আপত্তিকর ছবি-ভিডিও না পেলে কুৎসা রটাতেন শামীম

সময়: 12:47 pm - July 4, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 147 বার

সুন্দরী নারী দেখলেই চলে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা। তাদের নাম দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয় গল্প ও কবিতা। এরপর কৌশলে সেই নারীর সঙ্গে অনলাইনে অশ্লীল কথাবার্তা ও আপত্তিকর ছবি-ভিডিও নেয়ার চেষ্টার করা হয়। সাড়া না পেলেই ভিন্ন উপায়ে চলে তার ছবি ও বায়োডাটা সংগ্রহ। ভুয়া ই-মেইল ও ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে চলে কুৎসা রটানোর কাজ।

 

এমনই বিকৃত মানসিকতার একজনের সন্ধান পেয়েছে বগুড়ার সাইবার ক্রাইম পুলিশ টিম। নাম মির্জা শামীম হাসান সনি (৩১) নাম। বগুড়া একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত এক কর্মজীবী নারীর ছবি দিয়ে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্যপ্রচারের অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। একইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও কম্পিউটার ডিভাইস। অভিযোগ রয়েছে, একযোগে দেড় শতাধিক ই-মেইলে তিনি এই মিথ্যা তথ্যপ্রচার করেন।

 

জানা গেছে, শামীম হাসান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-এমবিএর অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি কোনো নারীকে বিয়ে নয়, তার সঙ্গে পর্নোচ্যাট, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো, মিথ্যা তথ্য ও ছবি দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার নিজের আয়ত্তে রাখতেই বেশি আনন্দ পান।

 

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে আসামিকে শনাক্ত করার পর শুক্রবার (২ জুলাই) ঢাকার হাতিরঝিল থানাধীন পশ্চিম রামপুরার একটি ভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সমস্ত অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে। পুলিশি তদন্তে তার সাইবার অপরাধ অপকর্মের বহু প্রমাণ বের করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বগুড়া সদর উপজেলার ছিলিমপুর এলাকার বাসিন্দা। তার স্থায়ী ঠিকানা বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার জোরগাছা গ্রাম। শামীমের বাবার নাম মির্জা সেলিম রেজা।’

শনিবার (৩ জুলাই) জেলা পুলিশের সাইবার ইউনিটের ইনচার্জ (পরিদর্শক) এমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারীর নাম ও ছবি ব্যবহার করে তার চরিত্র নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা তুলে ধরে স্থানীয় সাংবাদিকদের ই-মেইল করতেন শামীম। এ বিষয়ে গত ২৫ জুন বগুড়া সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘সনির কম্পিউটার সার্চ করে ডিবির সাইবার ক্রাইম দল তিন শতাধিক মেয়ের নামসহ ছবি ও ঠিকানার সন্ধান পেয়েছে। এরমধ্যে কিছু ছবি সেসব মেয়ের একেবারেই ব্যক্তিগত মুহূর্তের। তিনি মোবাইলে ফাইল ট্রান্সফারের নাম করে পরিচিত এসব নারীর ছবি তার কাছে কপি করে নেন।’

 

তদন্তে জানা যায়, ই-মেইল আক্রমণের শিকার নারীর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হচ্ছে এই শামীম হাসান সনি। গ্রেফতারের সনি জানান, ওই নারী সম্পর্কে তার সমবয়সী চাচি। তার চাচা ঢাকায় চাকরি করে এবং চাচি বগুড়ায় চাকরি করেন। সে তার চাচিকে মনে মনে পছন্দ করতেন। বিষয়টি তার চাচি জানতে পারলে সনির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ফলে সেই চাচির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করার পরিকল্পনা করেন সনি।

 

ঘটনার বর্ণনা শুনে সাইকোপ্যাথ বিশেষজ্ঞ ডা. সুপ্রিয় রায় বলেন, ‘বড়বড় অপরাধীর এ ধরনের সাইকো প্রবলেম থাকে। এই আসামিকে এখনই তার কৃতকর্মের শাস্তি দেয়া না হলে সে একই ধরনের অপকর্ম আরও করতে থাকবে। পাশাপাশি বড় ধরনের অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।’

 

মামলাটির তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ডিবির এসআই শওকত আলম বলেন, ‘সনি একজন বড় মাপের সাইবার অপরাধী। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ লাখেরও বেশি টাকা ছিল। এই টাকা থেকেই সে তথ্যপ্রযুক্তির অন্ধকার পথে খরচ করত। এখনও সেই একই অ্যাকাউন্টে সাত লাখের বেশি টাকা রয়েছে। সে আরও কত মেয়ের সঙ্গে এসব করেছে বা করার তালিকায় রেখেছে তা জানার জন্য শনিবার থেকে তাকে দুদিনের পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়েছে। বগুড়া সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর