রাজশাহীতে ব্ল্যাকমেইল চক্রের নারীসহ চার সদস্য আটক
রাজশাহী মহানগরীতে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় চক্রের নারীসহ ৪ জনকে আটক করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে হ্যান্ডকাপ, ভুয়া পিস্তল, ডলার, কটি ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
২৫ তারিখে ভুক্তভোগী বকুল কুমার সরকার (৩৩), ম্যানেজার, অগ্রণী ব্যাংক, চারঘাট শাখা, রাজশাহী এর সহকর্মী নিপেন্দ্র নাথ সরকার এর বিকাশের টাকা দেয়ার বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তিনি ডিবি অফিসে আসেন এবং তার দেয়া মৌখিক তথ্য মতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন হড়গ্রাম কোর্টবাজার চৌরাস্তা সংলগ্ন প্রতারকদের ভাড়াবাসার সামনের রাস্তা হতে ভূক্তভোগীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
ভূক্তভোগীর দেয়া তথ্য ধরে পুলিশের একটি বিশেষ দল প্রতারকদের নেওয়া ভাড়াবাসার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে প্রতারকরা প্রায় এক মাস যাবত বাসা ভাড়া নিলেও নিয়মিত বাসায় থাকে না। দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মক
র্তাদের নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে ভূয়া ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়ে অপহরণ, প্রাণ নাশের হুমকী এবং চাঁদা আদায় চক্রের মূলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে।
আটকৃতরা হলো মনোয়ার হোসেন(৩৬), (মুল পরিকল্পনাকারী এবং সাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিপাহী) থানা-চারঘাট, জেলা-রাজশাহী, তুহিন সরকার (৩২), থানা-রাংগাবালী, জেলা-পটুয়াখালী, সেলিনা আক্তার ওরফে সাথী (২৫), থানা-চারঘাট, খাইরুল ইসলাম (২৬), থানা-চারঘাট, উভয় জেলা-রাজশাহী। গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মুল পরিকল্পনাকারী মনোয়ার হোসেন অপর প্রতারক চক্রের সদস্য সেলিনা আক্তার ওরফে সাথীকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে গত ছাব্বিশ ফেব্রুয়ারী কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন রিয়াজুল ইসলাম (৬৭), এর হোল্ডিং নং-৪৯৫ হড়গ্রাম নতুনপাড়ার বাসার তৃতীয় তলা ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে সেলিনা আক্তার ওরফে সাথী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূক্তভোগী বকুল কুমার সরকার (৪০)কে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে গত পচিশ ফেব্রুয়ারী ভাড়া বাসায় কৌশলে ডেকে নেয় এবং পার্শ্বের কক্ষে লুকিয়ে থাকা অপর উপরোক্ত প্রতারক চক্রের সদস্যদের সংকেত দিয়ে রুমে ঢুকিয়ে নেয়। ঐ সময় প্রতারক মনোয়ার ডিবি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে, প্রতারক তুহিন সাংবাদিক এবং প্রতারক খাইরুল ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে ভূক্তভোগীকে গ্রেফতারের হুমকী দেয়। প্রতারক খাইরুল ভূক্তভোগীর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয় এবং প্রতারক মনোয়ার ভূক্তভোগীর পিছনে নকল পিস্তল ঠেকিয়ে বলে
যে, তোর কাছে যা আছে দিয়ে দে নইলে গ্রেফতার করে মেয়েসহ কোর্টে চালান করে দিব। অপর পক্ষে প্রতারক তুহিন ভূক্তভোগীকে টাকা না দিলে মেয়েসহ তার ছবি সংবাদ পত্রে প্রকাশ করে দিবে বলে হুমকী দেয় এবং মারধর করে। পরিস্থিতি দৃষ্টে ভূক্তভোগী জীবন বাঁচাতে তার পকেটে থাকা নগদ ছাব্বিশ হাজার টাকা মুক্তিপন ও চাঁদা হিসাবে প্রতারক চক্রের সদস্যদের দিয়ে দেয়। এছাড়াও ভূক্তভোগীর নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে তার পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের নিকট হতে বিকাশের মাধ্যমে মোট চুয়াল্লিশ হাজার টাকা এনে মুক্তিপন ও চাঁদা হিসাবে দিয়ে দেয়। বিকাশ লেনদেনের তথ্য সূত্র ধরে মহানগরের বিভিন্ন এলাকা হতে ডিবি পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রতারকদের আটক করে।
গ্রেফতারকৃতদের নিকট হতে একটি নকল পিস্তল, দুইটি হ্যান্ডকাফ, তিনটি ভূয়া ডিবি জ্যাকেট, চারটি মোবাইল ছয়টি, পাঁচটি সিমকার্ড ছয়টি ডলারের নকল নোট। সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত ছবি, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়।