নবি-রাসুলদের দাওয়াত ও মাগফেরাতের দোয়া

সময়: 3:57 pm - May 9, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 518 বার

রোজার প্রস্তুতির ১৬ তারাবিহ আজ। পড়া হবে ১৯তম পারা। এ পারায় পড়া হবে সুরা ফুরকান (২১-৭৭), সুরা শুআরা ও সুরা নমল। আজকের তারাবিহর শুরুতেই অবিশ্বাসীরা প্রশ্ন দিয়ে শুরু হবে। তারা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে প্রশ্ন করেন কেন তাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হলো না? কেন তারা আল্লাহকে দেখতে পায় না? এ সব বিষয়ে আল্লাহ বলেন-

‘যারা আমার সাক্ষাৎ আশা করে না, তারা বলে, আমাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হলো না কেন? অথবা আমরা আমাদের পালনকর্তাকে দেখি না কেন? তারা নিজেদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে এবং গুরুতর অবাধ্যতায় মেতে উঠেছে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ২১)

সুরা ফুরক্বান : আয়াত ৭৭
সুরা ফুরকান হিজরতের আগে এমন এক সময় মক্কায় নাজিল হয় যখন আরবের অবিশ্বাসীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের ওপর সীমাহীন নির্যাতন করছিল। তারা ছিল গোমরাহী অন্ধকারে আচ্ছন্ন, অন্যায়-অনাচার, জুলুম-অত্যাচার এক কথায় যাবতীয় পাপাচারে লিপ্ত।
তারা এ কথাটি বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কুরআন নাজিল করেছেন, তাকে নবুয়ত-রেসালাত দান করেছেন। অথচ তিনি জীবনের চল্লিশটি বসন্ত আল-আমিন তথা বিশ্বাসী হিসেবেই তাদের মাঝে বেড়ে ওঠেছেন, চলেছেন।

সুরাটিতে হক্ব ও বাতিল সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে এবং সত্য ও অসত্যের মধ্যে বিশেষভাবে পার্থক্য দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই এ সুরার নামকরণ করা হয়েছে ফুরকান।

তাওহিদ, রিসালাত ও কিয়ামাত সম্পর্কিত বিস্তারিত বিষয়ের আলোচনার পাশাপাশি যার প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তকে অস্বীকার করতো, তাদের যাবতীয় সন্দেহ-সংশয়ের খণ্ডন করা হয়েছে এ সুরায়। সুরাটি মূল আলোচ্য বিষয় হলো-

যারা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিনা বাক্যে মেনে নেবে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ও তার নেয়ামত। তারা আল্লাহর কাছে পাবে উত্তম বিনিময়। আল্লাহ বলেন-
‘সেদিন জান্নাতীদের বাসস্থান হবে উত্তম এবং বিশ্রামস্থল হবে মনোরম।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ২৪)

পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ তার রাজত্ব ও ক্ষমতার ঘোষণা দেবে আর কাফের অবিশ্বাসীরা সত্য বর্জন করায় আফসোস করতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– ‘সেদিন আকাশ মেঘমালাসহ বিদীর্ণ হবে এবং সেদিন ফেরেশতাদের নামিয়ে দেয়া হবে, সেদিন সত্যিকার রাজত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর এবং কাফেরদের পক্ষে দিনটি হবে কঠিন।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ২৫-২৬)

– ‘জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দূর্ভাগ্য, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ২৭-২৮)

অবিশ্বাসীরা এ প্রশ্নও তুলে ছিল যে, সত্যিই যদি মুহাম্মাদ আল্লাহর নবি হয় তবে কুরআন এক সঙ্গে নাজিল হয়নি কেন, তা অল্প অল্প করে নাজিল হচ্ছে কেন। সে কথা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা ধীরে ধীরে কুরআন নাজিলের বিষয়টি তুলে ধরেন-
‘ সত্য প্রত্যাখানকারীরা বলে, তাঁর প্রতি সমগ্র কুরআন একদফায় অবতীর্ণ হল না কেন? আমি এমনিভাবে অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে আবৃত্তি করেছি আপনার অন্তকরণকে মজবুত করার জন্যে। আর তারা আপনার কাছে কোনো সমস্যা উপস্থাপিত করলেই আমি আপনাকে তার সঠিক জওয়াব ও সুন্দর ব্যাখ্যা দান করি।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৩২-৩৩)

আরো পড়ুন : রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া

সত্যের পথে আহ্বানে এবং অবিশ্বাসীদের সতর্ক করার জন্য প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ মর্মে অবহিত করা হয় যে, আপনি যুগে যুগে দুনিয়ায় আসা নবিদের কথা বর্ণনা করুন। তাদের ধ্বংসের বিবরণ তুলে ধরুন। আল্লাহ বলেন-
– আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তাঁর সাথে তাঁর ভ্রাতা হারুনকে সাহায্যকারী করেছি। অতপর আমি বলেছি, তোমরা সেই সম্প্রদায়ের কাছে যাও, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা অভিহিত করেছে। অতঃপর আমি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছি।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৩৫-৩৬)

– নুহের সম্প্রদায় যখন রাসুলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করল, তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানবমন্ডলীর জন্যে নিদর্শন করে দিলাম। জালেমদের জন্যে আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সুরা ফুরকান : আয়াত ৩৭)

– ‘আমি ধ্বংস করেছি আদ, সামুদ, কপবাসী এবং তাদের মধ্যবর্তী অনেক সম্প্রদায়কে। আমি প্রত্যেকের জন্যেই দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি এবং প্রত্যেককেই সম্পুর্ণরূপে ধ্বংস করেছি।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৩৮-৩৯)

অবিশ্বাসীরা নিজেদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে। প্রিয় নবিকে উপহাস করে। গর্ব করে বলতে থাকে আমরা আমাদের প্রভুদের আঁকড়ে না ধরলে সে আমাদের পথহারা করে নিতো। অথচ অবিশ্বাসীরা বুঝতে পারে না যে, তারাই পথহারা। সে কথা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন-
– ‘তারা যখন আপনাকে দেখে, তখন আপনাকে কেবল বিদ্রুপের পাত্ররূপে গ্রহণ করে, বলে, এ-ই কি সে যাকে আল্লাহ `রসূল’ করে প্রেরণ করেছেন? সে তো আমাদেরকে আমাদের উপাস্যগণের কাছ থেকে সরিয়েই দিত, যদি আমরা তাদেরকে আঁকড়ে ধরে না থাকতাম। তারা যখন শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন জানতে পারবে কে অধিক পথভ্রষ্ট।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৪১-৪২)

– ‘আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৪৩-৪৪)

আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দিতে ও তাকে খুশি রাখতে তার কুদরতের বর্ণনা এভাবে তুলে ধরেন-
– ‘(হে রাসুল!) আপনি কি আপনার পালনকর্তাকে দেখেন না! তিনি কিভাবে ছায়াকে বিলম্বিত করেন? তিনি ইচ্ছা করলে একে স্থির রাখতে পারতেন। এরপর আমি সূর্যকে করেছি এর নির্দেশক। অতঃপর আমি একে নিজের দিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনি।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৪৫-৪৬)

– তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাতকে করেছেন আবরণ, ঘুমকে করেছেন বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে। তিনিই স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে বাতাসকে সুসংবাদবাহীরূপে পাঠান। আর আমি আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্যে পানি বর্ষণ করি।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৪৭-৪৮)

– তা (বৃষ্টির পানি) দ্বারা মৃত জমিনকে সঞ্জীবিত করার জন্যে এবং আমার সৃষ্ট জীবজন্তু ও অনেক মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে (বর্ষন করি)। আর আমি তা তাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিতরণ করি, যাতে তারা স্মরণ করে। কিন্তু অধিকাংশ লোক অকৃতজ্ঞতা ছাড়া কিছুই করে না।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৪৯-৫০)

আরো পড়ুন : রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া

সুরাটিতে আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের আবস্থা ও তাদের প্রার্থনার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। কঠিন পরিস্থিতিতেও তারা থাকে দ্বীনের ওপর অবিচল ও শান্ত আর আল্লাহর কাছে দোয়া করে। আল্লাহ বলেন-
– ‘রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’ শান্তি। আর যারা রাত অতিবাহিত করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে; আর যারা (আনুগত্য চিত্তে) বলে-
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বানাসরিফ আন্না আজাবা জাহান্নামা ইন্না আজাবাহা কানা গারামা।’
অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩-৬৫)

আবার মুমিন বান্দার খরচের ধরণ গতি-প্রকৃতি বর্ণনা করেছেন মহান প্রভু। যা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যা অবিশ্বাসীদের সঙ্গে মুমিনের পার্থক্য নিরুপণে কিছু বৈশিষ্ট্য ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন-
– ‘আর তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না, (আবার) কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৭)
– ‘ আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতিত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। (পক্ষান্তরে)- যারা এ কাজ (শিরক, হত্যা, ব্যভিচার) করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৮-৬৯)
– ‘কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে তওবা করে ও সৎকর্ম করে, সে ফিরে আসার স্থান আল্লাহর দিকে ফিরে আসে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭০-৭১)
– ‘এবং যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়। আর যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না। আর যারা বলে-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইয়ুনি ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭২-৭৪)

আল্লাহ তাআলা এ সব মুমিন বান্দাকে জান্নাতে মর্যাদার আসন দান করবেন। উত্তম বাসস্থান দান করবেন। অর্ভথ্যনা জানাবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তাদেরকে তাদের সবরের প্রতিদানে জান্নাতে কক্ষ দেয়া হবে এবং তাদেরকে তথায় দোয়া ও সালাম সহকারে অভ্যর্থনা করা হবে। তথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। অবস্থানস্থল ও বাসস্থান হিসেবে তা কতই না উত্তম।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭৫-৭৬)

সুরাটির শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদের অহংকারী আচরণে তাদের ধমক দিয়ে হুশিয়ারি ঘোষণা করেন। প্রিয় নবিকে এ কথা বলে দেয়ার নির্দেশ দেন এভাবে-
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, আমার পালনকর্তা পরওয়া করেন না যদি তোমরা তাঁকে না ডাক। তোমরা মিথ্যা বলেছ। অতএব শিগগিরই নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭৭)
সুরা শুআরা : ১-২২৭
মক্কায় অবতীর্ণ সুরা শুআরা ২২৭ আয়াত সমৃদ্ধ। সুরাটিতে কবিদের সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। কবিদের সঙ্গে পয়গাম্বরদের পার্থক্যের বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। সুরাটির শুরুতেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত ও রিসালাতের প্রমাণের কথা এসেছে।

আরো পড়ুন : রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তাঁকেসহ এ সুরায় সাত জন নবির ঘটনা ও তাদের আশংকা ও দাওয়াতের বর্ণনা করেছেন আল্লাহ তাআলা। আর তারা হলেন-
– হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। (আয়াত ১০-৬৮)
আল্লাহ তাআলা তাকে ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছেন রেসালাতের ঘোষণা দেয়ার জন্য। তিনি তার কথার জড়তার জন্য এ দাওয়াতের মিশনে একা একা যেতে ভয়ের আশংকায় তার ভাই হারুনকে সাহায্যকারী করে দেন। অতপর আল্লাহর তার সঙ্গে থাকবেন বলে ঘোষণা দেন। ফেরাউনের সঙ্গে মুসা আলাইহিস সালামের অনেক কথপোকথন হয়। মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনকে নবুয়তর প্রমাণ উপস্থাপন করে তিনি তাকে জাদুকর বলে আখ্যায়িত করেন। জাদুকররা পরাভূত হন, ফেরাউনের সামনে মুস আলাইহিস সালামের নবুয়তের সত্যতায় ঈমান আনেন। বনি ইসরাঈলকে অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্তি দিতে নিরাপদে নিয়ে যান, আর ফেরাউনকে ধ্বংস করে মুসা আলাইহিস সালাম ও তার জাতিকে রক্ষার বিষয়গুলো সুরা শুয়ারার ১০-৬৮ পর্যন্ত এ বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।
ফেরাউন মুসা আলাইহিস সালামকে রেসালাতের দাওয়াত দিলে, তাকে শিশু অবস্থায় লালন পালনের বিষয়টি তুলে ধরেন। কুরআনে তা এভাবে এসেছে-
‘ফেরাউন বলল, আমরা কি তোমাকে শিশু অবস্থায় আমাদের মধ্যে লালন-পালন করিনি? এবং তুমি আমাদের মধ্যে জীবনের বহু বছর কাটিয়েছ।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৮)

– হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম (৬৯-১০৪)
সুরা শুয়ারায় হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দীর্ঘ বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ বলেন- ‘আর তাদেরকে ইবরাহিমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৬৯) এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপনে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। অনেক প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছে। আবার এ আয়াতগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু দোয়া।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার সম্প্রদায় ও পরিবারের লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন-
‘বিশ্বপালনকর্তা ব্যতিত তারা সবাই আমার শত্রু। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন। যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন। (এমনকি) যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন। যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন। আমি আশা করি তিনিই বিচারের দিনে আমার ক্রটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৭৭-৮২)

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাআলা তা এভাবে তুলে ধরেন-
– رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি হাবলি হুকমাও ওয়া আলহিক্বনি বিসসালিহিন।
‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮৩)

– وَاجْعَل لِّي لِسَانَ صِدْقٍ فِي الْآخِرِينَ
উচ্চারণ : ‘ওয়াঝআললি লিসান সিদক্বিন ফিল আখিরিন।
অর্থ : ‘এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী করুন।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮৪)

– وَاجْعَلْنِي مِن وَرَثَةِ جَنَّةِ النَّعِيمِ
উচ্চারণ : ওয়াঝআলনি মিন ওয়ারাছাতি ঝান্নাতিন নায়িম।
অর্থ : ‘এবং আমাকে নেয়ামত উদ্যানের অধিকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর।(সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮৫)

– وَاغْفِرْ لِأَبِي
উচ্চারণ : ওয়াগফিরলি আবি ইন্নাহু কানা মিনাদ দাল্লিন।
অর্থ : ‘এবং আমার পিতাকে ক্ষমা কর।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮৬)

– وَلَا تُخْزِنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ
উচ্চারণ : ওয়া লা তুখঝিনি ইয়াওমা ইয়ুবআছুন।
অর্থ : ‘এবং পূনরুত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করো না।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮৭)
কারণ-
يَوْمَ لَا يَنفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ – إِلَّا مَنْ أَتَى اللَّهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ – وَأُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ
অর্থ : ‘যে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোনো উপকারে আসবে না; কিন্তু যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে। জান্নাত আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ৮৮-৯০)

– হজরত নুহ আলাইহিস সালাম (১০৫-১৪০)
এ সুরায় নুহ আলাইহিস সালামের কাওম তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। তিনি তার জাতিকে আল্লাহর প্রতি ভয় করার ও আনুগত্য করার আহ্বান জানান। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত বার্তাবাহক। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না, আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনক র্তাই দেবেন। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১০৭-১১০)

আরো পড়ুন : রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া

নুহ আলাইহিস সালাম তার সম্প্রদায়ের আনুগত্যশীলদের সম্পর্কে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। ফলে আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন এবং অবাধ্যদের ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ বলেন-
‘ নূহ বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় তো আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে। অতএব, আমার ও তাদের মধ্যে কোনো ফয়সালা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনগণকে রক্ষা করুন। অতপর আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গিগণকে বোঝাই করা নৌকায় রক্ষা করলাম। এরপর অবশিষ্ট সবাইকে নিমজ্জত করলাম। নিশ্চয় এতে নিদর্শন আছে এবং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১১৭-১২১)

– হজরত সালেহ আলাইহিস সালাম (১৪১- ১৫৯)
পয়গাম্বর হজরত সালেহ আলাইহিস সালাম নিজ জাতিকে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেন। তার জাতিও তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে। সে ঘটনা আল্লাহ কুরআনে এভাবে তুলে ধরেন-
‘যখন তাদের ভাই সালেহ, তাদেরকে বললেন, তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত পয়গম্বর। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনক র্তাই দেবেন। তোমাদেরকে কি এ জগতের ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিরাপদে রেখে দেয়া হবে? উদ্যানসমূহের মধ্যে এবং ঝরণাসমূহের মধ্যে ? শস্যক্ষেত্রের মধ্যে এবং মঞ্জুরিত খেজুর বাগানের মধ্যে ? তোমরা পাহাড় কেটে জাঁক জমকের গৃহ নির্মাণ করছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুগত্য কর।’ ((সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৪২-১৫০)

– হজরত লুত আলাইহিস সালাম (১৬০-১৭৫)
এমনিভাবে হজরত লুত আলাইহিস সালামের জাতিও তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। তিনিও তার জাতিকে আল্লাহকে ভয় করার নসিহত করেন। আল্লাহ তাআলা সে ঘটনা কুরআনে এভাবে তুলে ধরেন-
‘যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বললেন, তোমরা কি ভয় কর না ? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত পয়গম্বর। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনক র্তা দেবেন।’ (সুরা শু’য়ারা ২৬:১৬১-৬৪)

হজরত লুত আলাইহিস সালামের জাতি তাঁর সঙ্গে অনেক বাড়াবাড়ি করে। তারা পুরুষদের সঙ্গে যৌন কর্ম স্থাপন করে। হজরত লুত আলাইহিস সালাম তাদেরকে এ মারাত্মক গোনাহ ও সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকতে বলায় তারা তাকে তাদের জনপদ থেকে বের করে দেয়া হুমকি দেয়। অতপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এক বিশেষ বৃষ্টি দিয়ে শায়েস্তা করেন। আল্লাহ বলেন-
‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়। তারা বলল, হে লুত, তুমি যদি বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাকে বহিস্কৃত করা হবে।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৬৫-১৬৭)

(হজরত) লুত বললেন, আমি তোমাদের এই কাজকে ঘৃণা করি।-
رَبِّ نَجِّنِي وَأَهْلِي مِمَّا يَعْمَلُونَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি নাঝঝিনি ওয়া আহলি মিম্মা ইয়ামালুন।’
অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে এবং আমার পরিবারবর্গকে তারা যা করে, তা থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৬৮-১৬৯)

– হজরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম (১৭৬-১৯১)
পয়গাম্বর শোয়াইব আলাইহিস সালামও তার জাতির কাছে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেন এ মর্মে যে-
‘যখন শো’আয়ব তাদের কে বললেন, তোমরা কি ভয় কর না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত পয়গম্বর। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৭৭-১৭৯)

শোয়াইব আলাইহিস সালামের জাতি লোকদের ওজনে কম দিত। তিনি তাদেরকে ওজনে কম দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করলেন। আল্লাহ বলেন-
‘মাপ পূর্ণ কর এবং যারা পরিমাপে কম দেয়, তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। সোজা দাঁড়ি-পাল্ লায় ওজন কর। মানুষকে তাদের বস্তু কম দিও না এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে ফিরো না।ভয় কর তাঁকে, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তী লোক-সম্প্রদ ায়কে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৮১-১৮৪)

এ জাতি হজরত শোয়াইব আলাইহিস সালামকে মিথ্যা সাব্যস্ত করায় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মেঘমালা দিয়ে শাস্তি দেন। আল্লাহ বলেন-
‘অতপর তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে দিল। ফলে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের আজাব পাকড়াও করল। নিশ্চয় সেটা ছিল এক মহাদিবসের আজাব। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৮৯-১৯০)

– হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (১৯২-২২৭)
উপরে উল্লেখিত সব ঘটনার উল্লেখ ছিল বিশ্বনবির জন্য অনুপ্রেরণা ও সান্ত্বনা। নবুয়ত ও রেসালতের দাওয়াতে তিনি যেন হতাশ না হন এবং ইয়াহুদি-খ্রিস্টান-অবিশ্বাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তাদের অবস্থা ও ধ্বংসের বিবরণ তুলে ধরতে পারেন। এগুলো হলো বিশ্বনবির জন্য মহান আল্লাহর তাআলা পক্ষ থেকে বিশেষ নিদর্শন।

অতপর কুরআন নাজিল প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন-
‘এই কোরআন তো বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত ফেরেশতা একে নিয়ে অবতরণ করেছে। আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন, সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়। নিশ্চয় এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে। তাদের জন্যে এটা কি নিদর্শন নয় যে, বনী-ইসরাঈলে র আলেমগণ এটা অবগত আছে? আর যদি আমি একে কোন ভিন্নভাষীর প্রতি অবতীর্ণ করতাম, অতপর তিনি তা তাদের কাছে পাঠ করতেন, তবে তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করত না। এমনিভাবে আমি গোনাহগারদের অন্তরে অবিশ্বাস সঞ্চার করেছি।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ১৯২-২০০)

মহান আল্লাহ তাআলা সুরার শেষ দিকে বিভিন্ন বর্ণনার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার ওপর ভরসা করার বিষয়ে উপদেশ দেন। আর প্রিয় নবির সব কার্যক্রম মহান আল্লাহ দেখেন। আল্লাহ বলেন-
‘আপনি ভরসা করুন পরাক্রমশালী, পরম দয়ালুর উপর, যিনি আপনাকে দেখেন যখন আপনি নামাযে দন্ডায়মান হন, এবং নামাজিদের সাথে উঠাবসা করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা শুয়ারা : আয়াত ২১৭-২২০)

