বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না এমপিরা
ফাজিল, কামিল মাদ্রাসাসহ সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে সংসদ সদস্যকে সভাপতি করা সংবিধানের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে এক রায়ে হাইকোর্ট অভিমত দিয়েছেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর আতরজান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের (কলেজ) গভর্নিং বডির সভাপতি পদে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্যের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায়ে দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নে সার্বক্ষণিক নিবেদিত থাকতে হয়। এ ছাড়া গভর্নিং বডির সভাপতির পদ সংসদ সদস্যদের মহান পদের সঙ্গে একেবারেই বিপরীত। সংসদ সদস্যগণ তার নির্বাচিত এলাকাসহ সমস্ত দেশের উন্নয়নে নিবেদিত, অপর দিকে গভর্নিং বডির সভাপতি শুধু ওই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিবেদিত।
এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ২৫ নভেম্বর ওই রায় দেন।
বৃহস্পতিবার ছয় পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী। হাইকোর্টের এই অভিমতের ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না এমপিরা।
আদালত বলেছেন, এটি কাচের মতো স্পষ্ট যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে জাতীয় সংসদের সদস্যগণ সভাপতি হিসেবে নিয়োগ/মনোনয়ন সংবিধানের মূল উদ্দেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর তথ্যমতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ সালের ১৬ জুন এক আদেশে স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারকে শ্যামনগর উপজেলার আতরজান মহিলা কলেজের সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে।
এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এম আফজালুল হক ২০১৭ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দেন।
রুলে এমপিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে মনোনয়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গেল ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা ও মাহফুজুর রহমান লিখন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, প্রত্যেক সাংসদ তার এলাকার কার্যত নির্বাচিত অভিভাবক, তিনি তার এলাকার অভিভাবক হিসেবে সব গভর্নিং বডিরও অভিভাবক। তিনি কখনোই গভর্নিং বডির সভাপতির পদ পাওয়ার চেষ্টা করবেন না।
‘একজন সংসদ সদস্যকে দেশের সব মানুষের কল্যাণের জন্য যেমনিভাবে ভালো ভালো আইন প্রণয়ন করতে হয়, তেমনিভাবে তার এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্যও সার্বক্ষণিকভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হয়। একজন সাংসদকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। অন্যদিকে গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পদমর্যাদা সাংসদের নিচের পদমর্যাদার।’
রায়ে আদালত বলেছেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত সাংসদ যদি গভর্নিং বডির সভাপতি হন, তাহলে কার্যত ওই গভর্নিং বডি একটি একক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বাধ্য। কারণ, নির্বাচিত সাংসদের ওপর কথা বলার সাহস গভর্নিং বডির কোনো সদস্যের থাকে না, এটাই বাস্তব সত্য।
রাজশাহী বার্তা/admin