রাজশাহীতে করোনা ঝুঁকিতে পথশিশুরা
করোনায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রাজশাহী সুবিধা বঞ্চিত ও পথশিশুরা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা তো দূরের কথা করোনার কারণে তাদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জুটছে না। অন্যান্য সময় তারা ঝুঁকি নিয়েই নগরীতে ময়লা আবর্জনা থেকে পলিথিন, পরিত্যাক্ত জিনিসপত্র কুড়িয়ে জীবন যাপন করলেও করোনার এই দু:সময়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছে। চরম নিরাপত্তাহীনতা, পুষ্টিহীনতা ও করোনায় শিশুরা পড়েছে বেকায়দায়। শুধু তাই নয়, নগরীর বস্তিতে বসবাস করা শিশুরাও রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। বস্তিবাসিদের মাঝে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। কারণ তাদের ঘরে নেই খাবার। মিলছে না প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। বস্তিবাসি বা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের খোঁজ নিচ্ছে না কোনো এনজিও বা সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে বস্তি ও শহরতলী এলাকায় বসবাস করা সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা করোনায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
জানা গেছে, শিশুদের নিয়ে রাজশাহীতে কাজ করছে কয়েকটি এনজিও। কাজ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলা বা নগরীতে সুবিধা বঞ্চিত, পথশিশুদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। এনজিওগুলো শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করার কথা বললেও তারা লোক দেখানো ছাড়া তাদের প্রকৃত কোনো কাজ দেখা যায় না। রাজশাহীতে শিশুদের নিয়ে এসিডি, লফস সহ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। কিন্তু এসব এনজিও বা সংস্থা পথশিশু বা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সংখ্যা নিরুপণ করতে পারেনি।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনা ভাইরাস মূলত সেই সব শিশুদের হচ্ছে যাদের বাবা, মা বা অত্মীয়, স্বজনরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া কোনো শিশু এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। রাজশাহীতেও এখন পর্যন্ত সুবিধা বঞ্চিত কোনো শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এমন তথ্যও নেই। কিন্তু শিশুরা যে ঝুঁকির মধ্যে নেই তা বলা যায় না। কারণ করোনার কারণে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা প্রথমত পুষ্টিহীনতায় ভুগতে শুরু করবে। যা শুরু হয়ে গেছে। আর পুষ্টিহীনতা থেকে ধীরে ধীরে তারা শারীরিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে যারা নগরীর ফুটপাতে কাগজ বা ময়লা অবর্জনা থেকে পরিত্যাক্ত বিভিন্ন দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে ও বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করে তাদের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আগে থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে না দেখলে রাজশাহীর এসব পথশিশু বা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের থেকে একটা ভয়বহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলেও অভিজ্ঞরা মন্তব্য করছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বেলাল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, করোনা মহারামারিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ। কারণ তারা খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় বা ফুটপাতে ঘুমিয়ে দিন পার করে। যার কারণে সচেতনতার বিষয়টি তাদের জানা নেই। বিশেষ করে আগে থেকে তাদের বিষয়টি না দেখলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাই একদিন বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সময় থাকতে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পুষ্টির বিষয়টি দেখা জরুরী।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, করোনার সময় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিষয়টি দেখার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। পাড়া-মহল্লা বা বস্তি এলাকাগুলো খোঁজ নিয়ে পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা করণীয় তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে রাজশাহীতে পথশিশু বা সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সঠিক হিসাব তিনি দিতে পারেননি।
copyright : padmatimes24
রাজশাহী বার্তা/admin