রাজশাহীর বাগমারার বিভিন্ন মাছ বাজারে বড় রুই-কাতলার কেজি ৫০ টাকা!
বুধবার দুপুরে উপজেলার ভবানীগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে নামমাত্র দামে বিভিন্ন মাছ বিক্রি করতে দেখা দেয়। দুই-তিন কেজি ওজনের রুই-কাতলা মিলছিল ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে, যা একদিন আগেও ২০০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছ চাষি ও মৎস্য বিভাগের ভাষ্য, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ও বিলের পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাপক হারে মাছ মরে গেছে। ফলে প্রচুর মাছ বাজারে চলে আসায় দামে ধস নামে। সব মিলিয়ে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছ চাষিরা।
জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ছিল ভ্যাপসা গরম। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এতে পুকুর ও বিলের মাছ মরে গেছে। তবে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা অনুসরণ করায় বুধবার দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছু দিন ধরেই ভ্যাপসা গরম পড়ছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকে হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে পুকুর ও খালবিলে। ফলে পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। বাগমারার বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষিরা বিষয়টি খেয়াল করেন, পানির ওপরে ব্যাপক হারে মাছ ভাসতে দেখে। কারণ, পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হলেই সাধারণত মাছ ওপরে উঠে আসে। বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণের চেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘খাবি খাওয়া’। এই প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন নিতে গিয়ে মাছ ক্লান্ত হয়ে পড়ে; অবস্থা বেশি খারাপ হলে মারাও যায়। বাগমারার পুকুরগুলোতে এমন ঘটনাই ঘটতে থাকে বুধবার। ব্যাপক হারে মাছ মরে পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে। অনেকে পানিতে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে অক্সিজেন বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় মৎস্য বিভাগ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হন। কিন্তু কোনোভাবেই রেহাই মেলেনি। মাছচাষিরা মরা ও আধমরা মাছ পুকুর থেকে তুলে স্থানীয় বাজার ও আড়তে আনতে শুরু করেন। প্রচুর মাছ উঠে যাওয়ায় দামে ধস নামে। তবু বুধবার সকালের দিকে এসব মাছ কেনাবেচা হয়েছে। পরে সেগুলো আর বিক্রিই হয়নি। ফলে অনেকে স্বজন ও পরিচিতজনদের মধ্যে মাছ বিতরণ শুরু করেন।
বাগমারায় একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান বলেন, তিনি ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৬টি পুকুর ও বিল পরিদর্শন করেছেন। মাছ রক্ষায় চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে পারলে এই সমস্যা আর থাকবে না বলে তিনি মনে করেন।