দুই হাত নেই, পায়ে লিখে ছনিয়া দিচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা
জন্ম থেকেই ছনিয়া আক্তারের দুই হাত নেই। বাবা-মার অভাবের সংসারে বেড়ে উঠা। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ তার। সাহস আর ইচ্ছাশক্তি তার প্রতিবন্ধকতাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অদম্য মনোবলের কারণে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ছনিয়া।
এবছর শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছনিয়া এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তার মতে, ইচ্ছা আর মনোবল থাকলে শারীরিক এ প্রতিবন্ধকতা তার পথচলাকে রুখতে পারবে না।
বাবা মো. শাহাদাত হোসেন কারখনার শ্রমিক ও মা লিজা বেগম গৃহস্থালির কাজ করে সংসার চালান। পরিবার নিয়ে সাভার পৌরসভার ব্যাংক কলোনি মহল্লার একটি ভাড়া বাড়িতে তাদের বসবাস।
ছনিয়ার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে স্থানীয় ‘সাস’ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয় এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ যোগাতে থাকে। সেই থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছনিয়া জীবনে পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হবে এ প্রত্যাশায় উৎসাহিত হয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিন ভাই বোনের মধ্যে ছনিয়া সবার বড়। ছোট ভাই রাকিব স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে এবং ছোট বোন তানিয়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
ছনিয়ার বাবা শাহাদাত হোসেন জানান, পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী হলেও ২০ বছর ধরে সাভারে বসবাস করছেন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি সোনিয়ার আগ্রহ দেখে আমরা সবসময়ই তাকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছি।
সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন পিটার গমেজ বলেন, ছনিয়া একজন মেধাবী ছাত্রী। দুই হাত না থাকলেও সে দমে যায়নি। শারিরিক প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেধার প্রতিযোগিতায় নেমে লেখাপড়া করছে।
বেসরকারি সংস্থা ‘সাস’ এর নির্বাহী পরিচালক হামিদা বেগম জানান, প্রতিবন্ধী ও অসহায় এ শিক্ষার্থী যাতে নির্বিঘ্নে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য তাকে সংস্থার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী সোনিয়া আক্তার জানায়, পড়াশোনা করে সে মানুষের মতো মানুষ হতে চায়। এ বোধ আর মনোবল থেকেই সকল বাঁধার গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বসেছে সে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে সে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে আগ্রহী।
রাজশাহী বার্তা/admin