কুড়িয়ে আনা কাঠে ক্রিকেট ব্যাট বানিয়ে বিশ্বজয়
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের পর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার চট্টগ্রামের শাহাদাত হোসেন দিপুও অন্য সবার মতোই এখন তারকা ক্রিকেটার।
কিন্তু এই দিপুর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার দৌড়টা ছিল অনেক কঠিন। নিষ্ঠুর নিয়তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।
মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারানো দিপু বড় ভাই আর মায়ের অনুপ্রেরণা, বন্ধু আর পাড়ার বড় ভাইদের নানা সহায়তা নিয়ে একটু একটু করে এগিয়েছেন।
জাতীয় দলের হয়ে নির্ভরতার ক্রিকেট ব্যাট হাতে উঠেছে তার। বিশ্বকাপ জয় করে দিপু এখন ফিরেছেন নিজ শহর চট্টগ্রামে। মাকে বুকে জড়িয়ে ঝড়িয়েছেন আনন্দের অশ্রু। সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ।
শাহাদাত হোসেন দিপুর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই গ্রামে। বাবার চাকরির সূত্র ধরে দিপুর জন্মের আগে থেকেই পুরো পরিবার বসবাস করেন চট্টগ্রামের শুলকবহরে।
বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাই আবুল হোসেনই সংসারের হাল ধরেন। দিপুর কিশোর বয়স থেকেই ছিল ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক। ব্যাট কেনার সামর্থ না থাকায় কুড়িয়ে আনা কাঠ দিয়ে ব্যাট বানিয়ে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন দিপু। ক্রিকেটের প্রতি তীব্র ঝোঁক দেখেই বড় ভাই আবুল হোসেন দিপুকে বিকেএসপিতে ভর্তি করাতে নিয়ে যান।
দিপুর বড় ভাই আবুল হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, ২০১০ সালে হাতে বানানো ব্যাট হাতে নিয়েই দিপু বিকেএসপির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলেও মাত্র দুটি ক্যাম্প করেই ছিটকে পড়েন দিপু। ক্যাম্প থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু থেমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না দিপু।
চট্টগ্রামে ফিরেই পাড়ার এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় চট্টগ্রামের ইস্পাহানি ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান দিপু। কিন্তু সেই ক্লাবে মাসিক বেতন দেয়ার সামর্থ ছিল না পরিবারের। তবে ক্রিকেটের প্রতি অদম্য ইচ্ছা আর একজন দক্ষ ক্রিকেটার হয়ে ওঠার স্বপ্নটা ক্লাব কর্তৃপক্ষও দিপুর চোখে দেখতে পেয়েছিল।
ফলে দিপুকে বিনা বেতনে একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয় ইস্পাহানি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দিপু ক্রিকেটের জগতে একে একে টপকেছেন কণ্টকাকীর্ণ পথ।
দিপুর মা ফেরদৌসি বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার ছেলে দিপুর ক্রিকেট খেলার প্রতি ঝোঁক সেই ৬/৭ বছর বয়স থেকেই। সে যখন ১০ বছর বয়সে একাডেমিতেও ক্রিকেট প্র্যাকটিস করত, আমরা তাকে ব্যাট, প্যাড কিংবা গ্লাভস কিনে দিতে পারিনি। বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে কিংবা অন্যদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে সে ক্রিকেট চর্চা চালিয়ে গেছে। আজ পরিবার ছাড়াও পুরো দেশ সেই সাফল্য পেয়েছে। আমাদের পরিবারে আজ আনন্দের বন্যা। আমার ছেলে বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দলের সদস্য।’
দিপুর ভাই আবুল হোসেন জানান, অনেক কঠিন বাধা অতিক্রম করে নিজের মেধা এবং যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে দিপু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলে স্থান পেয়েছিল। বিশ্বকাপের ছয় ম্যাচে দিপুর রান সংখ্যা ১৩১। এর মধ্যে ছিল ১১টি চার এবং এক ছক্কা। তার স্ট্রাইক রেট ৭৪। পুরো টিমের চৌকস নৈপুণ্যের কারণে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ।
রাজশাহী বার্তা/admin