পোশাকে শারদীয় উৎসবের ছোঁয়া

সময়: 7:02 pm - October 13, 2020 | | পঠিত হয়েছে: 439 বার
ছবি : দিশা মুনি

যতদূর চোখ যায় কেবল কাশফুল আর কাশফুল। দিনের দিগন্তজোড়া চনমনে রোদ, আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা, পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের মানচিত্র, মাঝে মাঝে বৃষ্টির বেরসিক উৎপাত- এ হল শরৎকাল। শরৎকালে প্রকৃতির এ অপরূপ মোহনীয় রূপের সঙ্গে বাতাসে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, মনে মনে উৎসবের দিন গোনা আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা বাঙালির একান্ত প্রিয় অভ্যাস। তাই এখন করোনাকালীন সময় হলেও, যতটুকু সম্ভব নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই চলছে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি। মা আসছে।

মন্দিরে মন্দিরে পড়ছে উলুধ্বনি আর ঢাকে নাচছে কাঠি। এমন সময় মনকে বেঁধে রাখা যায় না। পরিপাটি সাজপোশাকে মাকে অঞ্জলি দানেই আসবে পরিতৃপ্তি। যেহেতু দুর্গাপূজার আয়োজন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন হয়ে থাকে। অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশমী। তাই পোশাক নির্বাচনে মাথায় রাখা হয় পূজার আবহ, সকাল-রাতের পার্থক্যসহ বিভিন্ন বিষয়।

পোশাকে শারদীয় নকশা : শরতের প্রকৃতিতে কখনও দেখা যায় মেঘের খেলা আবার কখনও রোদের হাসি। গরমও একেবারে কম নয়। তাই শারদীয় পোশাকে এবারও প্রাধান্য পেয়েছে আরমদায়ক সুতি ও ভয়েল। আরও আছে সিল্ক, হাফ সিল্ক, রেয়ন, শিফন ও লিনেন ইত্যাদি। ষষ্ঠ থেকে দশমীতে যারা একেক দিন একেক ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ ছাড়াও আছে টিউনিক, শর্ট টপস, লং টপস, লেয়ার টপস, স্কার্ট, লেডিস শার্ট, পালাজ্জো, হারেম, পাঞ্জাবি, পোলো ও প্রিন্টেড টি-শার্টসহ নানা ধরনের পোশাক। প্রতি বছরের মতো এবারও পূজা ও প্রকৃতিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন থিম নিয়ে কাজ করছে ফ্যাশন হাউসগুলো। ফ্লোরাল মোটিফ, মিরর ওয়ার্ক, হ্যান্ড পেইন্ট, ব্রাশ পেইন্ট ও হালকা সুতার কাজ ইত্যাদি ভ্যালু অ্যাড ব্যবহার হয়েছে শারদীয় পোশাকের নকশায়। রঙের ক্ষেত্রে লাল-সাদা, নীলের পাশাপাশি প্রকৃতির নানা রং উঠে এসেছে পূজার শারদীয় পোশাকে।

মেয়েদের ট্রেন্ডি পোশাক : মেয়েদের শর্ট, লং ও লেয়ার টপস এবং টিউনিক এখন বেশ জনপ্রিয়। অধিকাংশই সুতি, জর্জেট ও লিনেনের ওপর তৈরি হয়েছে এ পোশাকগুলো। ট্রেন্ডি ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে ফিটিংস লং কোটিও চোখে পড়বে। ফ্রক স্টাইলে ঢিলেঢালা টপস এখন নারীদের স্মার্ট ক্যাজুয়াল পোশাক।

শাড়ি-কামিজে নতুনত্ব : পূজার শাড়িতে ঐতিহ্যবাহী গরদের সাদা জমিনে লাল পাড়ের পাশাপাশি পুরো জমিনে কাজও প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে ছিমছাম হালকা নকশা-ই এখন প্রিয়। সুতি, হাফসিল্ক, মসলিন, জামদানি, কাতান শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের ওপর হ্যান্ড পেইন্ট, ব্রাশ পেইন্ট, অ্যাম্ব্রয়ডারি, কারচুপি, হাতের কাজে শরৎ, কাশফুল, নৌকা, ফুল, পাখি, আল্পনা, দেবীর বাহন ও দেবীর গহনা মোটিফসহ পূজার বিভিন্ন থিম ব্যবহার হয়েছে। কথা হয় বিশ্ব রঙের কর্ণধার ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় হলেও আমাদের স্বাভাবিক জীবনে তো ফিরে আসতেই হবে। তাই নিরাপত্তার বিষয়টিতে সচেতন থেকেই স্বাভাবিক কাজ ও উৎসব পার্বণে অংশ নিতে হবে। পূজা নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। শোরুমগুলো পূজার আমেজে সেজে উঠেছে। তবে যেহেতু অনেকদিন সব ফ্যাশন হাউসকেই কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তাই এবার পূজার পোশাকে খুব বড়সড়ো পরিবর্তন আনার সুযোগ হয়নি। তবে নকশার সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে বেশ। যেহেতু এখন আবহাওয়াটা একটু গরমের দিকেই। তাই এ সময় আরামদায়ক হবে সুতি কিংবা নরম সিল্কের পোশাক। খুব বেশি জরি ও চুমকির কাজ বাদ দিয়ে এখন ফ্যাশনসচেতনদের নজর হালকা নকশার অ্যাম্ব্রয়ডারি, হ্যান্ড পেইন্ট ও সুতার কাজের দিকে। রাতের সাজপোশাকে একটু জমকালো লুক ভালো লাগবে। গরমে এমন লুক আনতে চাইলে ভালো হবে কাতান ও সিল্কের মতো শাইনিং পোশাক। আনারকলি ও থ্রি-লেয়ার সালোয়ার-কামিজ পরতে পারেন রাতের অনুষ্ঠানে। ভালো লাগবে।’

দিন গুনে মেয়েদের পোশাক : যেহেতু ষষ্ঠ থেকে দশমী পর্যন্ত একেকদিন একেক আমেজ বিরাজ করে। তাই পূজার ধরনের বা আমেজের সঙ্গে মিলিয়ে দিন গুনে পোশাক পরতে পারেন। এতে লুকে যেমন ভিন্নতা আসবে, তেমনি পুজোর আবহেও মিলে যাবে। পূজার প্রথম দিন ধরা হয় ষষ্ঠীতে। এদিন দেবীর বোধনে পূজা শুরু হয়। তবে দুর্গাপূজা পুরোপুরি জমে ওঠে সপ্তমী থেকে। ষষ্ঠীতে মেয়েরা শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ যে কোনোটিই পরতে পারেন। তবে এদিন বাসায় অতিথির ভিড় থাকলে তাঁতের কিংবা প্রিন্টের সুতি শাড়ি কিংবা হালকা কাজের সালোয়ার-কামিজ আরামদায়ক হবে। সপ্তমীতে মন্দিরে বা অঞ্জলি দিতে যাওয়ার সময় বা রাতে বাড়ির পুজো প্রাঙ্গণে আড্ডায় একটু হালকা ধাঁচের শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ পরুন। রাতে জমকালো পোশাকের তালিকায় রাখতে পারেন চওড়া পাড়ের একরঙা কিংবা হালকা নকশার কাতান শাড়ি। সঙ্গে সোনা, রুপা বা ইমিটেশনের হালকা গহনা। অষ্টমীতে থাকে কুমারী পুজো। এদিন সকালে লাল শাড়ি পরার প্রচলন আছে। সাজেও থাকে লালের আধিক্য। তসর, সিল্ক ও কাতান সাদার মধ্যে লাল পাড়ের এক প্যাঁচে শাড়ির সঙ্গে হাতভর্তি চুড়ি, আলতা ও লিপস্টিকে পুরোপুরি বাঙালি সাজে সাজতে পারেন এদিন। দিনের অন্যভাগে কুর্তি ও টপসসহ চাইলে ওয়েস্টার্ন লুকেও সাজা যায়। নবমীতে হয় সান্ধ্য পূজা। এদিন সবাই সন্ধ্যার পরই মন্দিরে যায়। তাই নবমীর সাজপোশাক হয় জমকালো। নবমীতে বেনারসি, কাতান, ভারী কাজের সুতি, জামদানি, কোটা ও শাড়ির সঙ্গে ভারী গহনা মানাবে। যারা সিল্ক ও মসলিন ধরনের শাড়ি পরবেন তারা একটু হালকা ধরনের গহনা বেছে নিন। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রধান আকর্ষণ দশমী। দশমীতে সনাতন ভাবধারা বিরাজ করে। দশমীতেই দুর্গা মায়ের বিসর্জন হয়। বিসর্জনের পর শুরু হয় বিজয়া। এদিন সিঁদুর খেলা হয় তাই পোশাকে থাকে লালের ছটা। সেখানে লাল পেড়ে সাদা গরদ, একদম লাল রঙা শাড়ি বা সাদা জামদানি সবচেয়ে মানানসই। শাড়িটা জরি পাড়ের হলে আরও জমকালো দেখাবে। সঙ্গে নকশা করা লাল ব্লাউজ। শুধু শাড়ি নয়, লাল-সাদার মিশেলে লেহেঙ্গা, আনারকলি বা কুর্তি স্টাইলের ড্রেসেও মন্দ লাগবে না।

