প্রকৃতিতে এখন শরতের খেলা
প্রকৃতিতে এখন শরতের খেলা। শরৎ মানেই নীলাকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা। শরৎ মানে আকাশের গায়ে যেন মেঘ-তুলোর ওড়াউড়ি! শরৎ মানে ক্ষণে ক্ষণে আকাশের রূপ বদল, নীলাকাশে সুতো-নাটাইহীন সাদা ঘুড়ির মতো দিনভর উড়ে বেড়ানো মেঘের দল। শরৎ মানে নদী পাড়ে কাশফুলের মেলা, সোনারঙে রঙিন হয়ে ওঠা গোধূলিলগ্ন। শরৎ মানে বকুল, কামিনী, মাধবী ও শিউলির সুবাসে সুবাসিত চারপাশ।
‘শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।
আনন্দ গান গা রে হৃদয়, আনন্দ গান গা রে।’
পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের ভেলা, নীলে নীলাম্বরী, বর্ষাধোয়া কলাপাতা রং- এ রকম কত রঙে কত সাজেই না প্রকৃতি শরতে সেজে ওঠে। শরতে প্রকৃতি যখন এত রং এত সাজে সেজে ওঠে তখন আপনি-আমি কেন চুপটি মেরে বসে থাকব ঘরে! আর তাই শরতের প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে যেতে এ সময় এক টুকরো অবসরে সেজে উঠুন শরৎ সাজে। ঘুরে আসুন দিগন্তজোড়া মাঠ, নদীর পার কিংবা কাশফুলের বনে। ভাবছেন শরতের স্নিগ্ধতা সাজপোশাকে কীভাবে তুলে আনবেন?
শরৎ বলতেই আমরা বুঝি, নীল-সাদা-সবুজের ঐকতান। তাই এ সময় প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হতে মানানসই হবে এমন রঙের পোশাক। এর বাইরেও হলুদ, বেগুনি, ধূসর ও কমলার মিশেলের পোশাকও সৌন্দর্য ছড়াবে। এখন শরৎকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশনহাউস শরতের থিম নিয়ে নানা ধরনের পোশাক তৈরি করছে। সেসব পোশাকের মধ্যে কখনও শরৎ উঠে আসছে শাড়ির আঁচলে এক টুকরো নীল আকাশ হয়ে, তো কখনও শরতের কাশবন দোলা দিয়ে যাচ্ছে কামিজের প্রান্ত ছুঁয়ে। শাপলা, কাশফুল, নদী, নৌকা, পাখি, গোধূলি আকাশ ও নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা- শরতের প্রকৃতির এমন নানা রূপ এখন ধরা দিচ্ছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি ও পাঞ্জাবিসহ নানা ধরনের পোশাকে। এ ধরনের পোশাকের বেশিরভাগেই থাকছে হ্যান্ড পেইন্ট, স্ক্রিন পেইন্ট ও ব্রাশ পেইন্ট। এছাড়া মেশিন অ্যাম্ব্রয়ডারি, হাতের কাজ ও ডিজিটাল প্রিন্টও ভালো লাগবে। শরৎ সাজে বেছে নিতে পারেন এমন কোনো পোশাক।
নারীদের নানা ধরনের পোশাকের মধ্যে শরতের পোশাক হিসেবে শাড়ির আবেদন-ই অন্যরকম। তাই এ সময় শখের বশেও অনেকে শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। তবে শাড়িতে খুব ভারী কাজের চেয়ে হালকা কাজই বেশি ভালো লাগবে। শরতের পোশাকে সুতির কোনো বিকল্প নেই। পরতে পারেন অ্যান্ডি কটন, তাঁত ও ভয়েল প্রভৃতি। দাওয়াতের সাজে একটু গর্জিয়াস সিল্ক, জয়সিল্ক বা মসলিন মানাবে।
শরৎ মানেই শুভ্রতা। আর শুভ্রতা মানেই স্নিগ্ধতা। তাই এ সময় স্নিগ্ধ সাজের বিকল্প নেই। হালকা মেকআপের স্নিগ্ধ লুকে আপনি হয়ে উঠবেন অসাধারণ। তাই এ সময় দিনের সাজে বেইজ মেকআপটা কমপ্যাক্ট পাউডার দিয়েই সেরে নিন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিন আইশ্যাডো। শরৎ সাজে চোখে নীল আইশ্যাডো, মাশকারা ও আইলাইনার ভালো লাগবে। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নানা রঙের রঙিন কাজলের রেখাও এঁকে দিতে পারেন চোখের কোণে। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন কমলা, লাল ও মেজেন্টা রং।
রাতের পার্টি সাজের জন্য প্রথমে মুখ ভালো করে ধুয়ে এক টুকরো বরফ ঘষে নিন। এতে গরমে মুখ ঘামাবে না। এবার সামান্য লিকুইড ফাউন্ডেশন হাতে নিয়ে একটি বাফিং ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে দিন। চোখের নিচের কালো দাগের জন্য লাগাতে পারেন কনসিলার। সবশেষে ফিনিশিং পাউডার দিয়ে মেকআপ সেট করুন। এবার ডার্ক ব্রাউন কালার কন্টোরিং পাউডার দিয়ে দু’পাশের গাল, চিক ও কানের মাঝখান থেকে একটু নিচ পর্যন্ত টেনে কন্টোরিং করে নিন। হালকা করে ব্লাশন লাগিয়ে নিন। চোখে প্রথমে হালকা ব্রাউন কালার আইশ্যাডো দিন। এরপর আইলিডের ওপর গোল্ডেন আইশ্যাডো ব্লেন্ড করে নিন। সবশেষে হাইলাইটে সিমারি হোয়াইট কালার আইশ্যাডো দিন। চোখকে প্রমিনেন্ট করতে টেনে আইলাইনার ব্যবহার করুন। ডার্ক ব্রাউন আইব্রো শ্যাডো বেছে নিন। এবার গাঢ় করে মাশকারা দিন। সবশেষে পছন্দমতো লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। তবে লিপস্টিকের ক্ষেত্রে স্নিগ্ধতা আনতে চাইলে স্কিন কালার লিপলাইনারের সাহায্যে ঠোঁট ভালো করে এঁকে স্কিন কালার লিপস্টিক দিন। সবশেষে সামান্য সিমারি গোল্ডেন লিপগ্লস লাগিয়ে নিন। শরৎ সাজে চুলের বাঁধনে খোলা চুল সবচেয়ে বেশি মানায়। তবে গরমে চুল খোলা না রাখতে চাইলে সামনে টুইস্ট করে পেছনের চুলগুলো বেণি করে তারপর পেঁচিয়ে খোঁপা করতে পারেন। আর তাতে গুঁজে দিতে পারেন শরতের যে কোনো ফুল।
যেহেতু সাজটা স্নিগ্ধ তাই এ সময় পোশাকের সঙ্গে জমকালো গহনা না পরাই ভালো। কানে হালকা একটা দুল পরতে পারেন। সাদা বা সিলভার রঙের দুল ভালো লাগবে। আর হাতে ভারী ব্রেসলেট পরুন। একটু ভিন্নতা আনতে চাইলে নাকে নথ ও হাতে বাজুও পরতে পারেন।