করা সম্ভব হয়েছে।

গ্রামের শিক্ষিত ও প্রগতিশীল যুবক অসীম সরকার আক্ষেপ করে জানান, তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবনে নিভৃত এ পল্লীতে শহীদ মিনার পাননি বলে মাতৃভাষা দিবসের প্রায়শই ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হতো না শহীদদের প্রতি। এখন শহীদ মিনারটি হয়েছে বলেই এখানকার শিশুরা তাতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে।

খেলন তালুকদারের ছেলে সুব্রত তালুকদার জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা বেশ কয়েক মাস জমিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছিলেন ২০০৮ সালে। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি। তার বয়স ছিল ৭১ বছর। এখানকার কোমলমতি শিশু ও তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস ও জ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করতে এবং শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর সুবিধার্থে এ শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছিলেন খেলন তালুকদার। তার স্বপ্ন ছিল সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন দেখে যাবার।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হরিধন সরকার শুক্রবার প্রভাতে ওই শহীদ মিনারে শহীদ স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জানান, তিনি ক্রমান্বয়ে এ ইউনিয়নের সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করবেন। বিশাল জায়গা জুড়ে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না তিনি। তাই ইউনিয়নটির বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঘাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সম্প্রতি দেড় লক্ষ টাকা টি আর থেকে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর