পাবনায় করোনার সংক্রমণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি

সময়: 1:14 am - December 26, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 124 বার

দেশের অন্যতম পুরনো জেলা পাবনা। পাবনার এক সময়ের মহকুমা সিরাজগঞ্জে এবং পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলায় মেডিকেল কলেজ ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়েছে অনেক আগেই। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করার পর পাবনায় মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলেও এখনও হয়নি কলেজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এজন্য এমনিতেই স্বাস্থ্যসেবায় পাবনা রয়েছে অনেক পিছিয়ে। 

আর এখন এ করোনাকালেও পাবনার মানুষ সবচেয়ে স্পপর্শকাতর স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বগুড়া এবং রাজশাহীতে পিসিআর ল্যাব থাকলেও পাবনার মানুষের কপালে তা জোটেনি।

পিসিআর ল্যাব না থাকায় নমুনা পরীক্ষার জন্য শুরু থেকে পাঠানো হয় রাজশাহীতে, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং ঢাকায়। পাবনার বাইরে এ নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে কিট নেই বা ধারণক্ষমতা নেই-এমন অজুহাতে চরম ভোগান্তির শিকার হয় রোগীরা।

প্রথম ঢেউ পর্যন্ত এ ভোগান্তির শেষ না হতেই নভেম্বর থেকে শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, অনেক দেন-দরবার করে এখন নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে সিরাজগঞ্জ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে।

শুধু তাই নয়, একবার নমুনা দিয়ে রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় করোনার উপসর্গে থাকা এবং করোনা রোগীসহ তাদের স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এসব নিয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম অচলাবস্থা।

সাঁথিয়ার ধুলাউড়ি ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, তার ৯০ বছর বয়স্ক বাবা অসুস্থ হয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর ৯ ডিসেম্বর কোভিড পরীক্ষার জন্য তার নমুনা নেয়া হয়। এরপর রিপোর্ট পান ২২ ডিসেম্বর।

তিনি বলেন, পাবনায় করোনার নমুনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব থাকলে মানুষের এ ভোগান্তি থাকত না।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, পাবনায় অক্টোবর পর্যন্ত সংক্রমণের হার ছিল ৪ শতাংশ। কিন্তু নভেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর সংক্রমণের হার প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। অথচ জেলার কোথাও স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন বা স্বাস্থ্য বিভাগের এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নেই।

বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে পাবনার বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. ইফতেখার মাহমুদ বলেন, প্রথমত পাবনায় নমুনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপন করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত সবাইকে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় বাধ্য করতে হবে।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর বলেন, রাজশাহীতে ৪টি পিসিআর ল্যাব রয়েছে। প্রতি ল্যাবে এক শিফটে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু নমুনার এতই চাপ যে ডাবল শিফটে পরীক্ষা করেও তারা শেষ করতে পারছে না। এজন্যই মূলত করোনার প্রথমদিকে এ সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এখন সিরাজগঞ্জে নমুনা পাঠানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষার এ অচলাবস্থা কাটাতে দ্রুত পাবনায় পিসিআর ল্যাব স্থাপন জরুরি বলে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন জানান, পিসিআর ল্যাবের জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মহলে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

পাবনার জেলা প্রশাসক ও জেলা কোভিড-১৯ বিষয়ক কমিটির সভাপতি কবীর মাহমুদ জানান, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে পাবনা মেডিকেল কলেজে ২টি এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১টি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কথা রয়েছে। কিন্তু তা এখনও কেন যে হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।

এদিকে পাবনায় মেডিকেল কলেজ থাকলেও নেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালই সব চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেখানেও কোভিড আক্রান্তদের সুচিকিৎসা তো দূরের কথা, নন-কোভিড অন্য রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাও নামমাত্র চলছে। এসব কারণে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

পাবনায় অবিলম্বে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়ে পাবনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, পাবনাবাসীর দুর্ভাগ্য যে, পাবনার এক সময়ের মহুকুমা সিরাজগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবার জন্য যা আছে, তা পাবনাতে নেই।

অবিলম্বে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়ে পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, দেশের ১৭ জেলার এক জেলা পাবনা। বহু আন্দোলন সংগ্রাম এবং ইতিহাসের সাক্ষী এই জেলা। কিন্তু এই জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় এত পিছিয়ে পড়া অত্যন্ত দু:খজনক।

এদিকে করোনা পরীক্ষার অচলাবস্থার মধ্যে জেলায় গণপরিবহন, বাণিজ্য কেন্দ্র, হাট-বাজারসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। জনসাধারণ নিশ্চিন্তে অবাধে জনসমাগমে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তথ্যমতে, গত ১৬ এপ্রিল থেকে পাবনার চাটমোহরে একজন রোগীর করোনা শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে পাবনায় প্রথম করোনা দেখা দেয়।

২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাবনায় পুলিশ, চিকিৎসক, ব্যাংকার, সাংবাদিক ও স্বাস্থ্য কর্মীসহ মোট ১ হাজার ৬০০ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। এ পর্যন্ত করোনায় ১১ জন এবং করোনা উপসর্গসহ মোট ৩০ জন মারা গেছেন।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর