চাঁপাইনবাবগঞ্জে জোরপূর্বক বিধবা নারীর বাড়ি উচ্ছেদ, দুই সন্তান নিয়ে নিরুপায় মা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নতুনহাট সিরাজ মন্ডলপাড়া মহল্লায় জোরপূর্বক এক অসহায় বিধবা নারীর বাড়ি উচ্ছেদ করার অভিযোগ উঠেছে ওই নারীর ভাসুরের (স্বামীর বড় ভাই) বিরুদ্ধে। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছে ৩ বছর আগে স্বামী হারা অসহায় নারী মোসা. জামিলা খাতুন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা ও সদর থানার নিষেধাজ্ঞা সত্বেও উচ্ছেদ করে সেখানেই তৈরি করা হচ্ছে নতুন বাড়ি। সোমবার দুপুরে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে। এলাকাবাসীর বক্তব্য ও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে জানা যায়, জমিলা খাতুনের স্বামী মৃত তোফিজুল ইসলামের বড় ভাই মো. ইব্রাহিম এ উচ্ছেদ ও নতুন বাড়ি নির্মাণ করছে। ভিটেমাটির ২ কাঠার মধ্যে কৌশলে বাবা-মা’র কাছে ছোট ভাইকে বঞ্চিত করে ১.৫ কাঠায় নিজের নামে লিখে নেয় ইব্রাহিম। ছোট ভাইয়ের বিধবা বউ জমিলাকে বাকি আধা কাঠা জমিও দিতে নারাজ ইব্রাহিম। এমনকি একটি বাড়ি থাকার পরেও তার চারপাশে পিলার তুলুছে নতুন বাড়ি নির্মানের জন্য। এছাড়া জোরপূর্বক ভেঙে দেয়া হচ্ছে মৃত ছোট ভায়ের স্ত্রী ও সন্তানদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। ইব্রাহিম এতে চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বিধবা জমিলা খাতুন বলেন, আমার ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। বাড়ি থাকার পরেও বাড়ির চারপাশে পিলার নির্মাণ করে নতুন বাড়ি তৈরি করছে। বাড়ির সব ইট খুলে নিচ্ছে ও সবকিছু ভেঙে ফেলছে। এই অবস্থায় দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো জানিনা।
অবশিষ্ট আধা কাঠা জমি নিয়ে থাকতে চাইলেও দিতে নারাজ জানিয়ে জমিলা আরো বলেন, এলাকাবাসীর দেয়া ভিক্ষা নিয়ে দিন যাপন করছি। বড় ছেলে জমি লিখে নিয়েছে জানতে পেরে আমার স্বামী হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। আমার শশুরের ভিটেমাটিতে ছোট ছেলের বউ, সন্তান হিসেবে কি কোন ভাগ বা অধিকার নাই আমাদের? এমন নির্যাতনের কি কোন বিচার নাই এদেশে? ৩ বছর আগে স্বামী হারিয়েছে, এখন বাড়িঘর সব হারালাম, আর কিছু হারানোর থাকলো না।
পাশের বাড়ির মো. সুজা উদ্দিন (৩০) জানান, মৃত তৌফিজুল ইসলাম ৬ বছর বিদেশে ছিলো। যা আয় করেছে তার সবই বাবা-মাকে যৌথ পরিবারে দিয়েছে। কিন্তু তোফিজুল মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী-সন্তানদের কেউ দেখে না। এখন বাড়ি থেকেও বের করে দিচ্ছে। জমিলা ও তার দুই ছেলেমেয়ে অসহায়, নিঃস্ব হয়ে গেল।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক মহিলা বলেন, অসহায় বিধবা মেয়েটির পক্ষে এই জুলুম-নির্যাতনের কেউ প্রতিবাদ করলে তার সাথেই ইব্রাহিমের পরিবারের লোকজন ঝগড়া-বিবাদ শুরু করে। তাই ভয়ে কেউ এর প্রতিবাদ করে না।
প্রতিবেশী নাজমুল হুদা বলেন, আমরা শুনেছি, বিদেশে থাকাকালীন সময়ে জমিলার স্বামী ৬ বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে। তাহলে সে মারা যাবার পর তার উপর এখন এতো অত্যাচার-অবিচার কেন?
মহল্লার মোড়ল মো. নজরুল ইসলাম জানান, এক ছেলেকে বঞ্চিত করে অন্য ছেলেকে জমি লিখে দেয়া ইব্রাহিমের বাবা ইয়াসিনের এটা উচিত হয়নি। প্রায় ৩ বছর আগে ছোট ছেলে মৃত তোফিজুল মারা গেলে জানাযার সময়েও তার বাবা ও ভাই জমি দেয়ার অঙ্গিকার করে, তবে তার ঠিক উল্টো কাজ করে। কয়েকবার এনিয়ে সালিসের সমাধানও মানেনি ইব্রাহিম। তার এমন অমানবিক কার্যক্রমের পেছনে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ইলিয়াস উদ্দিন ভোলা নামক ব্যক্তির যোগসাজশ রয়েছে। এখন ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলছে। বিধবা জমিলা ও এতিমদের কি হবে?
এবিষয়ে বক্তব্য নিতে মো. ইব্রাহিমের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার বাড়ির লোকজন-স্ত্রী ও মেয়েরা কথা বলতে নারাজ। ইব্রাহিমের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সাইদুর রহমান জানান, কয়েকবার সমাধানের লক্ষ্যে সালিসে বসেও আমরা ব্যর্থ হয়। মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা চেয়েছিলাম, আধা কাঠা আছে এবং আর কিছু যোগ দিয়ে পৌণে এক কাঠা দিয়ে অসহায় বিধবা নারী ও তার ছেলেমেয়েকে থাকার ব্যবস্থা করবো। কিন্তু ইব্রাহিম তা মানেনি। পৌরসভার নিকট বাড়ি করার অনুমতি চাইলে, তা দেয়া হয়নি। এমনকি ইব্রাহিম সদর থানায় অভিযোগ করলেও তারাও বাড়ি করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। তারপরেও জোরপূর্বক পৌরসভা ও সদর থানার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মৃত ছোট ভায়ের বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি নির্মাণ করছে ইব্রাহিম।
রাজশাহী বার্তা/admin