পাপিয়াকে যুবলীগ নেত্রীর পদ দেন অপু উকিল
গ্রেফতারের পর নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার নানা অপকর্মের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বের হচ্ছে।
এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে পাপিয়ার অনুপ্রবেশ ও পদ পাওয়ার বিষয়ে। পাপিয়া ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ২০১৪ সালে এই পদ পান তিনি।
এসব প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, পাপিয়ার মতো নেতাকর্মীদের দল থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হবে। এরপরও প্রশ্ন থেকেই যায় যে, কিভাবে যুবলীগের এতো বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন পাপিয়া। র্যাবের হাতে আটকের আগে তার মাত্রাতিরিক্ত অপকর্ম বিষয়ে জানতে না পারা দলীয় ব্যর্থতা কি না।
এসব প্রশ্ন রেখেই নরসিংদীর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শামীমা নূর পাপিয়া নরসিংদীতে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন?
জবাবে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন বলেন, ‘পাপিয়াকে কলেজে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে কোনোদিন দেখিনি। তাকে আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম ও দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতই দেখেছি।’
আহসানুল ইসলাম রিমনের সঙ্গে সহমত জানিয়ে ছাত্রলীগের আরেক সাবেক নেতা বলেন, ‘দলীয় কর্মসূচিতে পাপিয়াকে না পাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। তিনি সব সময় ছেলেদের সঙ্গে প্রেমের ঝামেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। তাকে নিয়ে মাসে দুটি করে বিচার করতে হয়েছে। তিনি কোনোদিন ছাত্র রাজনীতি করেননি।’
তাহলে কোন মন্ত্রে আর কার বা কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হঠাৎ করেই যুব মহিলা লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে গিয়েছিলেন পাপিয়া ওরফে পিউ?
এমন প্রশ্নের জবাবে নরসিংদী জেলা যুবলীগের নেতারা জানিয়েছেন, ‘তাকে পদ দেয়ার ক্ষেত্রে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সমর্থন ছিল। অনেকের বিরোধিতার মুখে ঢাকায় গিয়ে পাপিয়াকে পদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করেন অপু উকিল।’
তারা জানান, ‘২০১৪ সালে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সম্মেলন করলেও নরসিংদীতে কমিটি দিতে পারেননি। পরে ঢাকায় ফিরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নরসিংদী জেলা কমিটি ঘোষণা করেন, তাতে পাপিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।’
এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হীরু এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৪ সালে সম্মেলনের মাঠে পাপিয়ার নাম প্রস্তাব করলে আমিসহ সংগঠনের আরো অনেকে বিরোধিতা করি। আমাদের বিরোধিতার মুখে নাজমা ও অপু নরসিংদীতে কমিটি দিতে না পেরে ঢাকায় গিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি দেয়। এতো বিরোধিতার পরও পাপিয়াকে কেন পদ দেয়া হলো এমন প্রশ্নে সে সময় অপু জানিয়েছিলেন, ওপরের চাপে পড়ে পাপিয়াকে পদ দিতে বাধ্য হয়েছেন।’
নজরুল ইসলাম হীরুর এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অপু উকিল ওই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নরসিংদী আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই কমিটি দেয়া হয়েছিল। তাদের সুপারিশেই পাপিয়া পদ পেয়েছে। ’
পাপিয়াকে পদ দিতে কারা তদ্বির করেছিল প্রশ্নে অপু উকিল যে দুজনের নাম বলেন তাদের একজন মৃত ও অন্যজন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী।
এ বিষয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আকতার বলেন, ‘সে সময় নরসিংদীর একটি পক্ষ পাপিয়ার বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করায় আমি পাপিয়াকে পদ দেয়ার পক্ষে ছিলাম না। তারপরও শেষ পর্যন্ত চাপে পড়ে দিতে হয়েছে।’
কাদের চাপে পড়ে পাপিয়াকে পদ দেয়া হয়েছিল প্রশ্নে নাজমা আকতার, ‘পাপিয়া কাদের সঙ্গে উঠাবসা করে, তাদের খুঁজে বের করলেই সব পেয়ে যাবেন। আমাদের অনেকের সঙ্গে পাপিয়ার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, তাদের বের করুন।
রাজশাহী বার্তা/admin