চাঁপাইনবাবগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সারাদেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জেও যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার সকালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সেতু সংলগ্ন স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন, বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসি ইসলাম জেসি, জেলা প্রশাসক মোঃ মঞ্জুরুল হাফিজ, পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিবসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের ৪৯তম শাহাদৎ বার্ষিকী। মহানন্দা নদীর পাড়ে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের শহীদ স্থানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ভবন চত্বরে অবস্থিত স্মৃতিসৌধে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে বাংলার এই বীর সন্তানকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এসময় জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে পুস্পার্ঘ অর্পণকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ- সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রুহুল আমিনসহ মুক্তিযোদ্ধাগণ, চাঁপাইনবাবঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, জেলা প্রশাসক মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিব বিপিএম-পিপিএম (বার)সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম তাজকির-উজ জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহম্মদ মাহবুব আলম খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেবেন্দ্রনাথ ওরাঁও, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জাকিউল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তসিকুল ইসলাম তসি, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল ইসলাম সরকারসহ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ ও আওয়ামীলীগ
নেতৃবৃন্দসহ সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন আখতার, সহকারী কমিশনার চন্দন কর, রওশনা জাহান, আশিষ মমতাজ, জেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক আব্দুল হাই, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির জেলা সভাপতি আলহাজ¦ আব্দুস সামাদ, সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাফফর হোসেনসহ অন্যরা।।
শেষে বাংলার এই বীর সন্তানসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সোনামসজিদ চত্বরে শহীদ জাহাঙ্গীরের মাজারে পুস্পার্ঘ অর্পণ, মাজার জিয়ারত, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলার মুক্তিযোদ্ধাগণ উপস্থিত হন।
উল্লেখ্য, বাঙলা মায়ের দামাল সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পার্শ্বে মহানন্দা নদীর তীরবর্তী গ্রাম রেহায়চর এলাকায় সংগঠিত হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সুম্মুখযুদ্ধে ধ্বংস করে দেয় শত্রু বাহিনীর ১৮টি ট্রেঞ্চ ও ২০ থেকে ২২ টি বাংকার। শত্রুমুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
এরপর সকাল ১০টায় সোনামসজিদস্থ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং শহীদ মেজর নাজমুল হক এর সমাধিস্থলে এবং সোনামসজিদ সংলগ্ন শহীদদের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সালিম উদ্দিন আহমেদ শিমুল, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ বীরমুক্তিযোদ্ধাগন ও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার বিকেল ৩টায় সদর উপজেলার পুরাতন সিএন্ডবি ঘাটে নবনির্মিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ শ^শানঘাট বধ্যভুমি স্মৃতিস্মারক এর উদ্বোধন করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসি ইসলাম জেসি ও জেলা প্রশাসক মোঃ মঞ্জুরুল হাফিজ। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বিকেল ৪টায় অনলাইন প্লাটফর্মে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় অনলাইন প্লাটফর্মে চরমপত্র/বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে পাঠ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
তাছাড়াও জেলার বিভিন্ন মসজিদ ও মন্দিরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ ডিসেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর শহর মুক্ত করতে কয়েকটি নৌকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে রেহায়চর এলাকায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। সম্মুখযুদ্ধে একের পর এক পরাস্ত করতে থাকেন শত্রু বাহিনীকে। ১৪ ডিসেম্বর রাতের আধার কেটে সকালে সূর্য ওঠার আগেই নির্ভিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জাহাঙ্গীর সহযোদ্ধাদের নিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে চলেন এবং ধ্বংস করে দেন শত্রু বাহিনীর ১৮টি ট্রেঞ্চ ও ২০ থেকে ২২ টি বাংকার। জাহাঙ্গীরের দুসাহসিক ও দুরন্ত আক্রমণে শত্রু বাহিনী তাদের আস্তানা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রেহায়চর ঘাটের কাছেই শত্রু বাহিনীর সর্বশেষ বাংকারটি দখল করতে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এগোতে থাকার সময় হটাৎ শত্রু বাহিনীর একটি গুলি এসে লাগে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরের কপালে। লুটিয়ে পড়েন মাটিতে বাংলার এই বীর সন্তান এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। পরের দিন শহীদ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরকে দাফন করা হয় হযরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ (রহঃ)-এর পুণ্যভূমি বাংলার পুরাতন রাজধানী গৌড়ের ঐতিহাসিক সোনামসজিদ চত্বরে।
রাজশাহী বার্তা/বার্তা সম্পাদক