রাজশাহীর একটি স্কুলে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটিয়ে শিক্ষা অফিসারের নাচ-গান!

সময়: 7:42 pm - February 19, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 316 বার

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা। পাবনার চাটমোহর পৌর শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণে ছিল মগ্ন।

 

আর ওই বিদ্যালয়ের পাশেই উপজেলা রিসোর্স সেন্টার (ইউআরসি) ভবন থেকে সাউন্ড বক্সে উচ্চস্বরে ভেসে আসছিল নানা ধরনের আধ্যাত্মিক ও হিন্দি গান। সঙ্গে চলছির নাচা-নাচিও।

 

এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত হলেও কিছু বলার উপায় ছিল না। কারণ সেখানে নাচ-গান করছিলেন খোদ উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলামসহ সহকারী শিক্ষা অফিসারগণ।

 

এতে শামিল হন বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষকও। তবে এই প্রতিবেদককে ওই ভবনে প্রবেশ করতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় গান-বাজনা ও নাচা-নাচি।

 

জানা গেছে, বিষয়ভিত্তিক বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ের ওপর ৬ দিনের প্রশিক্ষণ চলছে সেখানে। বিষয়টি দৃষ্টিকটূ দেখালেও এভাবেই গত কয়েক মাস ধরে ইউআরসি ভবনে প্রশিক্ষণের নামে চলছে গান-বাজনা ও নাচা-নাচি। এ নিয়ে আশপাশের বাসিন্দারাও ক্ষুব্ধ। স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে ইউআরসি ভবনে শুরু হয়েছে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ। এতে অংশ নিচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে এই প্রশিক্ষণ। কিন্তু প্রশিক্ষণ চলাকালে সেখানে দলবল নিয়ে হাজির হয়ে থাকেন শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম, ফরিদুজ্জামান, আনোয়ার হোসেন এবং সহকারী ইন্সট্রাকটর কল্যাণ কুমার।

 

শুধু তারাই নয়, এতে আরও শামিল হন শিক্ষা অফিসারের পছন্দের বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক। কোনো নিয়ম-নীতি না মেনে প্রতিদিনই শুরু হয় উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সে গান। পাশাপাশি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে চলে নাচ।

 

যারা নাচ-গান করতে পারে না তাদের প্রশিক্ষণে নাম দেন না শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল ইসলাম- এমন অভিযোগ অনেকের। তাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ইন্সট্রাকটর মো. মাহমুদুল হাসানও। তিনি প্রতিবাদ করলেও শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে পেরে ওঠেন না। খোদ শিক্ষা অফিসারের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমার বাবা অসুস্থ ছিলেন। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত। ইউআরসি ভবন থেকে উচ্চস্বরে গানের আওয়াজ আসায় অসুস্থ বাবার সমস্যা হচ্ছিল। এ ছাড়া পাশের স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও পড়াশোনায় ব্যাঘাত হয়। তাই বারণ করতে গিয়ে নানা কথা শুনতে হয়েছে। যা সত্যিই দুঃখজনক। একজন শিক্ষা অফিসার হয়ে কীভাবে এমন করেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

 

শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের অসুবিধার কথা স্বীকার করে সহকারী ইন্সট্রাকটর কল্যাণ কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, ‘গান করার নিয়ম আছে। তবে নাচা-নাচি করার সুযোগ নেই।’

 

তাহলে কেন নাচা-নাচি হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা করা ঠিক হয়নি। তবে শিক্ষা অফিসার স্যার থাকেন তো। সেখানে কিছু বলা যায় না।’

 

ইন্সট্রাকটর মো. মাহমুদুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি বাইরে আছি। আপনি অফিসে আসেন। অফিসে এলে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। চা খাওয়ার দাওয়াত রইল।’

 

পরে তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘আসলে যারা এ সব করে তাদের বহুবার বারণ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ শোনেন না।’

 

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ট্রেনিংয়ের কার্যক্রম হিসেবে গান করা হয়। আর গানের তালে তো একটু নাচানাচি হয়ই। তবে ইউআরসি ভবন এবং স্কুলটি একসঙ্গে হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা হয়। তাই বলে তো আর ট্রেনিং বন্ধ করা যায় না। তবে এরপর থেকে বিষয়গুলো মেনে চলা হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান যুগান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এগুলো করা কোনো মতেই ঠিক হয়নি। বিষয়টি আমি গুরুত্বসহকারে দেখছি এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর