সিরাজগঞ্জে একযুগ ধরে শিকলবন্দি আলামিনের জীবন!
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের শান্তিপুর মহল্লার হোটেল শ্রমিক শহিদুল ইসলাম ও গৃহকর্মী রেখা খাতুনের জন্মগত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলে আলামিন হোসেন (১৭) প্রায় ১ যুগ ধরে শিকলবন্দি জীবনযাপন করছে।
অথচ তার ভাগ্যে এখনও জোটেনি প্রতিবন্ধী কার্ড। অপরদিকে অর্থাভাবে জুটছে না সুচিকিৎসা।
এ বিষয়ে হোটেল শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, যে সময়ে তার বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলতে যাওয়ার কথা; সেই বয়সে তাকে শিকলবন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে। পিতা হয়ে এটা সহ্য করা খুবই কঠিন।
তিনি বলেন, আমি হতদরিদ্র মানুষ, দিন আনি দিন খাই। তাই ছেলের উন্নত চিকিৎসা তো দূরে থাক ভালোমতো দুবেলা খেতেই দিতে পারি না।
তিনি জানান, জন্মের দুই বছর পর টের পাওয়া গেল সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে চোখে চোখে রাখা সম্ভব হলেও এরপর থেকে তা সম্ভব হয় না। সবার অজান্তে বাড়ি থেকে সে বাইরে চলে গিয়ে হারিয়ে যায়।
অনেক সময় বাড়ির পাশের করতোয়া নদীতে ঝাঁপ দেয়। তাই বাধ্য হয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী ওকে গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে কাজে যাই সন্ধ্যায় ফিরি। সারা দিন সে অভুক্ত অবস্থায় শিকলবন্দি থাকে। মূলত হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে সারা দিন তাকে এভাবে শিকলবন্দি করে রাখতে হয়। এ অবস্থায় রোদ-বৃষ্টি তার শরীরের ওপর দিয়েই বয়ে যায়। ৫ বছর বয়স থেকে এভাবেই চলছে তার জীবন।
তিনি বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছি। নিজের কোনো বাড়ি নেই, অন্যের জমি মাসে ৫০০ টাকা ভাড়ায় ঝুঁপড়িঘর তুলে বাস করছি।
এ বিষয়ে তার মা রেখা খাতুন জানান, একমাত্র সন্তানকে এভাবে শিকলবন্দি করে রাখতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে এভাবে তাকে রেখে যেতে হয়।
তিনি বলেন, ছেলের একটা প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য অনেকের কাছে ঘুরেছি। এখন আর চেষ্টা করি না। হাল ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মাঝে কিছু দিন চাইল্ড সাইড কেয়ার ফাউন্ডেশন থেকে মাসিক ৩০০ টাকা করে দিত। এ দিয়ে ওর ওষুধ কেনা হতো। অফিসার বদলে যাওয়ায় সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর পৌরসভার ৪নং কাউন্সিলর লিয়াকত আলী জানান, কার্ড পেতে কিছু সরকারি নিয়ম রয়েছে। যা পালনের জন্য ওই প্রতিবন্ধীর মা-বাবাকে বলা হলেও তারা এখনও তা করতে না পারায় তাকে কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। এগুলো পূরণ হলেই কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, খোঁজ নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ওর সুচিকিৎসা ও প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
রাজশাহী বার্তা/admin