প্রিয় পাঞ্জাবি : উৎসবের পাঞ্জাবিতে সবাই চায় একটু নতুনত্ব। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও পাঞ্জাবিতে সেমি লং চলছে বলে জানালেন রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার সৌমিক দাস। তিনি বলেন, ‘শুধু পাঞ্জাবি নয়, সালোয়ার-কামিজ বা অন্যান্য পোশাকেও এবার প্যাটার্ন বৈচিত্র্য খুব একটা হয়নি। অন্যান্য পোশাকের মতো পাঞ্জাবিতেও আমরা কালার এবং থিমভিত্তিক কাজ করেছি। সুতি, সিল্কের পাঞ্জাবিতে পুজোর থিমে হাতের কাজ, হ্যান্ড পেইন্ট, অ্যাম্ব্রয়ডারিসহ বিভিন্ন নকশার ব্যবহার হয়েছে। সঙ্গে উত্তরীয় ও ধুতি ভিন্নতা দিবে। গর্জিয়াস লুক চাইলে ভারী নকশার শেরওয়ানি কাট পাঞ্জাবি ও কোটি মানাবে।’

দিন গুনে পরতে পারেন ছেলেরাও : পূজার ক্ষেত্রে ধুতি-পাঞ্জাবি-উত্তরীয় পুরুষের জন্য ট্রেডিশনাল পোশাক হলেও আজকালের তরুণরা শুধু এর মধ্যে থাকতে চাইছেন না। তাই পূজার দিনগুলোয় দিন গুনে নানা ধরনের ক্যাজুয়াল পোশাকও পরতে পারেন। এক্ষেত্রে ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে সিম্পল ফতুয়া, জিন্স ও শার্ট মানাবে। অষ্টমী যেহেতু গার্জিয়াস তাই এ দিনটিতে পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে ট্রেডিশনাল লুক আনতে গায়ে রাখতে পারেন উত্তরীয়। হালকা কুয়াশা মোড়ানো ভোরে বের হলেও এ পোশাক মন্দ লাগবে না। নবমীর রাতেও পাঞ্জাবি মানাবে। তবে এ দিনটিতে পায়জামার বদলে ধুতি কিংবা প্যান্ট পরলে লুকে চেঞ্জ আসবে। দশমীতে রং খেলা হয়। এদিন সাদা-লাল পাঞ্জাবিতে বেশ জমকালো দেখায়। রাতে ফরমাল শার্ট-প্যান্ট, একরঙা পাঞ্জাবির সঙ্গে নকশাদার প্রিন্স কোট পরে বাজিমাত করতে পারেন অনায়াসে। ধুতি পরার ইচ্ছা থাকে অনেকের কিন্তু ঝামেলার কারণে পরতে চায় না। এ কারণে ফ্যাশনহাউসগুলো এখন এনেছে প্যান্ট ধুতি অর্থাৎ সেলাই করা ধুতি। এতে ধুতি বাঁধার ঝামেলা নেই। ধুতির সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন রাজকীয় নকশার পাঞ্জাবি।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর