অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে লাখপতি
কর্মবিমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত অসংখ্য বেকারের মধ্যে চাকরি এখন সোনার হরিণ। এ অবস্থায় অনেক সাহসী যুবক বেকারত্বের বিষবাষ্প থেকে বেরিয়ে নিজেকে মুখোমুখি করেন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চ্যালেঞ্জে।
তেমনই এক স্বপ্নবাজ তরুণী উদ্যোক্তা কামরুন নাহার মিমি। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। কৃষক বাবার বড় মেয়ে মিমি। বড় ভাই না থাকায় একমাত্র আয়ের মানুষ তার বাবা।
ছোটবেলা থেকে আত্মবিশ্বাসী মিমি শুধুই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি কুমিল্লা শহরে আসেন পড়াশোনার জন্য। এসেই শুরু করেন টিউশন ও প্রাইভেট পড়ানো। টিউশনের টাকাতেই চলতো তার পড়াশোনা।
এভাবেই মিমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। হঠাৎ একদিন বাসায় পরিবারের সঙ্গে টেলিভিশন দেখছিলেন, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কথা তার কানে আসে। সেটি হলো – লেখাপড়া শেষে চাকরির পেছনে না দৌড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান। এর পরেই আসে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা।
অত:পর বন্ধুদের মাধ্যমে যুক্ত হন ‘উই’ নামক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে। কর্মজীবন শুরু করার লক্ষ্যে ২০২০ এর এপ্রিল কুমিল্লার খাদি থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবি নিয়ে শুরু করেন ই-কমার্স উদ্যোগ ‘পল্লীর হাট’।
প্রাচীনকাল থেকে এ উপমহাদেশে হস্তচালিত তাঁতশিল্প ছিল জগদ্বিখ্যাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবসময় এ তাঁতের কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হতো। এ জেলার খাদি কাপড়ের কদর আজও বিশ্বজুড়ে।
মিমি’র উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে এ চিন্তাগুলোই কাজ করছিল। শূন্য থেকে কিভাবে লাখপতি হলেন – এ বিষয়ে তিনি বলেন, সবসময় ইচ্ছা ছিল নিজের জন্য নিজেই কিছু করব। আমার বন্ধু কারিমা আক্তার রুমি আমাকে এ পথ দেখায়। সে আমাকে একটা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করায়। গ্রুপটাতে অনেক উদ্যোক্তা দেখি। আমার ধীরে ধীরে খাদি নিয়ে কাজ করার চিন্তা আসে।
মিমি বলেন, পরে আমি আমার ছোট কাকার সঙ্গে বিষয়টা শেয়ার করি। উনি আমাকে মানসিকভাবে আশ্বস্ত করেন। পরে কাকাই আমাকে তাঁতি বাড়িতে নিয়ে যান। প্রথমে আমি পাঞ্জাবি আর থ্রি-পিস নিয়ে কাজ শুরু করি। পরে শাড়ি ও বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করি। এভাবেই আমার শুরু। ই-কমার্স করার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও অফিসের দরকার নেই। সবদিক থেকেই পরে ই-কমার্স পেশা আমার স্বপ্ন থেকে সত্যিতে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তা জীবন মানেই চ্যালেঞ্জে ভরপুর, আর নারী হলে তো কথাই নেই। কিন্তু আমার বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা আমাকে পরিবার থেকে সাপোর্ট দিয়েছে। তেমন কোনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়নি। এসব ক্ষেত্রে আমি বেশি সাপোর্ট পেয়েছি আমার ছোট কাকা মো. সোহেলের কাছ থেকে। কিন্তু ঝামেলায় পড়েছি প্রোডাক্ট পাঠানো নিয়ে। লকডাউনের মাঝে প্রতি সপ্তাহে ৩/৪বার গ্রামের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলা থেকে কুমিল্লা যেতে হতো শুধু কুরিয়ার করার জন্য। কারণ আশপাশে কোনও কুরিয়ার ছিল না।
এ তরুণী উদ্যোক্তা বলেন, যেহেতু শুরু থেকে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং, কাস্টমার, ডেলিভারি সবকিছু একা ম্যানেজ করতে হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমার উদ্যোক্তা জীবন ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। মূলত আমার কাজের প্রতি আন্তরিকতা আর ভালোবাসাই এসব চ্যালেঞ্জ জয় করতে সাহায্য করেছে।
মিমি বলেন, উইমেন্ড এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) দেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম। আমরা যারা দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করি, তাদের জন্য উই ফেসবুক গ্রুপ একটা আত্মবিশ্বাসের জায়গা। এতে এসে মাত্র ৫ মাসে আমি যে নাম ও সম্মান পেয়েছি তা আমাকে আরো পাঁচ বছর এগিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকতে হতো, সেখানে উইতে অ্যাক্টিভ থেকে লাখ টাকা সেল পেয়েছি।
ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, পল্লীর হাট নিয়ে আমার একটা লক্ষ্য আছে। আমার নিজেরই একটা শো-রুম করার চিন্তা আছে। তবে সেটা আরও সময় লাগবে। মূল কথা হলো কুমিল্লার খাদি নতুন ডিজাইনে বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে চাই।
লাখপতি হওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থী কাম ব্যবসায়ী মিমি বলেন, আমি সত্যিই লাখপতি হবো এমন আশায় এটা শুরু করিনি। কিন্তু উই গ্রুপ আর আমার বন্ধুদের এবং কাকার সাহায্যে এতটুকু এসেছি। এখন পর্যন্ত দেড় লক্ষাধিক টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। উনাদের ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া যারা বেকার তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানাই।
রাজশাহী বার্তা/Durul Haque