রাজশাহী নগরীতে নির্মিত হবে আরও ৫টি ফ্লাইওভার
রাজশাহী মহানগরীতে ৫টি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো নির্মাণে নকশা প্রণয়ন ও বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়নে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় রাসিক মেয়র এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন। মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেন, করোনার মহামারি মধ্যেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতেও উন্নয়ন কাজ চলছে। রাজশাহীর উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আবারো আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি আগামীতে আরো ৩/৪ হাজার কোটি টাকার দুইটি প্রকল্প অনুমোদন পাব।
মেয়র আরো বলেন, রাজশাহীকে আরো উন্নত, আধুনিক ও বসবাস উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই নগরীতে যারা বসযোগ করবেন, তারা গর্ববোধ করবেন। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী-২ ও চামড়া শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ২২টি পুকুর অধিগ্রহণ করে পার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন ৩টি প্যাকেজে ৫টি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো নির্মিত হবে। এ লক্ষ্যে নকশা প্রণয়ন ও বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়নে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে সার্ম এ্যাসোসিয়েট লিঃ, ডিজাইন প্লানিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট লিঃ (ডিপিএম) এবং ভিস্তারা আর্কিটেক্ট (প্রাঃ) লিঃ। চুক্তিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুর ইসলাম তুষার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষে যথাক্রমে সার্ম এ্যাসোসিয়েটের পরিচালক (অপারেশন) শেখ মাসুম মোঃ সালাহউদ্দিন, ডিপিএম এর পরিচালক লাইক মোঃ মুস্তাক, ভিস্তারা আর্কিটেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা খালিদ পলাশ।
চুক্তি অনুযায়ী ‘‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’’ শীর্ষক প্রকল্পর-১ প্যাকেজ নং এসডাব্লিউ ০২ লট-বি এর আওতায় ৪টি ফ্লাইওভার নির্মাণে নক্সা প্রণয়ন ও বিস্তারিত প্রকৌশল নক্সা প্রণয়ন করা হবে। ফ্লাইওভারসমূহ যথাক্রমে মহানগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৪শ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৫২১ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্ত্বর রেলওয়ে ক্রসিং এ সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৮৯৭ মিটার, প্রস্থ ১২ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ভদ্রা রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৫২০ মিটার প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ কাজের পরামর্শক সেবা কাজের প্রতিষ্ঠান সার্ম এ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং ডিপিএম ও জেম কনসালটেন্ট লিমিটেড (জেভি)।
প্রকল্প-২ এর আওতায় এসডাব্লিউ ০২ লট-সি এর আওতায় ১টি সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। মহানগরীর বর্ণালীর, বন্ধ গেইট এবং নতুন বিলসিমলা রেলওয়ে ক্রসিং পর্যন্ত সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ফ্লাইওভারটির সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ১২৫৫ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। পরামর্শক সেবা কাজের প্রতিষ্ঠান ডিপিএম এবং সার্ম এ্যাসোসিয়েট লিমিটেড ও জেম কনসালটেন্ট লিমিটেড (জেভি)। প্রকল্প-৩ এর আওতায় এসডাব্লিউ ০২ লট-ডি এর আওতায় ১৯টি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২,৬, ১০,১৩নং ওয়ার্ডে ৩তলা বিশিষ্ট ওয়ার্ড অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, ২তলা বিশিষ্ট শেখ কামাল কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, ৪তলা বিশিষ্ট সাধারণ গ্রন্থাগার, ৫তলা বিশিষ্ট বোয়ালিয়া অফিসার্স ক্লাব নির্মাণ, ৪তলা বিশিষ্ট ধর্মসভা মন্দির উন্নয়ন, ১তলা বিশিষ্ট সিটি গ্যারেজের উন্নয়ন, ২তলা বিশিষ্ট হড়গ্রাম কাঁচাবাজার, ৩লা বিশিষ্ট ভদ্রা কাঁচা বাজার, ৩তলা বিশিষ্ট শালবাগান কাঁচাবাজার, ৩তলা বিশিষ্ট নওদাপাড়া কাঁচার বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, ১০টি ফুটওভার ব্রিজ, ৩০টি যাত্রী ছাউনি, ১৫টি গণ-শৌচাগার নির্মাণ। এছাড়া নগরীর আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারী, সিটি বাইপাস রেল ক্রসিং থেকে কোর্ট স্টেশন পর্যন্ত, মোহনপুর ফ্লাওভার হতে চৌদ্দপায়া চারলেন রোড, টি-বাঁধ হতে শ্রীরামপুর হযরত শাহ মখদুম দরগা শরীফ এলাকা পর্যন্ত ল্যান্ড স্কেপিং। নতুন বিলসিমলা ও ভদ্রা ক্রসিং এ ল্যান্ড স্কেপিং নির্মাণ ও সৌন্দর্য্যবর্ধক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ১৯টি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। পরামর্শক সেবা কাজের প্রতিষ্ঠান ভিস্তারা আর্কিটেক প্রাইভেট লিমিটেড ও জেপিজেড কনসালটিং (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন। বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযিম, জেম কনস্ট্রাকশন লিঃ এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়াহিদ আজহার। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক নূর ইসলাম তুষার। পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্ট্রেশন তুলে ধরেন প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার, প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং এডভাইজার আশরাফুল হক, সচিব মশিউর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা ও পরামর্শক সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।