এলো শিশু, গেলেন বধূ হয়ে

সময়: 12:02 am - March 7, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 138 বার

বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন নাটোরের দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনের আশ্রিতা নুরজাহান বেগম। এতিম নুর জাহানের বিয়েকে ঘিরে বেসরকারী এই প্রতিষ্ঠানকে বিয়ে বাড়ির আদলে সাজানো হয়েছিল। দু’দিন ধরে চলে নুরজাহানের গায়ে হলুদের উৎসব। রীতি অনুযায়ী বর যাত্রিদের সম্মান জানানো হয়। বেশ ধুমধাম করেই বিদায় জানানো হয় নুরজাহানকে।

 

বর শহরের কান্দিভিটা এলাকার মজিবর রহান ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে মিজানুর রহমান প্রায় ২৫ জন বরযাত্রি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে হাজির হন দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনে। বর মিজানুর রহমানের বাবা-মা, ভাই-বোন, দুলাভাইসহ স্বজনরা বরযাত্রি হয়েছিলেন। বর যাত্রি ও সদনের আশ্রিত ও কর্মকতাসহ প্রায় ৩০০ অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। আমন্ত্রিত অতিথিরা জানান, দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনে এমন ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান এটি প্রথম ।

 

 

 

এই এতিম কন্যা নুরজাহানের অভিভাবক হয়ে বিদায় জানাতে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ। হাজির ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম রাব্বী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশরাফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফুন্নেসা, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম, সদন পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি ডা: আবুল কালাম, এমকে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক, জজ কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মোর্ত্তজা আলী বাবলু, সদন পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল, কোষাধ্যক্ষ মনিমুল হক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এটিএম জালাল উদ্দিন প্রমুখ। পরে এই নব দম্পত্তিকে দোয়া করেন সকলেই।

 

 

 

বিবাহ অনুষ্ঠানের আগে আয়োজন করা হয় গায়ে হলুদ ও থুবড়া (মিষ্টিমুখ) খাওয়ানো অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার থেকে সদনের আশ্রিত প্রায় ৮০ জন বালিকা এই বিয়ে অনুষ্ঠানের আনন্দে মেতে ওঠে। সদনের সকলেই সেজেছিল নতুন সাজে। তারা আনন্দ উল্লাসে কাটিয়েছে দু’দিন।

 

সদনে আশ্রিত দোলেনা, সাথী খাতুন, বিজলী রানী, জেসমিন ও সাবরিনা জানায়, তারা কখনও বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ করতে পারেনি। এমন আনন্দ উপভোগ কখনও করেনি তারা। নুরজাহান আপুর বিয়েকে ঘিরে আমারা নেচে গেয়ে আনন্দ করেছি গত দু’দিন ধরে। আমরা সকলেই নতুন করে সেজেছিলাম। বেশ আনন্দেই ছিলাম আমরা। তবে নুরজাহান আপু শশুর বাড়ি চলে যাওয়ায় খারাপ লাগছে।

 

 

 

বর মিজানুর রহমান বলেন, নুরজাহানকে বিয়ে করে আমি গর্বিত। বেশ ভাল লাগছে। আমাদের বিয়েতে সমাজের শীর্ষ পর্যায়ের মানুষ হাজির হওয়ায় বেশ ভাল লাগছে। আমরা দুজন যেন সুখে শান্তিতে থাকতে পারি সবাই সে দোয়া করবেন।

 

দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদন পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, নুরজাহান বেগম শহরের মল্লিকহাটি এলাকার মরহুম মকবুল হোসেন ও নরনাহার বেগমের মেয়ে। সে এই এতিম খানায় গত ১৪ বছর ধরে রয়েছে। এইচএসসি পাশ করার পর এতিমের কোটায় নাটোর কালেক্টরেট অফিসে চাকরি পায় সে। সদনের নিস্ব ব্যয়ে তার বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 

 

 

জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বলেন, এতিমের কোটায় কর্মসংস্থান সহ বিয়ে দিতে পেরে আমরা সকলেই আনন্দিত। এটিই হচ্ছে দিন বদলের মত একটি বিষয়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন কোন শিশুকে যেন অসহায় অবস্থায় জীবন কাটাতে না হয়। এই উদ্যোগ এতিম শিশুরা সুস্থ জীবন যাপনের নিশ্চয়তা পাবে বলে আমরা মনে করি। জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদসহ সকল পেশা ও শ্রেণীর মানুষদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এমন আয়োজন সফল হয়েছে। এমন কাজ করতে পেরে বেশ ভাল লাগছে।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর