রাজশাহী ও নওগাঁর কৃষকের মাথায় হাত

সময়: 1:17 pm - February 8, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 108 বার

রাজশাহীতে ১০ দিন ধরে পানির দরে শীতের সবজি বিক্রি হচ্ছে। দাম না পেয়ে কৃষকরা টমেটো ফেলে দিচ্ছেন। গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রতিবছরই ব্যাপকভাবে টমেটো চাষ হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি কৃষকরা প্রতিকেজি ৫০ টাকা বিক্রি করলেও এখন ৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিক্রি করতে না পেরে অনেকে ফেলে দিচ্ছেন। এদিকে চাষিরা দাম না পেলেও সাধারণ ক্রেতাদের কিন্তু বেশি দামেই কিনে খেতে হচ্ছে।

 

গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকার চাষি আজমল হক সুমন বলেন, মৌসুমের শুরুতে মাত্র কয়েকদিন টমেটোর দাম ভালো পেয়েছি। বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি টমেটো ২০-২৫ টাকা দামে বিক্রি হলেও চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। চাষিরা আড়ৎদারদের কাছে কেজিপ্রতি মাত্র ৫ টাকা দামে বিক্রি করতে পারছেন। এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। কোনো কৃষকই এবার উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন না। ফলে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে।

 

রাজশাহীর মোহনপুর এবং পবা উপজেলায় ব্যাপকভাবে বাধা ও ফুলকপির চাষ হয়। মোহনপুর উপজেলার কপি চাষি আবদুল কাদের জানান, মৌগাছি বাজারে সবজির বড় মোকাম রয়েছে। এ মোকাম থেকে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করা হয়। মোকামে চাষিরা প্রতিপিস বাঁধা ও ফুলকপি ৪-৫ টাকা দামে বিক্রি করছেন। এত কম দামে এ এলাকার চাষিরা কখনো কপি বিক্রি করেননি। একইভাবে মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে। ফলে এ অঞ্চলের চাষিরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দুর্গাপুর উপজেলায় পেঁপে এবং শিম চাষ হয়। শিম চাষি শফিকুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলের শিম চাষিরা বর্তমানে আড়ৎদারদের কাছে কেজিপ্রতি শিম ৮-১০ টাকা দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ মাসখানেক আগেও ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করেছেন।

 

এছাড়া পেঁপে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭-৮ টাকা কেজি দরে। পেঁপেও মাসখানেক আগে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। বেগুনের দামও কম। রাজশাহীর সবজির বড় মোকাম মহানগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকায়। এ মোকামের আড়ৎদার সাহেব আলী বলেন, এখন সারা দেশেই সবজির দাম কম। এ কারণে রাজশাহীর আড়ৎদাররাও চাষিদের কাছে কম দামে সবজি কিনছেন। এছাড়া এ মৌসুমে সবজির আবাদ বেশি হয়েছে। ফলনও বেড়েছে। সব মিলিয়ে এবার সবজির দাম কম।

 

ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না নওগাঁর কৃষক : জেলার সদর উপজেলা, বদলগাছী, মহাদেবপুর ও মান্দা সবজির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এবার কৃষকরা সবজি উৎপাদন করে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। সদর উপজেলা বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দুপুর গ্রামের ময়নুল হক বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে লাউ ও ১০ কাঠা জমিতে শিমের আবাদ করেছি। চাষ, সার ও ওষুধ এবং মাচা করতে লাউয়ে ৭ হাজার টাকা এবং শিমে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শনিবার নওগাঁ কাঁচা বাজারে ৩০ পিস লাউ ও এক মণ শিম পাঠাই। প্রতিপিস লাউ ১০ এবং শিম ১০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। অথচ পাইকাররা বিক্রি করছেন লাউ ২০-২৫ টাকা এবং শিম ২৫-৩০ টাকা। বাজারে নিয়ে যাওয়ার পর দাম যেটাই হোক না সে দামেই আমাদের বিক্রি করতে হয়। কারণ সবজি পচনশীল।

 

সেটা তো বাড়ি ফেরত নিয়ে আসা যায় না।’ অনন্তপুর গ্রামে কৃষক মখলেছুর রহমান বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে কাতিশা শিম চাষে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রথম দিকে প্রতিকেজি ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন ৮-১২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ ধোপাইপুর গ্রামের কৃষক ময়নাল হোসেন বলেন, ‘বাজারে সব ধরনের সবজির আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। প্রথম দিকে যে বেগুন ৭০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, সে বেগুন এখন ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’ জানতে চাইলে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেলে পণ্যের দাম কমে যায়। সবজির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। বর্তমানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা (ফড়িয়া) দাম পাচ্ছেন। সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা যদি সরাসরি ঢাকায় সবজি সরবরাহ করেন তাহলে ন্যায্য দাম পাবেন।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর