রাজশাহী বিভাগ করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে; মেডিকেলে উপচে পড়ছে করোনা রোগী
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। দিন দিন বাড়ছে সংক্রমণের হার। বাড়ছে মৃত্যু। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম-সর্বত্রই করোনার বিষাক্ত থাবা। রোগীর অব্যাহত চাপে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও ভর্তি হতে পারছে না আক্রান্ত অনেকে। শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জরুরি বিভাগ থেকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেলে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দুইজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং একজন রাজশাহীর বাসিন্দা।
অন্যদিকে রোগীর চাপ সামলাতে বৃহস্পতিবার থেকে আরও ৩২টি বেড বাড়ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে তিনটি করোনা ওয়ার্ড ও ১৫টি আইসিইউতে ১৮৪ জন কোভিড রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। আরও ৩২টি শয্যা যুক্ত হলে রাজশাহী মেডিকেলে করোনা বেডের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩২। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর ২৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিস্থিতি এককথায় ভয়ংকর।
তিনি আরও বলেন, এভাবে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে বিপুলসংখ্যক কোভিড রোগীর চিকিৎসা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো জরুরি। উপপরিচালক আরও জানান, দৈনিক গড়ে শতাধিক কোভিড রোগী যুক্ত হচ্ছেন আগের আক্রান্তদের সঙ্গে। অনেক রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতাল থেকে। কারণ গুরুতর আক্রান্তদেরই এখন ভর্তি করা হচ্ছে।
অরও জানা গেছে, ২৩ মে পরীক্ষার পর করোনা শনাক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারায়ণপুর ইউনিয়নের বান্নাপাড়া গ্রামের জিল্লার রহমানের স্ত্রী পারভিন বেগমের। ২৪ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। তবে রামেক হাসপাতাল তাকে ভর্তি না করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পারভিন বাড়িতেই অবস্থান করছেন। একই এলাকার টিকলিচর গ্রামের আব্দুল লতিফকেও ২৪ মে হাসপাতালে ভর্তি না নিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। লতিফও নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জানা গেছে, প্রতিদিন রাজশাহী ও চাঁপাইনাববগঞ্জে যে সংখ্যক মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে, তাদের কিছুসংখ্যক হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। আক্রান্তদের একটা বড় অংশকেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে গ্রাম শহর-সর্বত্রই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামেকের এক চিকিৎসক জানান, যাদের শারীরিক পরিস্থিতি ভালো বিবেচনায় বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে, তাদের চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো তথ্যই হাসপাতালে আসছে না। সিভিল সার্জন অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও আর তাদের খোঁজ রাখতে পারছেন না। নতুন নতুন রোগী নিয়েই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের দায়িত্ব দেওয়া দরকার। তারা অন্তত রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারবেন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারা প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে থাকছেন। তাদের অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু যারা শনাক্তের পরও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়িতে যাচ্ছেন তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখতে জেলায় সিভিল সার্জন ও উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তরা গ্রামে ফিরে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে বলে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাজশাহীতেও কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। রাজশাহীর পরিস্থিতিও বেশ খারাপ। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর লকডাউনের মধ্যেই দলে দলে লোকজন রাজশাহীতে এসে দূরপাল্লার পরিবহণ ও ট্রেনে চড়ে ঢাকায় চলে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, তারা ঈদের আগে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরেছিলেন। এখন কোচ ও ট্রেনে তারা ঢাকায় ফিরছেন। এতে করোনা সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী বার্তা/admin