রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কেনাকাটার ধুম
রাজশাহীতে কার্যত কোনো ‘লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ নেই। সড়কে যানবাহনের জটলা, বাজারে মানুষের ঢল আর ঈদ মার্কেটে জনস্রোত দেখে বোঝার উপায় নেই যে, শহরে কোনো বিধিনিষেধ জারি আছে।
শুক্রবার (৭ মে) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজশাহীর মার্কেট শাপিংমল এবং বিপণিবিতানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঈদের কেনাকাটার ধুম পড়েছে। সকাল থেকে মানুষ যেন ঊর্ধ্বশ্বাসে মার্কেটের দিকে ছুটেছেন। দুপুরে জুমার নামাজের পর অনেক সড়কে দেখা দিয়েছে যানজট।
করোনা মহামারির মধ্যেও থেমে নেই ঈদের কেনাকাট। কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তীব্র রোদ-গরম উপেক্ষা করে ছোট-ছোট শিশুদের নিয়ে মার্কেট থেকে মার্কেট চষে বেড়াচ্ছেন ক্রেতারা। নিজের ও পরিবারের জন্য আগের মতোই হন্যে হয়ে খুঁজছেন পছন্দের পোশাক।
শুক্রবার রাজশাহী মহানগরীর থিম ওমর প্লাজা শপিংমল, নিউমার্কেট, আরডিএ মার্কেট, বিসিক শিল্পপল্লী, সাহেব বাজার, রাণীবাজারে থাকা নামিদামী শপিং কমপ্লেক্স ও গণকপাড়া মার্কেট এলাকা ঘুরে ঈদ বাজার নিয়ে অভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। শেষ মুহূর্তে সবখানেই ঈদ বাজার জমে উঠেছে।
আগে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে এবং শহরের প্রবেশমুখে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হতো সবাইকে। কিন্তু এখন আর কোথাও কোনো চেকপোস্ট নেই, কোনো বাধাও নেই। সবখানে আগের মতোই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সবাই সেই সুযোগে ইচ্ছেমতো কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন ২৫ এপ্রিল সব শপিংমল মার্কেট ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এভাবেই কেনাকাটা চলছে।
যতই সময় যাচ্ছে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পরছেন না। মাস্ক হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন অনেকে। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। দোকানগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উপস্থিতি প্রথম দিকে থাকলেও বর্তমানে নেই বা থাকলেও এর কোনো সঠিক ব্যবহার নেই। ক্রেতারা বলছেন, সময় শেষ। ঈদে তো কিছু কেনাকাটা করতে হবে। বাসায় ছেলে-মেয়ে আছে তাদের নতুন জামা-কাপড় না দিয়ে উপায় নেই। তাই বিপদ জেনেও সতর্ক হয়ে বের হচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন, মাস্ক পরলে তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই মাস্ক খুলে ফেলছেন।
পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মহানগরীর আরডিএ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইফুল ইসলাম বলেন, মানুষ চলাফেরায় মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মানছে না। শপিংমলে ঠেলাঠেলি করে সবাই কেনাকাটা করছে। লকডাউন কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে কোনো প্রয়োগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রশাসনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেখছি না।
জানতে চাইলে রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, মার্কেটের অবকাঠামোগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা সম্ভব হয় না। তবে ব্যবসায়ীরা সচেষ্ট আছেন। কারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবার হয়তো দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। উদাসীনতার কারণে কিছু ব্যবসায়ী হয়তো সবসময় মাস্ক পরছেন না। আমরা বিষয়গুলো তদারকি করছি। এক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ২ মে বিভিন্ন বিপণিবিতানে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সেই পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক। মার্কেটে গিয়ে করোনা প্রতিরোধে সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানান আরএমপি কমিশনার। তিনি মহানগরীর আরডিএ মার্কেট ও নিউমার্কেটসহ শহরের আরও কয়েকটি বিপণিবিতানে যান। এ সময় তিনি দোকান মালিক ও ক্রেতাদের অবশ্যই মাস্ক পরিধান এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য আহবান জানান। যাদেরে মুখে মাস্ক ছিল না, পুলিশ কমিশনার নিজ হাতে তাদের মুখে একটি করে মাস্কও পরিয়ে দেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা সরকারি নিয়ম-নীতি অনুযায়ী কাজ করছি। শপিংমল ও কাঁচাবাজারে থেমে থেমে মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু ঈদ ঘনিয়ে আসায় মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। তাই অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে বিপুল পরিমাণ মানুষের ভিড় অনেক সময়ই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না বলেও জানান এই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
সূত্র : বাংলানিউজ২৪
রাজশাহী বার্তা/admin