দুর্ঘটনায় পা হারালেও জীবন যুদ্ধে হার মানেনি মোস্তফা
মানব জনম বড়ই বিচিত্র। বৈচিত্রতায় এর রীতিনীতি। কারও জন্ম রাজার রাজ প্রাসাদে সোনার চামুচ মুখে নিয়ে। পৈত্রিক সুত্রেও যা পায় তা সাত পুরুষ বসে খেলেও ফুরায় না।
আবার কারও জন্ম দুঃখীর শীর্ন কুঠিরে বুক ভরা ব্যথা নিয়ে পৈত্রিক সুত্রে পায় উপেনের ন্যায় মরিবার মত ঠাই নিয়ে। প্রিয়ার সমাধীতে তাজ মহল রচিতে, কার না, সাধ জাগে কিন্তু সাধ্য কোথায় ?
তেমনি মোস্তফারও সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নাই জন্ম থেকে কপাল পোড়া। ছোট বেলাই কিছু বুঝে উঠার আগেই পিতাকে হারিয়ে বড় অসহায় হয়ে পড়ে মোস্তফা, তাই লেখাপড়া কপালে জুটেনি তার। অন্য দশজন ছেলের মত তারও ইচ্ছা ছিল দল বেধে স্কুলে যাবে লেখাপড়া শিখবে খেলাধুলা করবে, কিন্তু বাল্যে বয়সে লেখাপড়ার বদলে পরের জমিতে কামলা খাটতে হয়েছে।
মোস্তফা আলীর (৬৫) জন্ম মৃত আব্দুল কুদ্দুস আলীর কুড়ে ঘরে, নাটোরের লালপুর উপজেলায় দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নে রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। ১ছেলে ও ১মেয়ে নিয়ে পৈতিক সুত্রে পাওয়া ২শতাং জমি ছাড়া আর কিছু নাই মোস্তফার।
দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এক পায়ে ও ক্র্যচার উপর ভর করে চালাফেরা সহ সাংসারিক কাজ-কর্ম করে। মোস্তফা জানান ৪৫বছর পূর্বে জীবিকার সনধ্যানে নওগা জেলার আত্রাই ধান কেটে বাড়ী ফেরার পথে নাটোরের লালপুরে আজিম নগর রেলষ্টেশন ট্রেন থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ডান পা কেটে যায়। চিকিৎসা বাবদ পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া যা কিছু সর্বচ শেষ করেও পা ফিরে পাইনি তাই এক পায়ের উপর ভর করে জীবনে বোঝা বয়ে বেড়াছে আজ ৪৫ বছর ধরে। অনেক চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারেনি তার ডান পা। বাড়ী ফিরে হতাশায় মা গুলুজানকে নিয়ে প্রায় অর্ধ্যহারে অনাহারে জীবিকা নিরবাহ চলে কয়েক বছর। তবুও জীবন যুদ্ধে হার মানেনি মোস্তফা।
জীবিকার তাগিদেই বেছেনিই মানুষের ক্ষেত খামারে কাজ-কর্ম, নিজের চেষ্টায় বাড়ীর অঙ্গিনায় লাগানো খেজুর গাছ শীতকালে চাচ দিয়ে রস বের করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রয় করে। মোস্তফা বলেন আমি প্রতি বছর শীতকালে মানুষের বাড়ীতে এক পায়ে ও হাতে উপর ভর করে ৪০থেকে ৫০টা করে খেজুর গাছ লাগায়ে সংসার চালিয়ে আসছে। বয়সের ভারে এখন আর বেশি কাজ করতে পারি না, তবুও বাঁচার তাগিদে এখনো লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠতে হয়। আমার ছেলে রবিউল এবং মেয়ে চাম্পাকে বিবাহ দিয়েছি এক পায়ে ও হাতের পরিশ্রম করে।
মোস্তফার সামনে এখন দূর ধুয়াশার মত সুবিশাল ছায়া পথ। শেষ জীবনে কিভাবে পাড়ি দিবে এই আধারের জীবন, তাই সে দুসচিন্তায় ও রোগে শোকে নুয়ে পড়েছে। মোস্তফা শেষ জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
দুড়দুড়িয়া উইপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, মোস্তফা একজন অসহায় ব্যাক্তি তার জীবনে পিতাকে হারিয়ে অনেক দুংখে কষ্টে কোন মতে বেচে আছেন। এখন বৃদ্ধ বয়সে খুবই অসহায় এখন তার সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়েজন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে থেকে যতদুর সাহায্য সহযোগিতা করা যায় তা আমি সাধ্য মত করব।
রাজশাহী বার্তা/admin