সুপারিশের দুইবছরেও মহানন্দা সেতু টোলমুক্ত হয়নি

সময়: 1:06 pm - April 7, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 666 বার

আনু মোস্তফা : দুই বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা সেতুকে টোলমুক্ত করার প্রস্তাব জেলা প্রশাসন গ্রহণ করে সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও তা অজ্ঞাত কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। সেতুটি প্রায় ২৮ বছর আগে চালু হয়। এই সময়ে সেতুতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা টোল উঠেছে।

 

সেতুটি টোলমুক্ত না হওয়ায় শুধু যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে না, বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা এবং জনগণকে যাতায়াতে উচ্চহারে টোল দিতে গিয়ে নিদারুণ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে কম টাকায় ইজারা নিয়ে উচ্চহারে টোল আদায় করে আসছে। ইজারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। উচ্চহারে টোল উত্তোলনের কারণে জন-অসন্তোষও রয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সেতুটির অফিসিয়াল নাম বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি ৪৪৮ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ মহানন্দা সেতুকে টোলমুক্তকরণের সিদ্ধান্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সমন্বয় কমিটির সভায়। একই বছরের ৬ মার্চ জেলা প্রশাসন সেতুটিকে টোলমুক্ত ঘোষণা করতে সেতু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দেন।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম তাজকির-উজ-জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জেলা প্রশাসন সুপারিশ দিয়েছে সেতুটি টোলমুক্ত ঘোষণা করতে। কিন্তু বিষয়টি সেতু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা পরিস্থিতি তুলে ধরে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।

 

এদিকে জেলা প্রশাসনের চিঠিতে বলা হয়, মহানন্দ সেতুর উত্তরপ্রান্তে সদর উপজেলার ৪টি ও শিবগঞ্জ উপজেলার ১৬টি এবং ভোলাহাট উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ছাড়াও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর অবস্থিত। সেতুটির ওপর দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা, শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদি কাজে যাতায়াত করতে হয়। সেতুটির ওপর দিয়ে দৈনিক বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু প্রতিবার সেতু পারাপারে ও উচ্চহারে টোল দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও কৃষি কাজে নিয়োজিত ও কৃষি পণ্য পারাপারে লোকজন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে কৃষি শ্রমিকরা সেতু পারাপারে টোল দিতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছেন। এসব কারণে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

 

প্রশাসনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেতু ইজারাদারের লোকেরা সড়কের ওপর যানবাহন সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে টোল আদায়ের সময় সেতুর উপর যানজটের সৃষ্টি হয়। টোল আদায়ের সময় ইজারাদারের লোকেরা লোকজনসহ যানবাহনের চালকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। ক্ষেত্র বিশেষে মারধর করে। এর ফলে সৃষ্টি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার। ইজারাদারের লোকদের এমন বৈরি ও মারমুখী আচরণের দায় পরোক্ষভাবে এসে পড়ে প্রশাসনের ওপর।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর পরবর্তী তিন বছর তথা ৯৬৬ দিনের জন্য ১৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার  সেতুটির ইজারা পান জনৈক মো. হাম্মাদ আলী। আগামী ৩০ জুন ইজারার মেয়াদ শেষ হবে। ভুক্তভোগী বিশাল জনগোষ্ঠীসহ স্থানীয় প্রশাসনও চায় যে সেতুটি টোলমুক্ত ঘোষণা হোক। ইজারা চুক্তির ২৬ নং শর্তেও বলা আছে এক মাসের নোটিশে যুক্তিসঙ্গত কারণে ইজারা চুক্তি বাতিল করা যাবে।

 

সওজের প্রধান প্রকৌশলীকেও এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী তিন বছরের জন্য আবারো ইজারা দরপত্র জারি করেছে সওজের চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।

সূত্র: যুগান্তর

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর