পাবনার আটঘরিয়ায় শরবতের সঙ্গে বিষ খাইয়ে ছেলেকে হত্যা করে বাবা ও সৎ মা

সময়: 11:42 pm - October 6, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 204 বার

পাবনার আটঘরিয়ায় লেবুর শরবতের সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিড (কীটনাশক) খাইয়ে হত্যার অভিযোগে বাবা ও সৎ মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মৃত নাইস সরকার (২২) উপজেলার গোপালপুর তাঁতীপাড়া গ্রামের বাবুল সরকারের ছেলে। তবে প্রথমদিকে হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টা করলেও পুলিশের তাৎক্ষণিক বিচক্ষণতায় বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল বিষয়টি।

রোববার অভিযুক্ত বাবুল সরকার ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা খাতুনকে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুকান্ত সাহার আদালতে হাজির করলে ছেলে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় অভিযুক্ত বাবা ও সৎ মা। পরে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০১৬ সালে নাইসের মা চায়না খাতুনের অনুমতি না নিয়ে এবং তালাক না দিয়েই বাবুল সরকার মোমেনা খাতুনকে বিয়ে করে। এরপর প্রথম স্ত্রীকে নানাভাবে অত্যাচার শুরু করে। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি নাইস। এরপর থেকে তার মানসিক রোগ দেখা দেয়। এদিকে নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়ি চলে যান নাইসের মা চায়না।

গত বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করেই নাইস ও তার বাবা বাবুল সরকারের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় বাবাকে মারতে উদ্যত হয় নাইস। এ সময় নাইসকে বেধড়ক পেটান তার বাবা। এরপর সেই রাতেই নাইসকে খুব আদরও করেন বাবা বাবুল সরকার। পরে রাতের খাবার শেষে হজম যেন ভালো হয় এ কথা বলে বাবুল-মোমেনা দম্পতি পূর্বপরিকল্পনা মাফিক নাইট্রিক অ্যাসিড (কাপড় তৈরির সময় দিতে হয়) মিশ্রিত লেবুর শরবত খেতে দেয়া হয় তাকে।

কীটনাশক মিশ্রিত লেবুর শরবত খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শয়নকক্ষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নাইস। এরপর রাত শেষে ভোর হওয়ার পর বাবুল-মোমেনা দম্পতি স্থানীয়দের বলতে থাকেন ‘নাইস আত্মহত্যা করেছে’।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। স্থানীয়রা মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও মেনে নিতে পারেনি পুলিশ। নাইস সরকারের লাশ সুরতহাল করার পর তার শয়নকক্ষে ছিটানো ওষুধপত্র দেখে এবং বাবলু-মোমেনা দম্পতির অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে সন্দেহ হয় পুলিশের। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক করে নিয়ে আসা হয় ওই দম্পতিকে। আর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠানো হয় মর্গে।

পুলিশের টানা কয়েক ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে অবশেষে হত্যার কথা স্বীকার করে নাইসের বাবা বাবুল ও সৎ মা মোমেনা। এরপর নাইস সরকারের মামা আবদুল মজিদ বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আটঘরিয়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, নাইস সরকার নামের ওই যুবক মানসিক রোগী ছিল। মূলত বাবাকে (বাবুল) মারতে উদ্যত হওয়া এবং পূর্বের রাগ থেকেই হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় বাবুল-মোমেনা দম্পতি। প্রথমে তারা হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর অপচেষ্টাও করেছিল কিন্তু পুলিশের তদন্তে সেটা পারেনি।

তিনি আরও বলেন, থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর রোববার অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করার পর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বাবুল-মোমেনা দম্পতি।
রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর