করোনার মধ্যে কোরবানির হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে চিকিৎসকদের উদ্বেগ
কোরবানির জন্য পশুর হাট বসানোর সরকারি সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ।
রোববার (২৮ জুন) সংগঠনের ডক্টরস প্ল্যাটফর্ম ফর পিপলস হেলথের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতার স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
নেতারা বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব রক্ষার ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং মানিত সত্য হলো, যেসব দেশ এই পদক্ষেপ ঠিকভাবে কার্যকর করতে পেরেছে, সেসব দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছে। এই দেশগুলোতে সব উপাসনালয়সহ যেখানেই ঘনিষ্ঠ লোকসমাগম হয় সেখানেই সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবে মাত্র কয়েক দিন আগে কাফিউ উঠিয়ে প্রত্যেক ব্যক্তির নামাজ পড়তে নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এবার হজে শুধুমাত্র সৌদি আরবে কমবেশি এক হাজার জনকে হজের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মতো দেশে বিশেষ করে শহর-নগরে পশুর হাট বসলে কোনোভাবেই শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশুর হাট বসলে করোনা সংক্রমণের হারের সঙ্গে মৃত্যু হার ও গরিব মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
অর্থনীতিবিদদের গবেষণা বলছে, আগের গরিবের সঙ্গে করোনায় আরও প্রায় পৌন দুই কোটি গরিব লোক যোগ হবে, অর্থাৎ ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
তারা আরো বলেন, করোনা মহামারির এই সংকটকালে পশু কোরবানি পরিহার করে দুস্থদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা ও অর্থ সহায়তা করার বিকল্প বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে কেউ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে পোষা পশু অথবা অনলাইনে কিংবা সরাসরি গৃহস্থের কাছে থেকে পশু কিনে কোরবানি দেওয়ার ব্যবস্থা করলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হতে পারছে না, অনেকেই বিনাচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে বিনা অক্সিজেনে রোগীর করুন মৃত্যু ঘটছে। এরূপ পরিস্থিতিতে কাজ হারানো-উপার্জনহীন-গরিব-হতদরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে খাবার ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিয়ে আরও কঠোর ও কার্যকর লকডাউন ব্যবস্থার দরকার। তা না করে সরকার পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে ইজারাদারদের পকেট ভারি হবে বটে; কিন্তু করোনার সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নেবে ও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হবে। চিকিৎসক সমাজ অবিলম্বে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি করছে।