রাজশাহীর বাজারে নির্ধারিত সময়ের আগেই পাকা আম
আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীতে গাছ থেকে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৫ মে থেকে আম পাড়া শুরু হবে। এদিন থেকে পর্যায়ক্রমে সাত ধাপে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু পরিপক্ব আম গাছ থেকে পাড়া হবে।
রাজশাহীতে সাধারণত গুটি জাতের কিছু আম সবার আগে পাকে। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার আগামী ১৫ মে থেকে এই আমটি গাছ থেকে নামাতে পারবেন চাষিরা। আর উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রাণী পছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে থেকে এবং ক্ষীরশাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে।
এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
অথচ রোববার মহানগরীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ফলের দোকানগুলোতে কয়েকটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমগুলো ভালোভাবে পুষ্ট হয়নি।
২৮ মে ক্ষীরশাপাত ও হিমসাগর আম নামানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও এ আম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ক্ষীরশাপাত আম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। হিমসাগর কেজি প্রতি ২০০ টাকা। বৈশাখী জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকাসহ বারমাসি বিভিন্ন জাতের আম ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে।
তবে কয়েকজন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ আমগুলো সাতক্ষীরা থেকে আনা হচ্ছে। গত কয়েকদিন থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে। তারা শালবাগান বাজার থেকে পাইকারি দরে আম কিনছেন। কখনো মধ্যস্থকারীরা দিয়ে যাচ্ছেন। আর নতুন উঠতে শুরু করাই আমের দাম বেশি। জেলা প্রশাসন সময় বেঁধে দিয়েছেন সেটা তারা শুনেছেন। কিন্তু আম তো রাজশাহী জেলার না।
মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন জানান, তিনি গত তিনদিন থেকে অন্যান্য ফলের সঙ্গে বারমাসি কিছু আম বিক্রি করছেন। নতুন ফল হিসেবে ক্রেতাদের আগ্রহ ভালোই আছে। আর প্রথমে যেহেতু সরবরাহ কম, তাই দামও বেশি।
সাহেববাজার আরডিএ মার্কেটের সামনের ফল ব্যবসায়ী শাহাবুল বলেন, আমি গুটি জাতের আম ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আর বৈশাখী আম একশ টাকা কেজি।
১৫ মের আগে কীভাবে আম বিক্রি করছেন এবং এ আম কোথা থেকে পেলেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, গুটি আমগুলো মহানগরীর উপকণ্ঠ রায়পাড়া, খড়খড়ি এবং ছোট বনগ্রাম এলাকা থেকে আনা হয়েছে। আম চাষিরা এগুলো সরবরাহ করেছেন।
একই ধরনের কথা বলেছেন ওই এলাকার আম ব্যবসায়ী নাসির এবং ফান্টুসসহ অন্য আম ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এবং শালবাগানেও ফল ব্যবসায়ীদের আম বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে প্রশাসনের নির্দেশনার আগে বাজারে এই অপুষ্ট আম দেখে অনেক ক্রেতাই বিরূপ মন্তব্য করছেন।
তারা বলছেন, এতো আগে ক্ষীরশাপাত আম পাকা কি সম্ভব? গুটি কিছু আম হয়তো পাকতে পারে। আম দেখেও মনে হচ্ছে এখনো পুষ্ট হয়নি। কিন্তু পেকেও গেছে। এমন হতে পারে ফরমালিন দিয়ে আম পাকানো হয়েছে।
রোববার দুপুরে বিক্রেতার সঙ্গে সাহেববাজার এলাকায় আম নিয়ে কথা বলছিলেন ক্রেতা আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিক্রেতার কাছে আমের দাম ও জাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তবে আমগুলো অপুষ্ট, কিন্তু পাকা। তাই সন্দেহ হচ্ছে। আবার মনে হলে কিছু গুটি জাতের আম নিয়ে যায়। কিন্তু দামও খুবই চড়া। তাই আম কিনি নি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম জানান, বাজারে আমের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। খোঁজ খবর নিয়েছেন। সোমবার থেকে অভিযান চালানো হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে অপুষ্ট আম বেচাকেনা করা যাবে না। আর এগুলো ফরমালিন দিয়ে পাকানো কি না- সেটিও পরীক্ষা করা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন।
রাজশাহী বার্তা/admin