বগুড়ায় ক্রেতা সংকট, বিপাকে সবজি চাষি ও ব্যবসায়ীরা
প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবার প্রভাবে ধস নেমেছে উত্তরের সবজি বাজার গুলোতে। উত্তর বঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়ার বড় সবজি বাজার মহাস্থানহাটে এখন আগের তুলনায় সবজির আমদানি ও বিক্রি দুটোই কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এই হাট থেকে প্রতিদিন ২৫/৩০টি ট্রাকবোঝাই সবজি রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গেলেও সোমবার এখানে পর্যাপ্ত সবজির অভাবে কোনো ট্রাক লোড হয়নি। আর হাটে অল্পপরিমাণ যে সবিজ ছিল তারও কোনো ক্রেতা ছিল না।
এদিকে সবজি বিক্রি না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি বাজারে করোনার প্রভাব পরায় ধস নেমেছে। এই বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসত সবজি ক্রয় করতে। কিন্তু বর্তমানে করোনা আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছে না। তাই ক্রেতা সংকটে সবজির দামে ধস নেমেছে।
সোমবার সরেজমিনে মহাস্থানহাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঝারি সাইজের মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৭ টাকা হিসেবে ২৮০ টাকা মণে। এ ছাড়া প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা, মুলার মণ কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৭০ টাকা। সেই সাথে কাঁচামরিচ ও করলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০ টাকা, শসা ৫ টাকা, টমেটো ৫ থেকে ৬ টাকা, ফুলকপি ৫ টাকা, বাঁধাকপি ৪ টাকা কেজি দরে। পোটলের দাম বেড়ে হয়েছে ১১ শ টাকা মণ। অর্থাৎ প্রতিকেজি সাড়ে ২৭ টাকা। এ ছাড়া পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, বাঁধাকপি ৩/৪ টাকা পিস, গাজর ৮ টাকা কেজি, সজনে ডাঁটা ১০০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৩০ টাকা কেজি, লাল শাক ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়ার শিবগঞ্জের মুলা চাষি খবির উদ্দিন জানান, ৪ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছি। এখন বিক্রির জন্য মহাস্থানহাটে ভ্যানে করে নিয়ে এসেছি। বিক্রি করতে পারিনি। বিকেলে বিক্রি না হলে ফেরত নিয়ে যাব।
মহাস্থানে চন্ডিহারা থেকে এসেছেন সবজি চাষি মনির উদ্দিন। জানালেন বেগুন নিয়ে এসেছেন মহাস্থানের পাইকারি বাজারে। কিন্তু এসে দেখেন বেগুনের দর করছে না কেউ। মাঝে মাঝে দু-একজন ব্যবসায়ী আসলেও পানির দাম বলে চলে যাচ্ছেন। তিনি জানান, প্রতিমণ বেগুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা করে দাম হাঁকা হচ্ছে। এতে করে পরিবহন খরচও উঠবে না তার। কিন্তু তারপরেও ক্রেতা নেই। একই ভাবে শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক ফরিদ নিজের জমিতে চাষ করা ৫ মণ বেগুন বিক্রি করতে এসেছেন মহাস্থানহাটে। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রোদে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতার আশায়। কিন্তু এই চার ঘণ্টায় বিক্রি করতে পারেননি এক কেজি বেগুন।
মোকামতলা এলাকার কৃষক জাকির হোসেন বলেন, শশা জমিতে বেশি দিন রেখে নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে হাটে নিয়ে এসেছি। কিন্তু পাইকার কম থাকায় মাত্র ৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এর আগে কখনো এত কম দামে শশা বিক্রি করিনি। বেগুন, মুলা, শশার পাশাপাশি ধস নেমেছে টমেটোর বাজারেও।
মহাস্থান হাটের ইজারাদার আলহাজ আজমল হোসেন জানান, স্বাভাবিক সময়ে কাঁচাবাজারকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দুই থেকে তিন হাজার পাইকার আসত এ হাটে। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে করোনাভাইরাসের জন্য পাইকাররা না আসায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে পাইকারি বাজারে সবজির দাম একেবারে কম হলে শহরের খুচরা বাজারগুলোতে ৫-৬ গুণ বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমদানি কমের অজুহাতে তারা বেশি দামে সবজি বিক্রি করছে।
রাজশাহী বার্তা/admin