চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক তৃতীয়াংশ আমে ফ্রুট ব্যাগিং

সময়: 12:09 pm - July 3, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 280 বার

গত কয়েক বছরে আমে লোকসান গুনছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিরা। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বাড়ায় কীটনাশকসহ পরিচর্যা খরচ বেড়েছে আম চাষিদের। তাই শতভাগ নিরাপদ আম উৎপাদনে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। কিন্তু এ বছর করোনার প্রভাবে আম চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। মানসম্মত ব্যাগ না পাওয়ায় চাহিদা মতো আমে ব্যাগিং করতে পারেননি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা।  

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দুর্যোগ, ফরমালিনের অভিযোগে আম নষ্ট এবং নিরাপদ আম না উৎপাদনের অভিযোগে গত বছর আম রপ্তানিতে আকস্মিক ধাক্কা লাগার পর এ বছর আমের উৎপাদন কম হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আম সংশ্লিষ্টরা লাখবান হবেন বলে আশাবাদী ছিলেন।

এ বছর আমের দামও গতবছরের তুলনায় ভাল থাকায় কৃষকের চোখে মুখে আনন্দ থাকলেও করোনার কারণে সে হাসি কিছুটা ম্লান। বাইরের ক্রেতা এ বছর কম থাকায় জেলার আম বাজারগুলো জুনের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধনের মাধ্যমে চালু হলেও গতবছরের মত পুরোপুরি জমে ওঠেনি। তবে এ বছর অনলাইনে জমে উঠেছে আম কেনাবেচা। এ পদ্ধতিতে একশ ভাগ নিরাপদ আম উৎপাদন হওয়ার পরও গতবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের পাশাপাশি অন্য জেলার মানসম্মত আম নয় এমন আম রপ্তানির কারণে বিদেশে আম রপ্তানিতে ধাক্কা লাগে।

এরপরও পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের মাধ্যমে পরিচর্যার বিকল্প হিসেবে দেশের বাজারে এ পদ্ধতির আম চাহিদা থাকায় বিক্রি বাড়ে। কিন্তু জনপ্রিয় এ পদ্ধতির প্রধান উপকরণ ফ্রুট ব্যাগ সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাগের ৮০ ভাগ চীন থেকে আমদানি হওয়ায় মূলত এ বছর ব্যাগের সংকট দেখা দেয়। এতে করে অনেক আম চাষি নিরাপদ আম উৎপাদনে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার এ সুযোগে অনেকে ব্যাগের দাম বাড়িয়ে কৃষকদের সমস্যায় ফেলেছেন।

এ ব্যাপারে আম চাষি চাঁপাই ম্যাংগোর ব্যবস্থাপক শহিদুল হক হায়দারী জানান, ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম বিদেশে রপ্তানিযোগ্য ও শতভাগ নিরাপদ। কিন্তু তিনি এ বছর ব্যাগের অভাবে তার মোট বাগানের অর্ধেক আম ব্যাগিং করতে পেরেছেন।

আম চাষি মহি মিজান জানান, জেলায় ৫/৬টি কোম্পানির ব্যাগ পাওয়া গেলেও সবগুলো কোম্পানির ব্যাগ মান-সম্মত নয়। তারপরও এই মানহীন ব্যাগই এবার তিনি বাধ্য হয়ে কিনেছেন।

অন্যদিকে চককীর্ত্তির আমচাষি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস জানান, এ বছর প্রতি ব্যাগে এক টাকা বেশি দিয়ে তাকে কিনতে হয়েছে। এরপরও এক লাখ ব্যাগের জন্য অন্তত কয়েকটি জায়গায় তাকে ছুটোছুটি করতে হয়েছে।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল খান শামিম জানান, সঠিক মান পরীক্ষা ছাড়াই কয়েক বছর ধরে কেমিক্যালের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজার হাজার মণ আম রাস্তায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আম উৎপাদন করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল চাষিরা।

তিনি আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো আমেই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। শুধুমাত্র ছোট আমে পোকা মাকড় দমনের জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সার বিষ ও কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করা হয়। তবে ব্যাগিং পদ্ধতি চালুর পর আমের ওজন ১শ গ্রাম হলেই আমে ব্যাগ পড়ানো হয়। এতে করে কৃষক একদিকে অন্তত ১০ বার কীটনাশক প্রয়োগের হাত থেকে বাঁচে। অন্যদিকে উৎপাদিত আম আকর্ষণীয় দাগহীন ও পুরোপুরি কীটনাশকমুক্ত হয়। তবে এ বছর আমচাষিদের সে দুর্নাম ঘুচলেও ব্যাগ সংকটের কারণে অনেকেই এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম আমিনুজ্জামান বলেন, জেলার সিংহভাগ আম উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। ‘নিরাপদ আম উৎপাদনে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা ফ্রুট ব্যাগিং ব্যবহার করে নিরাপদ আম উৎপাদন করছে। তবে এ বছর ব্যাগের সংকট থাকায় আমে ব্যাগিং কম হয়েছে।

আম গবেষক ড. শরফ উদ্দিন জানান, এই ব্যাগ আমে ব্যবহারে ১৫ থেকে ৬২ বার বালাইনাশক ব্যবহার কমে যাওয়ায় কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের ব্যবহার কমবে ৭০ থেকে ৯০ ভাগ। এতে রোগ ও পোকার অস্তিত্ব থাকবে না। আমগুলো পাকার পরে পেড়ে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই সংরক্ষণ করা যাবে ৯ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত।

বিশেষ ধরনের কাগজের এই ব্যাগে দুটি আস্তরণ রয়েছে। বাইরের আস্তরণটি বাদামী রঙের, আর ভেতরেরটি কালো রঙের। এছাড়া যে কোনো জাতের আমের রঙ হবে হলুদ। ফলে আমের যে রঙের সমস্যা দেখা দিতো তা এই ব্যাগ ব্যবহারে দেখা দেবে না। আর এ কারণে জেলার অনেক আমচাষি এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিকটন। গতবছর শিবগঞ্জ উপজেলার ৯ কোটি আমসহ জেলায় ১০ কোটি আমে ব্যাগিং করা হলেও এ বছর ব্যাগ সংকটের কারণে মাত্র সাড়ে ৩ কোটি আমে ব্যাগিং করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬টি কোম্পানি ব্যাগ সরবরাহ করলেও ব্যাগগুলোর দাম আরও সাশ্রয়ী হওয়া উচিত। গতবছর আম রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলেও তিনি এ বছর বিদেশে আম রপ্তানির ব্যাপারে আশাবাদী। এ বছর ইতোমধ্যেই জার্মানী ও রোম বাংলাদেশের নিরাপদ আম নেওয়ার আশা প্রকাশ করেছে। এ দুই দেশের আমদানিকারকরা বিমানবন্দরে নিরাপদ আম পৌঁছে দিলে তারা আম কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।

ব্যাগের মান বিষয়ে তিনি জানান, এ বছর ব্যাগ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাড়লেও ব্যাগের মান খারাপ ও দাম বেশি হওয়ায় বিষয়টি আগামী বছর নজরদারীতে আনা হবে। মূলত ব্যাগগুলো চীন থেকে আমদানি নির্ভর হওয়ায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি তার।

সূত্র : বাংলা নিউজ ২৪

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর