ঘুষের টাকা ও চাল দিয়েও মেলেনি বিদ্যুৎ সংযোগ

সময়: 5:02 pm - February 23, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 132 বার

চাহিদামতো ঘুষের পাঁচ হাজার টাকা ও তিন কেজি চাল দিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী।

জানা যায়, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দীঘলটারী আজিজুলের পাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। গ্রামটিতে প্রায় অর্ধশত পরিবার বাস করে। প্রতিটি বাড়িতে  বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ ছিল না অবহেলিত এ গ্রামটিতে। এ গ্রামে রয়েছে শঠিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমন কী ইউনিয়ন ভূমি অফিসটিও এই গ্রামেই অবস্থিত।

দুই বছর আগে এ গ্রামের বাসিন্দা শাহানতুল্লার ছেলে তাহাজ্জল হোসেন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নাম করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মিটার প্রতি পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে গ্রামবাসী সবাই পাঁচ হাজার টাকা করে তাহাজ্জলকে জমা দেন। এর কিছুদিন পর বিদ্যুতের খুঁটি ও তার পৌঁছে যায়। শুরু হয় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। খুঁটি বসানো ও তার সাঁটানোর শ্রমিকদের খাওয়ানোর জন্য মিটার প্রতি তাহাজ্জল আদায় করেন তিন কেজি চাল ও ৫০ টাকা। এরই মাঝে খুঁটি ও তার সাঁটানো শেষ হলে নতুন করে বায়না ধরেন বিদ্যুৎ অফিসের দালাল তাহাজ্জল। বিদ্যুৎ সংযোগ কাজ সমাপ্ত করতে প্রতি মিটারে আরও তিনহাজার টাকা দাবি করেন। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন তাহাজ্জল।

পরে গ্রামবাসী বিষয়টি নিয়ে বাইরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে এতো টাকা লাগে না। ফলে নিরুপায় হয় তাহাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন গ্রামের ৩৫ জন মানুষ।

ওই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মতিয়ার রহমান, দিনমজুর এন্তাজ আলী বাংলানিউজকে বলেন, জমিতে সেচ ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে কষ্ট করে হলেও পাঁচ হাজার ৫০ টাকা ও তিনকেজি চাল দিয়েছি। এখন আবার তাহাজ্জল আরও তিন হাজার টাকা দাবি করছেন। না দিলে সংযোগ না দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার খুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন তাহাজ্জল।

শুধু দীঘলটারী গ্রাম নয়। লালমনিরহাটের প্রতিটি বিদ্যুৎ সংযোগে ৪-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন দালালরা। দালালদের দাবির টাকা ছাড়া মিটার পাস করা হয় না। এমনকি ঠিকাদার অতিরিক্ত টাকা না পেলে খুঁটি ও তার সাঁটানোর কাজ করেন না। তাই বাধ্য হয়ে তারা গ্রাহকদের কাছে টাকা আদায় করে ঠিকাদার ও অফিসকে ম্যানেজ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

বিদ্যুত অফিসের দালাল তাহাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাহকরা যে টাকা দিয়েছেন তার কাজ করে দেওয়া হয়েছে। কারো টাকা আমি আত্মসাৎ করিনি। বাকি কাজ করতে আরও টাকা লাগবে এজন্য চাওয়া হয়েছে। তবে টাকা কি কাজে লাগে তার কোনো সদুত্তর তিনি দেননি।

পল্লীবিদ্যুত সমিতির আদিতমারী উপজেলা সাব-স্টেশনের সহকারী জোনাল ম্যানেজার শফিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, শতভাগ ফ্রিতে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার পৌঁছানো হচ্ছে। এরপর সদস্য ভর্তি ফি ৫০ টাকা ও মিটার ফি ৪০০ টাকায় বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর অতিরিক্ত নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দালাল ও প্রতারকদের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর