নাটোরের বড়াইগ্রামে কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে এসিড নিক্ষেপ
কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নাটোরের বড়াইগ্রামের গুনাইহাটি ঝষিপাড়া এলাকায় কিশোরীকে এসিড নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘরের জানালা দিয়ে সিরিঞ্জের ভেতর ঢুকিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে তা পুশ করে তারা। এতে কিশোরীর দুই পা, কোমরের কিছু অংশ ও ডান হাত ঝলসে যায়।
এসময় পাশে ঘুমিয়ে থাকা কিশোরীর দাদির বাম পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় গ্রাম প্রধানরা নিজেরাই উপযুক্ত বিচার করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে থানায় এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ওই কিশোরীর দাদি শেফালী রানী দাস বাদী হয়ে গুনাইহাটি এলাকার খোকা চন্দ্র দাসের ছেলে অনিল চন্দ্র দাস (৪৫) এবং একই এলাকার মৃত জফির আলীর ছেলে আইয়ুব আলীকে (২৩) অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, গুনাইহাটি ঝষিপাড়া এলাকার তাপস চন্দ্র দাসের মেয়ে স্মৃতি রানী দাস (১৩) এবং স্মৃতির পিসি (ফুপু) তথা তাপসের বোন উমা রানী দাসকে (২১) পাশের বাড়ির অনিল ও আইয়ুব বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো। এতে রাজী না হলে ওই দিন ভোররাতে ঘরের জানালা দিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে ঘুমন্ত স্মৃতি ও উমার উপর এসিড নিক্ষেপ করে তারা। কিন্তু স্মৃতির পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন তার দাদি রানী (৫৫)। ফলে তাদের দু’জনের শরীর এসিডে পুড়ে যায়।
এসময় স্মৃতির গায়ের কাপড়, দাদির শাড়ি, বিছানার চাদর, মশারি পুড়ে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। পরে ওই রাতেই তাদের দু’জনকে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ওসি বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশের বিশেষ টিম তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় ওই কিশোরী কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করা হবে। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
স্মৃতির পিসি (ফুপু) উমা জানান, ঘটনার রাতে তাদের চিৎকার শুনে দ্রুত উঠে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখতে পান অনিল ও আইয়ুব দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পরে তাদের ফেলে যাওয়া সিরিঞ্জটি বাইরে পাওয়া যায়। সকালে এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করতে রওনা দিলে স্থানীয় গ্রাম প্রধানরা নিজেরাই যথার্থ বিচার করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে থানায় যেতে বাধা দেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি গ্রাম প্রধানরা।
এ ঘটনা শুনে বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন এদিন সকালে এসিড দগ্ধ ওই কিশোরীর বাড়িতে খোঁজখবর নিতে যান। একই সঙ্গে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
কে এম জাকির হোসেন বলেন, এসিড নিক্ষেপের মতো ঘটনা স্থানীয়ভাবে মীমাংসার নামে যারা বাধা দিয়েছেন তারা সঠিক কাজটি করেননি। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রাজশাহী বার্তা/Durul Haque