স্বপ্নের শহরে রূপ নিচ্ছে রাজশাহী

সময়: 4:55 pm - March 2, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 131 বার

আম, সিল্ক ও শিক্ষানগরীখ্যাত পদ্মা বিধৌত শহর এখন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিকল্পনায় অনেকটাই স্বপ্নের শহরে রূপ নিয়েছে। পরিবেশের দিক থেকে এখন বসবাসযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য রাজশাহী নগরী।

ইতোমধ্যে বেশিরভাগ প্রধান সড়কগুলো চার লেনে উন্নীত হয়েছে। সড়কের পাশের ফুটপাথগুলো কংক্রিট দিয়ে ঘেরা ও দৃষ্টিননন্দন। চওড়া ফুটপাথ দিয়ে সহজেই পথ চলাচল করেন নগরবাসী। প্রতিটি সড়ক ও ফুটপাথ ঝকঝকে তকতকে। পাড়া-মহল্লাসহ কোথাও ময়লা-আবর্জনার এতটুকু স্তুপ জমা নেই। বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ কমানোর বিশ্ব খেতাবও পেয়েছে রাজশাহী।

ফুটপাথ ও সড়ক বিভাজনে লাগানো রয়েছে নানা প্রজাতির বাহারি গাছপালা। রাতের নগরীও সৌন্দর্যময়। রাতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে জ্বালানো হয় লাল নীল ও হলুদ রঙের বাতি। শুধু তাই না, নগরীর পদ্মার পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন লালন শাহ মঞ্চ, সিমলা পার্ক, আই-বাঁধ, টি-বাঁধ, বড়কুঠিসহ দৃষ্টিনন্দন নানা স্থাপত্য। শহর রক্ষা বাঁধের দুই পাশের গাছপালা তৈরি করেছে সবুজাচ্ছাদিত নগরী।

নগরের মোড়গুলোতেও প্রাচীন স্থাপত্যের সঙ্গে মিলিয়ে নামকরণ করা হয়েছে ঐতিহ্য চত্বর, একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে শহীদ স্মৃতি অম্লান চত্বর, ফলের রাজা আমের সঙ্গে মিলিয়ে আমচত্বর, জাতীয় চার নেতার অনতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর, জাতীয় হকি খেলোয়াড়ের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মিন্টু চত্বর অন্যতম।

নগরজুড়েই স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাণী হেমন্ত কুমারী স্থাপিত সুপেয় পানি পানের তৎকালীন ব্যবস্থা- ঢোপকল। দেশের একমাত্র গবেষণা জাদুঘর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। যেখানে কয়েকশ বছর আগের প্রাচীন পুরাকীর্তি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এইজন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে বলা হয় গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও এডুকেশন সিটি। যে কেউ রাজশাহী নগরীতে এলে এর পরিচ্ছন্নতা এবং দৃষ্টিনন্দন চওড়া সড়ক ও ফুটপাত দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। আর এই ফাল্গুনে কেউ রাজশাহীতে আসলে সহজের আমের মুকুলের সুবাসিক গন্ধে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এক হাজার ৩৭২ জন শ্রমিক কাজ করেন। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ৩৫০টি ভ্যানের সাহায্যে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিটি বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এরপর সংগ্রহকৃত বর্জ্য নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্থাপিত সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে জমা করা হয়। সেখান থেকে রাতেই বর্জ্যগুলো ট্রাকে করে নগরীর উপকণ্ঠে সিটি হাট সংলগ্ন এলাকার পাশে ড্রাম্পিং করা হয়।

এছাড়া রাত ৯টা থেকে নগরীর প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার সড়কও ঝাড়ুদারের মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সিটি কর্পোরেশন থেকে রাখা হয়েছে ডাস্টবিন। বিভিন্ন বিপণী-বিতানগুলোতেও দেয়া হয়েছে ময়লা-আর্বজনা রাখার ডাস্টবিন।

রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন বলেন, নগরীতে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য মোট ২৮টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন ছাড়াও আরও তিনটি অত্যাধুনিক সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন রয়েছে। এই অত্যাধুনিক স্টেশনগুলোতে বর্জ্য সরাসরি লিফটের মাধ্যমে ভ্যান থেকে ট্রাকে ফেলা হয়। ফলে এইসব স্টেশনগুলোতে বর্জ্য জমা রাখার দরকার হয় না। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডেই অত্যাধুনিক এসব সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, নগরীর প্রতিটি ড্রেনেই মশকের লার্ভাসাইট নিধনে নিয়মিত ওষুধ ছিটায়। ফলে সারাদেশে যখন ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে তখন রাজশাহীতে কোন ডেঙ্গু জন্মাতে পারেনি। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ১৯৯১-’৯২ সাল থেকে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচীর আওতায় রাজশাহীতে এ পর্যন্ত এক লাখ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে জিরো সয়েল প্রকল্প হাতে নেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর মাটিকে গাছপালা ও ঘাস দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। এমনকি সড়কের পাশ থেকে ড্রেন পর্যন্ত যে ফাঁক থাকে তা-ও কংক্রিট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। যাতে বাতাসে ধুলিকণা না মেশে।

নগরীর সড়ক বিভাজক ও ফুটপাথে অসংখ্য বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। গতবছর এই প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক ও ফুটপাতে মোট ১৪ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। যার মধ্যে সাত হাজারই বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে সড়ক বিভাজকে। নগরীতে সিএ্যান্ডবি মোড় থেকে ভেড়িপাড়া মোড় পর্যন্ত ২০০ শিউলি ফুল গাছ, সিএ্যান্ডবি মোড় থেকে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর পর্যন্ত ২০০ ছাতিম গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বাহারি ফুলের গাছও লাগানো হয়েছে।

এদিকে, নগর ভবনসহ নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় লাল, নীল, বেগুনী রঙের বর্ণিল আলোকসজ্জায় রাঙিয়ে তোলা হয় রাতের রাজশাহী। রাতের রাজশাহীকে তখন মনে হয় অপূর্ব মায়াপুরী। এছাড়া সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে ১৬টি হাই মাস্ট পোল লাইটিং। যার আলোকছটায় মোড়গুলো দিনের মতো আলোকিত হওয়ার পাশাপাশি এক কিলোমিটার দূর থেকেও তার আলো দেখতে পাওয়া যায়।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, রাজশাহী সিটির মধ্যে চারলেন সড়ক রয়েছে ৫০ কিলোমিটার। প্রধান ড্রেনগুলো ১৬ থেকে ২৫ ফিট চওড়া। ফলে নগরীতে বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতা তৈরি হয় না। তারপরও জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও ১৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যাতে সহজেই পানি নিষ্কাশন করতে পারে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বর্তমানে ৫টি প্রকল্প চলমান রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ১৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক হতে মোহনপুর রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ, ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন এবং ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সড়ক ও নর্দমা সমূহের উন্নয়ন।

প্রধান প্রকৌশলী বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সম্প্রতি ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরীর মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। এছাড়া নগরীতে ৬টি ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৫০টি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নির্মাণ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থানে ১৭টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, ৩০টি গণশৌচাগার নির্মাণসহ গোরস্তান ও জলাশয়ের ধারে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ প্রায় ৬৯টি ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। আশরাফুল হক বলেন, আমরা নগরীর আইল্যান্ড ও ফুটপাথে এমনভাবে বৃক্ষরোপণ করেছি যাতে নগরবাসী রাস্তাঘাটে এলে বৃক্ষের ছায়া ও সুবাস দুটোই পায়। এর বাইরে লাল, নীল, হলুদ রঙের নানা প্রজাতির মাতৃছায়া বৃক্ষরোপণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জিরোসয়েল প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরোপণ, রাস্তার পাশের ফুটপাথ কংক্রিট দিয়ে ঘিরে দেয়া, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার বহুল ব্যবহার, ডিজেল চালিত যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি ইত্যাদি কারণে রাজশাহী বাতাসে বায়ুদূষণ কমানো এবং সবুজ নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় রাজশাহীর সুনাম দেশজুড়ে।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর