করোনা ছড়ানোর চরম ঝুঁকির মধ্যে রাজশাহী

সময়: 11:55 am - April 16, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 347 বার

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর পর প্রবাসীদের দেশে না আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়। তার আগেই বিভিন্ন দেশ থেকে যে সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশে প্রবেশ করে সেটাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরপর বন্ধ করে দেয়া হয় সব ফ্লাইট। দেশে আসা প্রবাসীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

সারা দেশের ন্যায় রাজশাহী শহর থেকে গ্রাম সবখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় প্রবাসীরা। এমন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের নিয়ন্ত্রণ ও হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসন মাঠে নামে। জরিমানা করা হয় প্রায় শতাধিক প্রবাসীর। এছাড়াও প্রবাসীদের খুঁজতে মাঠে নামে প্রশাসন। প্রবাসীদের খুঁজতে মাঠে নেমে চরম বিড়ম্বনায় পড়ে জেলা প্রশাসন। এতে এ অঞ্চলে কতজন প্রবাসী আছে তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী রাজশাহী জেলায় আসে প্রায় তিন হাজার প্রবাসী। যাদের মধ্যে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয় হাজার খানেক। বাকি প্রায় দুই হাজার প্রবাসীর হদিস করতে পারেনি প্রশাসন।

প্রবাসীদের পর এবার ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে আসা লোকজন রাজশাহীতে করোনা আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে তাদের খুজতে এবার মাঠে নেমেছে রাজশাহীর জেলা প্রশাসন। মুলত ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে রাজশাহীতে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই গার্মেন্টম কর্মী। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের শ্রমিক।

জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে রাজশাহীকে লকডাউন ঘোষণা করে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাজারী করেছেন। নগরী ও জেলার প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। তারপরও রাজশাহীতে প্রবেশ করছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন। কখনো ট্রাকে মালপত্রের সাথে, কখনো জরুরী ওষুধ সরবরাহের গাড়িতে, আবার কখনো মাছ বা মুরগির গাড়িতে। চালকদের ম্যানেজ করে এসব মানুষ ঢুকছে রাজশাহীতে। এতে রাজশাহীতে বাড়ছে ঝুঁকি। প্রশ্ন হলো নগরীর বাইরে রাজশাহীতে ঢোকার প্রবেশ পথে ২৪ ঘন্টা পুলিশ পাহারা থাকার পরও কী করে এসব মানুষ রাজশাহীতে প্রবেশ করছে।

গত রোববার পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়ীতে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে আসার পর ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। হাইয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িতে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে এসে ধরা পড়েছেন তারা। ধরা পড়া সবাই ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন। এ সময় দুই ট্রাক থেকে আরও ১১ জনকে নামানো হয়। তারাও সবাই ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন।

এই ২৪ জনের নাম-ঠিকানা, ছবি সংগ্রহ করে নিজ নিজ এলাকার থানার পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট থানার পুলিশ তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবে। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে নগরের নওদাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রাজশাহীর সিভির সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যারা রাজশাহী এসেছেন তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে যারা এসেছেন তাদের ব্যাপারে বেশী গুরত্ব দেয়া হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা না হলে এ জেলাতেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ জন্য তারা যেন পুলিশ বা স্বাস্থ্য কর্মীদের জানিয়ে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে চলে যান। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকা থেকে আগতদের প্রতিবেশীদেরও সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তাদের সম্পর্কে তথ্য দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ রাজশাহীতে ঢুকেছে। এতে রাজশাহীকে ঝুকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে তারা। এদের মধ্যে দুইদিনে দেড়শোর মত কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে। বাকিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

একই ধরনের কথা বলেছেন রামেক হাসপাতালের করোনা নির্ণয় ও চিকিৎসা টিমের প্রধান ডা. মো. আজিজুল হক আজাদ। তিনি বলেন, চিকিৎসক আজিজুল হক আজদ বলেন, রাজশাহীকে করোনামুক্ত রাখতে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরসহ যে জেলাগুলোতে ভাইরাস ছড়িয়েছে সে এলাকা থেকে যারা আসছে তাদের বাড়ি থাকা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে তাদের প্রতিবেশীদের এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে খবর দিয়ে আগতদের কোয়ারেন্টিন ও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।

রাজশাহীতে করোনা শনাক্ত তিন জনের মধ্যে দুইজন পুঠিয়া উপজেলার ও অপরজন বাগমারা উপজেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে দুই জন নারায়ণগঞ্জফেরত। অপরজন ঢাকার শ্যামলী থেকে রাজশাহীতে এসেছেন।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর