লিচুর বাগানে মৌমাছি চাষে লাভবান খামারি ও চাষিরা
চারিদিকে লিচুর বাগান। মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। গাছে গাছে মুকুল। মধুর উৎপাদন বাড়াতে বাগানে বাগানে চাষিরা বসিয়েছেন ‘মৌ বাক্স’। সেখান থেকে দলে দলে মৌমাছির ঝাঁক বসছে লিচুর মুকুলে। এভাবেই লিচুর বাগানে মৌমাছি চাষে লাভবান হচ্ছেন মৌ খামারি ও লিচু চাষিরা।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর, বিয়াঘাট, চাপিলা, ধারাবারিষা ইউনিয়নের ৪১০ হেক্টর জমিতে পাঁচ শতাধিক লিচু বাগান আছে। এসব বাগানে বড় আকারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মোজাফ্ফর, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি জাতের লিচু চাষ হয়। বাছাইকৃত বাগানগুলোয় ৭৫ জন চাষি ৭ হাজার মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন।
উপজেলার নাজিরপুর ও বিয়াঘাট ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, লিচু গাছের মুকুল বাতাসে ছড়াচ্ছে তীব্র সুগন্ধ। গাছগুলোর নিচে ৭০ থেকে ৮০টি করে মৌ বাক্স বসিয়েছেন চাষিরা। মৌমাছি দলবেঁধে একবার উড়ে গাছে বসে আবার উড়ে এসে বসছে মৌ বাক্সে।
মৌ চাষি সোহেল সরকার জানান, বাগানে তিনি অর্ধশত ছোটকাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি রানি মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য কর্মী মৌমাছি আছে। কর্মী মৌমাছিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে নিজ নিজ মৌচাকে এনে জমা করে।
আমজাদ হোসেন নামের অপর এক চাষি বলেন, ‘লিচুর মধু আমাদের জন্য বাড়তি উপার্জন। স্থানীয় চাষি ছাড়াও সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পাবনাসহ দেশের অনেক জেলা থেকেও মৌ চাষিরা আসেন মধু সংগ্রহে। ছোট-বড় নানা আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মধু সংগ্রহ করেন তারা।’
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লিচু উৎপাদনকারীরা জানান, কীটনাশকের চেয়ে মৌমাছির পরাগায়ন পদ্ধতি লিচুর উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। লিচুর আকৃতি বাড়ায় বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘চলতি বছর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। লিচুর মুকুলে মৌমাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর ফলন বাড়ে। লিচুর ফলন বাড়ার সাথে সাথে মধুর উৎপাদনও বাড়ছে। এতে আয়ের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।’
রাজশাহী বার্তা/admin