সুরা নমল : ১-৯৩
সুরা নমল মক্কায় অবতীর্ণ। নমল দ্বারা আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রাণী পিপীলিকাকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা এ সুরায় পিপীলিকার কথা বর্ণনা করেছেন। তাই এ সুরার নাম হয়েছে নমল।

হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের নবুয়তের প্রমাণ বহন করে পিপীলিকার এ ঘটনা। যা বিশ্বনবির নবুয়তের প্রমাণেও গুরুত্ব সর্বাধিক। সুরা নমল-এ তাওহিদ ও নবুয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-
> পয়গাম্বরের সম্পদের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গ; > পশু-পাখীর চিন্তা-চেতনার আলোচনা; > যে জন্তু কাজে অলসতা করে তার শাস্তির বিধান; > জিন নারীর সঙ্গে মানুষের বিবাহ প্রসঙ্গ; > নারীর শাসক হওয়া প্রসঙ্গ; > চিঠি পত্রে বিসমিল্লাহ লিখার বিধান; > গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ সুন্নাত; > হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম ও রাণী বিলকিসের প্রসঙ্গ; > ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে উষ্ট্রী ঘটনার বিবরণ; > হজরত লুত আলাইহিস সালামের ঘটনার বর্ণনা।

এ সুরায় হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম পিপীলিকার কথা শুনে হাসেন। পিপীলিকার সর্দার তার বাহিনীকে গর্তে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দিলেন কুরআনে আল্লাহ তাআলা এ ঘটনা উল্লেখ করেন এবং বান্দার জন্য রহমত কামনায় হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের করা দোয়া কুরআনে সন্নিবেশিত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– ‘সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন-
رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ
উচ্চারণ : রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’
অর্থ : হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ? দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।’ (সুরা নমল : আয়াত ১৭-১৯)

এ সুরায় রানী বিলকিসের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হজরত সুলায়মান আলাইহি সালামের দরবারে আগমন করে রানী বিলকিস আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পন করেন। আর বলেন-
رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي وَأَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি জালামতু নাফসি ওয়া আসলামতু মাআ সুলাইমানা লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’
অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করলাম।’ (সুরা নমল : আয়াত ৪৪)

আল্লাহ তাআলা সুরা নমলেও হজরত সালেহ, লুত আলাইহিস সালামের জাতির পাপরাশির বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের ধ্বংসের বর্ণনাও সন্নিবেশিত হয়েছে। অবিশ্বাসীদের ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কেও রয়েছে বর্ণনা। আবার মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কেও রয়েছে আলোচনা। যা মুমিন মুসলমানের আক্বিদা বিশ্বাসের স্বচ্ছতা ও পরিপূর্ণতার জন্য মহান শিক্ষ। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে লক্ষ্য করে বলেন-
‘আপনার পালনকর্তা নিজ শাসনক্ষমতা অনুযায়ী তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। তিনি পরাক্রমশালী, সুবিজ্ঞ। অতএব, আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চয় আপনি সত্য ও স্পষ্ট পথে আছেন।’ (সুরা নমল : ৭৮-৭৯)

সর্বোপরি সব প্রসংশা ও কর্তৃত্ব মহান রবের। যিনি সব কিছু দেখেন। আল্লাহ তাআলা সুরার শেষ আয়াতগুলোতে এ কথা উল্লেখ করেন বলেন-
‘আমি তো কেবল এই নগরীর প্রভুর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি, যিনি একে সম্মানিত করেছেন। এবং সব কিছু তাঁরই। আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আজ্ঞাবহদের একজন হই। এবং যেন আমি কোরআন পাঠ করে শোনাই। পর যে ব্যক্তি সৎপথে চলে, সে নিজের কল্যাণার্থেই সৎপথে চলে এবং কেউ পথভ্রষ্ট হলে আপনি বলে দিন, আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শনকারী। এবং আরও বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। সত্বরই তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদেরকে দেখাবেন। তখন তোমরা তা চিনতে পারবে। এবং তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আপনার পালনকর্তা গাফেল নন।’ (সুরা নমল : আয়াত ৯১-৯৩)

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর