রাজশাহীতে ঘন কুয়াশা থাকবে আরও ৩ দিন
হাড় কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীসহ উত্তরের জনজীবন। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলে কুশায়ার ঘনত্ব বাড়ার পাশাপাশি শীতের প্রকোপও বেড়েছে। গত চার দিন ধরে রাজশাহী অঞ্চলে সূর্যের আলো প্রায়ই দেখা যায়নি। ফলে দিনের বেলায়ও আঁধারের রূপ নিচ্ছে প্রকৃতি। সন্ধ্যার আগেই ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার।
রোববার সকালে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার দিনশেষে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। আগামী বুধবার নাগাদ শীতের প্রকোপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর পর আর শীতের স্বাভাবিক গতি শ্লথ হয়ে যাবে। এবারের মতো উধাও হতে পারে শীত।
এদিকে শীতের প্রকোপ বাড়ায় ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত অসুস্থতায় হাসপাতালে ভিড় করছেন। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে দৃষ্টিসীমা ৫০ মিটারের চেয়ে কমে গেছে বলে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে আবার যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকাসহ দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চার থেকে ৫ ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে।
শনিবার দিনের শেষে ও রোববার দিনের মধ্যভাগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৩, ২৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডসহ আউটডোর ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গত সাত দিনে শীতজনিত অসুস্থতা নিয়ে রোগীরা ভিড় করছেন। এদের অর্ধেকের বেশি শিশু। বেড না পেয়ে অনেক রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতে কম্বল পেতে বিছানা করে থাকছেন। শিশু ওয়ার্ডগুলোতে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। কনকনে শীতের মধ্যে শিশুদের ওয়ার্ডগুলোতে হিটারের ব্যবস্থা না থাকায় থরথর কাঁপছে শিশুরা।
সর্দি-কাশি-জ্বর ও ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। গত শুক্রবার এখানে ৮২ শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে। শনিবার এই সংখ্যা বেড়ে ১৩৪ জন হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিলেও গত কয়েক দিনে তা বেড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন অতিক্রম করেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, কয়েক দিন থেকে বেশি ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার প্রকোপটাও বেশি। এতে হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। ঠাণ্ডাজনিত হাঁপানি, সর্দি-কাশি-জ্বর, ডায়রিয়াসহ এলার্জিজনিত সমস্যা নিয়ে রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছেন।
হাসপাতালের ১০, ২৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেড ও ফ্লোরে রোগী উপচে পড়ছে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। তিনি আরও জানান, শিশু ওয়ার্ডগুলোতে বাড়তি সচেতনতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কেননা শিশু ও বৃদ্ধরাই ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বেশি আসছেন। আর এদের বেশ কিছু লক্ষণ করোনার লক্ষণের সঙ্গে মিলছে।
গত কয়েক দিনে এই ধরনের উপসর্গযুক্ত ৭৫ জনের করোনা টেস্ট করানো হয়েছিল। কিন্তু কারও করোনা পজিটিভ আসেনি। তবে এ পর্যন্ত ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে কোনো শিশু বা বৃদ্ধ মারা যায়নি। তিনি আরও জানান, সকালে কুয়াশা পড়ছে। রোদেরও তেমন দেখা নেই। এ সময়টায় সকালে শিশুদের দেরি করে ওঠানো উচিত।
শিশুদের নিয়ে এ সময়ে ভ্রমণ না করারও পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক কর্মকর্তা। ঠাণ্ডা লাগতে পারে এমন বিষয় এড়িয়ে চলতে হবে। আর কোনো ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।