উপাচার্যের বাসভবনের পর রাবির প্রশাসন ভবনে তালা

সময়: 11:54 pm - January 12, 2021 | | পঠিত হয়েছে: 237 বার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সব ধরনের নিয়োগের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। এ দাবিতে তারা রাবি উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়েছেন। তালা মেরেছেন প্রশাসন ভবনেও।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রশাসনিক ভবনের ফটকের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের মৃত্যুর কারণে আন্দোলন স্থগিত করেন। এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে তালা দেন আন্দোলনকারীরা। প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধের পর মঙ্গলবার সকালে উপাচার্যের বাসভবনের তালা খুলে দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়) নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সকল ধরনের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তবে সোমবার অফিস চলাকালে মো. জালাল নামের একজনকে সেকশন অফিসার পদে এডহক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে চাকরি প্রার্থীরা সন্ধ্যার পর থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সমবেত হতে থাকেন।

কিছুক্ষণ অবস্থানের পর সন্ধ্যা ৭টায় চাকরিপ্রত্যাশী রাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইলিয়াছ হোসেন, সাদেকুল ইসলাম স্বপন ও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে ৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার বাসভবনের ভেতরে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে একটি প্রতিনিধি দলকে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল দুপুরে উপউপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো জাকারিয়া,  কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান আল আরিফ ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানের সাথে আলোচনায় বসেন।

এ সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন- রাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইলিয়াছ হোসেন, সাদেকুল ইসলাম স্বপন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মাহফুজ আল আমিন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল। পরে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়ায় আলোচনা শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার ফারুকের মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান হস্তক্ষেপ করতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ ১১টি চিঠি দিয়েছে। উপাচার্য মন্ত্রণালয়ের এসব নির্দেশনা মেনে নিয়ে নিয়োগ স্থগিত রেখেছেন। ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ হবে, আর উপাচার্য তা মেনে নিলেও আমরা মানব না।

আন্দোলনকারীদের একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চলবে ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী। প্রায় একমাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো মানতে বাধ্য নয়। আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে মর্যাদা ফিরে পায়। উপাচার্য যদি কোনও অনৈতিক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ব্যক্তির অপরাধে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নষ্ট হতে পারে না।

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে একজন প্রতিবন্ধী ছেলেকে চাকরি দেওয়ার জন্য। যেহেতু  নিয়োগ বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আছে। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি নিয়োগ দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা এসে চাকরির দাবি করেন। আমি জানিয়েছি, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন আমি নিয়োগ দিতে পারব না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আন্দোলনরত চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়েছে। আবারও আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। বুধবার ভিসি স্যার তাদের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবেন।

রাজশাহী বার্তা/admin

এই বিভাগের আরও খবর