দুরন্ত বাংলাদেশ, হোয়াইটওয়াশ উইন্ডিজ
ব্যাট হাতে প্রথমে চ্যালেঞ্জিং স্কোর। বল হাতে একটু তাললয় কেটে গেলেও শেষটা ভালোমতোই রাঙালো বাংলাদেশ। সোমবার তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে তামিম বিগ্রেড। তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ট্রফি জিতল স্বাগতিক শিবির। অনুমিতভাবে হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে চার ফিফটিতে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বড় টার্গেটে খেলতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে সফরকারী শিবিরে বরাবরের মতো প্রথম আঘাত হানেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৩০ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে ফেরান এই কাটার মাস্টার।
দলীয় ৭ রানে প্রথম বিদায় নেন ওটলি। ৮ বলে ১ রান করা ক্যারিবীয় ওপেনার মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে। সুনীল অ্যামব্রিস ১৪ বলে ১৩ রান করে হন এলবিডব্লিউ।
মিডল অর্ডারে সবাই চেষ্টা করেছেন ক্রিজে টিকে থাকতে। যেখানে জয় নয়, দলটির লক্ষ্য ছিল ৫০ ওভার খেলা। তবে তারপরও ধারাবাহিক বিরতিতে উইকেট পড়েছে উইন্ডিজের। মুস্তাফিজের পর আক্রমণে সফল স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার সঙ্গে দুরন্ত ছন্দে ছিলেন অনেকদিন পর দলে ফেরা অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন।
এদিন অবশ্য সাকিব আল হাসান নিজের পুরো বোলিং কোটা পূরুণ করতে পারেননি। কুচকিতে টান পড়ে মাঠের বাইরে চলে যান ৩০তম ওভারে। উইকেটের দেখা পাননি প্রায় পাচ ওভার করেও।
ধীর লয়ে খেলছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাকিবের ওভার পূরুণ করতে বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন বোলার চেঞ্জ করেছেন একের পর এক। আটজন বোলার বল করেছেন ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হয় ১৭৭ রানে, ৪৪.২ ওভার। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন রভম্যান পাওয়েল। ৩১ রান করেন বনার।
অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ ১৭, রেইফার ২৭ রান করেন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সফল সাইফউদ্দিন। ৯ ওভারে ৫১ রানে তিনি নেন তিন উইকেট। মুস্তাফিজ ও মিরাজ দুটি, তাসকিন ও সৌম্য সরকার নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বাজেই। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন লিটন দাস। আর সেটা দলীয় ১ রানের মাথায়। ৪ বল খেলে জোশেফের বলে এলবিডব্লিউ হন বাংলাদেশ ওপেনার।
নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে করে দলের প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দলীয় ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন কাইল মায়ার্স। ৩০ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। সাকিবের তিন নম্বর জায়গায় ব্যাট করতে নেমে তিন ম্যাচেই শান্ত দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়।
চারে নামা সাকিব ব্যাট হাতে সামর্থের পরিচয় দিয়েছেন এদিন। অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটি গড়েন সাকিব। যদিও রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন সাকিব। ভাগ্য ভালো তার দেয়া ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি উইন্ডিজ বোলাররা। জীবন পাওয়া সাকিব এরপর থেকে ছিলেন বেশ সতর্ক।
এই জুটি দলকে নিয়ে যান ১৩১ রান পর্যন্ত। এরই মধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯তম ফিফটির দেখা পান তামিম। টানা তিন ম্যাচে রান পাওয়া তামিমের দিকে এদিন অনেকেই তাকিয়ে ছিলেন। দেখার বিষয় ছিল তিন অঙ্কের রানের দেখা পান কি না। তবে না। তিনি থেমে যান ব্যক্তিগত ৬৪ রানে। জোসেফের বলে হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৮০ বলের ইনিংসে তামিম হাকান তিনটি চার ও একটি ছক্কা।
তামিমের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন সাকিবের সঙ্গে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম। এই জুটিতে আসে ৪৮ রান। ফিফটি করার পরই বিদায় নেন সাকিব। ৮১ বলে ৫১ রানে তিনি রেইফারের বলে বোল্ড। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাকিবের এটি ৪৮তম ফিফটি। দেখেশুনে খেলা সাকিব তার ইনিংসে হাকিয়েছেন মাত্র তিনটি চার। নেই কোন ছক্কা।
সাকিবের বিদায়ের পর জমে যায় মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর জুটি। এই জুটি থেকে আসে ৭২ রান। দলীয় ২৫১ রানে এই জুটি ভাঙেন রেইফার। ৫৫ বলে ৬৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মুশফিকের এটি ২৯তম ফিফটি। মুশফিকের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দুটি ছক্কার মার।
দুই ম্যাচ পর প্রথম ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সৌম্য সরকার। সাতে নেমে করেছেন ঠিক সাত রান। এরপর হয়েছেন রান আউট। সিরিজে প্রথম মাঠে নেমে সাইফউদ্দিন ২ বলে থাকেন ৫ রানে অপরাজিত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৩ বলে থাকেন ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তার ইনিংসে ছিল সমান তিনটি করে চার ও ছক্কা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাহমুদউল্লাহর এটি ২২তম ফিফটি।
বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন জোশেফ ও রেইফার। একটি উইকেট পান কাইল মায়ার্স।